
কংগ্রেসের শীর্ষ পদে কতবছর ছড়ি ঘুরিয়েছেন নেহরু-গান্ধী পরিবারের সদস্যরা?
'গান্ধী' এখন একটি ব্র্যান্ড নেম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাহুল গান্ধী পরবর্তী একবছর খুঁজেও কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বিকল্প কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গান্ধী পরিবার ছাড়া কাউকে সভাপতি-র পদে বসাতে নারাজ সিংহভাগ কংগ্রেস নেতা। কিন্তু রাহুল রাজি না হওয়ায় সেই সনিয়া গান্ধীর উপরেই ভরসা রাখতে হয়েছে দলকে। এদিকে গান্ধীদের এই ভাবে কংগ্রেসের ক্ষমতার রাশ ধরে থাকা মেনে নিতে পারছেন না দলেরই বহু নেতা। এই মতভেদ, বিতৃষ্ণা, অ-গান্ধীদের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের নেপথ্যে কী? আদতে গত কয়েক দশক ধরেই কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবার সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়েছে গান্ধীরা কংগ্রেসের ক্ষমতায় কয়েক দশক ধরে থাকার ফলে।

মোতিলাল নেহরুর হাত ধরে জহহরের উত্থান
নেহরু পরিবারের থেকে প্রথমবার কংগ্রেস প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন মোতিলাল নেহরু। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন মোতিলাল নেহরু। এরপর ১৯২৮ সালেও তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন কগ্রেস সভাপতি পদে। ১৯২৯ সালে প্রথমবারের জন্য লাহোর অধিবেশনে প্রথমবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে হন জওহরলাল নেহরু। এরপর ১৯৩০ সালে করাচি অধিবেশন, ১৯৩৬ সালে লখনউ অধিবেশন, ১৯৩৭ সালে ফৈজাবাদ অধিবেশনে পরপর সভাপতি হন জওহরলাল নেহরু।

নেহরুর আধিপত্ব
উল্লেখ্য, ১৯২৯ সালে কংগ্রেসের নির্বাচিত সভাপতি না হওয়া সত্ত্বেও মোতিলাল নেহরুর প্রভাবেই শেষপর্যন্ত তিনি সভাপতি হন। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ও ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব নেহরু স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে দিল্লি এবং ১৯৫২ সালে কলকাতা অধিবেশনেও তিনিই সভাপতি নির্বাচিত হন।

ইন্দিরা গান্ধী
১৯৫৯ সালে দিল্লির বিশেষ অধিবেশনে প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হন ইন্দিরা। এরপর জাতীয় কংগ্রেস ভাঙনের পর ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত কংগ্রেসের সভাপতির পদে থেকেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। জরুরি অবস্থা, পাকিস্তান যুদ্ধ, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালানোর মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। আবার তাঁর আমলেই ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ হয়েছে।

রাজীব গান্ধী
ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর আচমকাই রাজনীতিতে এসে পড়েন পুত্র রাজীব গান্ধী। ১৯৮৫ সালে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি হন তিনি। মায়ের মতোই ১৯৯১ সালে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত দলের সভাপতি ছিলেন গান্ধী পরিবার থেকে উঠে আসা আর এক প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা, শাহ বানো কেস, বোফর্স কেলেঙ্কারির মতো একাধিক বিতর্কিত বিষয় ১৯৮৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ের কারণ বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।

সনিয়া গান্ধী
১৯৯৭ সালে কংগ্রেসের সাধারণ সদস্য থেকে ১৯৯৮ সালে দলের জাতীয় সভানেত্রী হন সনিয়া গান্ধী। ১৯৯৮ সাল দীর্ঘ সাত বছর সভানেত্রী ছিলেন সনিয়া গান্ধী। তাঁর সময়েই প্রথমবার দেশে ক্ষমতায় উঠে আসে বিজেপি। যদিও ২০০৪ ও ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পরপর কংগ্রেসের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা ছিল সনিয়া গান্ধীর।

রাহুল গান্ধী
২০১৭ সালে সনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে কংগ্রেস সভাপতি পদের ভার যায় পুত্র রাহুল গান্ধীর উপর। গান্ধী পরিবারের ষষ্ঠ কংগ্রেস সভাপতি তিনি। কেন্দ্রে বিজেপি শাসনের মধ্যে ২০১৮ সালে হিন্দি বলয়ে তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের জন্য রাহুল গান্ধীকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। যদিও ২০১৯ লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর হারের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে সভাপতিত্ব ছাড়েন রাহুল গান্ধী। ফের কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রীর দায়িত্ব নেন সনিয়া।
গান্ধী পরিবারের বাইরে কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন যাঁরা, একনজরে মহান সব রাজনৈতিকদের তালিকা