স্বাধীনতার আগে কেমন ছিল ভারত? সংবিধান প্রবর্তনের আগে এই আইনের বলেই রাজ করেছিল ব্রিটিশরা
স্বাধীনতার আগে কেমন ছিল ভারত? সংবিধান প্রবর্তনের আগে এই আইনের বলেই রাজ করেছিল ব্রিটিশরা
আর কয়েকদিন পরেই ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে পা রাখতে চলেছে ভারত। এদিকে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতে রাজ করেছিল ব্রিটিশরা। লুট করেছিল ভারতীয় সম্পদ, চালিয়েছিল ব্যাপক দমন-পীড়ন। যার দগদগে স্মৃতি আজও উজ্জ্বল ইতিহাসের পাতায়। এদিকে ভারতে ঔপনিবেশ স্থাপনের পরেই নিজেদেরে কামড় আরও জোরদার করতে একাধিক কুখ্যাত আইনেরও প্রবর্তন করেছিলেন ব্রিটিশ শাসকেরা। আজ সেগুলি নিয়েই আলোচনা করা যাক।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট, ১৭৭৩
উপমহাদেশের
সাংবিধানিক
বিকাশের
ক্ষেত্রে
ব্রিটিশদের
প্রথম
পদক্ষেপ
হিসেবে
বরাবরই
বিবেচিত
হয়
রেগুলেটিং
অ্যাক্ট,
১৭৭৩।
নামেই
বোঝা
যাচ্ছে
১৭৭৩
সালেই
প্রথম
এই
আইনের
প্রবর্তন
করেছিল
ব্রিটিশরা।
এ
আইন
অনুযায়ী
বাংলা
এবং
অন্যান্য
প্রেসিডেন্সির
শাসনভার
ও
নিয়ন্ত্রণ
প্রথমবার
একটি
কেন্দ্রীয়
কর্তৃপক্ষের
অধীনে
ন্যস্ত
হয়,
যা
'বাংলার
গভর্নর
জেনারেল
ও
ফোর্ট
উইলিয়ম
কাউন্সিল'
নামে
পরিচিত
ছিল।
১৮৫৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট
অন্যদিকে ভারতীয় ভূখন্ডে ব্রিটিশ-রাজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ভারতে প্রাদেশিক সরকারের কাঠামো তৈরির জন্য আরও একাধিক আইনের প্রবর্তন করে ব্রিটিশ সরকার। পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে আরও কয়েকটি চার্টার অ্যাক্ট এবং বেশ কিছু পার্লামেন্টারি আইন পাস করা হয় বলে জানা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পিটের ভারতশাসন আইন। ১৭৮৪ সালে প্রথম এই আইনের সূচনা হয় বলে জানা যায়। গঠিত হয় ছয় সদস্যের বোর্ড অব্ কন্ট্রোল। এই আইন বলেই ভারতের মাটিতে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির শাসন ক্ষমতা আরও দৃঢ় হয় বলে মনে করা হয়।
১৮৫৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট
অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রণোদিত একাধিক ঐতিহাসিক আইেনর মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে ১৮৫৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট। এই আইন বলেই ধীরে ধীরে ভারতীয় উপনিবেশ থেকে কমতে থাকে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা। চার্টার আইনের মাধ্যমে চা বাণিজ্য এবং চিনে বহির্বাণিজ্য ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একাধিপত্যের অবসান ঘটানো হয়। আইন বিভাগ এবং শাসন বিভাগের মধ্যে পৃথকীকরণ করা হয় এই আইন বলেই।
যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে
অন্যদিকে সকল আইনের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন। এই আইন বলেই ভারতে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে এবং ব্রিটেনের মহারানীর শাসনের সূচনা হয়। এই সময় থেকেই ভারতীয় উপনিবেশের প্রধান শাসক হয়ে ওঠেন ব্রিটিশ-রাজের প্রতিনিধি এবং সে সূত্রে তার পদবি হয় গভর্নর জেনারেল বা ভাইসরয়।
ভারতীয় পরিষদ আইন, ১৮৯২
অন্যদিকে ১৮৯২ সালে পাস হয় ভারতীয় পরিষদ আইন। এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার সংস্কার সাধন করা হয়। যদিও এর আগেই ১৮৬১ সালে কলকাতা,বোম্বাই ও মাদ্রাজে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা হয়। আংশিকভাবে প্রাদেশিক আইনসভা গুলিকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয় বলেও জানা যায়। পাশাপাশি ভারতের ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের হাতে অর্ডিন্যান্স জারির ক্ষমতা অর্পণ করা হয় মহারাণীর তরফে।
মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন
অন্যদিকে সমস্ত আইনের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্যযোগ্য ১৯০৯ সালের ভারতীয় পরিষদ আইন বা মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন। ব্রিটিশ ভারতীয় আইন ব্যবস্থার সংস্কারে এই আইনের ক্ষমতা সূদূরপ্রসারী। এই আইন বলেই কেন্দ্রে ও প্রদেশে আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়। পাশাপেশি জাত-ধর্ম সহজ কথায় সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচন প্রথার প্রবর্তন করা হয়। এই সাথে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সংস্থান করা হয় বলেও বলছে ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস।
ভারত শাসন আইন , ১৯১৯
অন্যদিকে কালের নিয়মেই ক্রমেই আলগা হতে থাকে ব্রিটিশ শাসনের ফাঁস। একের পর বিপ্লবী আন্দোলনে উত্তাল হতে থাকে গোটা দেশ। এমতাবস্থায় শাসন ব্যবস্থাকে ঘষে মেজে নিতে নতুন করে ভারত সরকার আইন বা ভারত শাসন আইন পাশ করা হয় ১৯১৯ সালে। এই আইন বলই স্বায়ত্ত শাসন মূলক প্রতিষ্ঠান গঠনের বিষয়ে প্রাদেশিক সরকারকে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়। কেন্দ্রীয় আইনসভাকে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট করা হয় বলেও জানা যাচ্ছে। দবে ভারতীয়দের দীর্ঘ আন্দোলনের পর একপ্রকার বাধ্য হয়ে শাসনকার্যে ভারতীয়দের অধিক হারে সংযুক্ত করে ব্রিটিশ সরকার।
যে ভাবে প্রশস্ত হল স্বাধীনতার পথ
পরবর্তী ১৯৩৫ সালে পুনরায় এই আইনের সংস্কার করা হয়। ১৯৩৫ সালে পুনরায় সংশোধিত ভারত শাসন আইনের বলেই পরবর্তীকালে ভারতীয় সংবিধান রচনা করা হয়। ভারতবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি করা হয় সেই সময়। যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত গঠন করা হয়। ধীরে ধীরে প্রশস্ত হয় স্বাধীনতার পর। পরবর্তীতে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিয়ে ভারতকে স্বাধীনতা দিতে ১৯৪৭ সালের জুনে পাশ হয় ভারতের স্বাধীনতা আইন।