
গান্ধী পরিবারের বাইরে কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন যাঁরা, একনজরে মহান সব রাজনীতিকদের তালিকা
কংগ্রেস সভাপতি পদে কী ফিরে আসবেন রাহুল গান্ধী? বা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কি সেই পদে বসতে পারেন। তবে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন প্রিয়াঙ্কা নিজেই। শুধু কাই নয়, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রাহুলের সুরে সুর মিলিয়ে জানিয়ে দিলেন, তিনি চান না যে কংগ্রেসের মাথায় কোনও গান্ধী বসুক। প্রসঙ্গত, রাহুল যখন গতবছর পদ ছেড়েছিলেন, তখন তিনি এই কথাটাই বলেছিলেন। তবে গত কয়েক দশক ধরেই কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবার সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর মাঝেই কংগ্রেস প্রধান হয়েছিলেন অ-গান্ধী রাজনীতিবিদরা।

কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা
১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয় তৎকালীন বম্বেতে। প্রথমে কিন্তু কংগ্রেস একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেনি। থিওজোফিক্যাল সোসাইটির কিছু সভ্য - অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম, দাদাভাই নওরোজি, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ একত্রিত হয়ে এর প্রতিষ্ঠা করেন কংগ্রেস।

উমেশ চন্দ্র ব্যানার্জির সভাপতিত্বে পথ চলা শুরু
১৮৮৫ সালে কংগ্রেসের পথ চলা শুরু হয় উমেশ চন্দ্র ব্যানার্জির সভাপতিত্বে। দীর্ঘ দিন ব্যারিস্টার হিসাবে কাজ করা উমেশ চন্দ্র বম্বেতে কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। এরপর একে একে কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসেছেন দাদাভাই নরোজি, বদরুদ্দিন তয়াবজি, জর্জ ইয়ুল, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বোস, রমেশ চন্দ্র দত্ত, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে, রাশবিহারী ঘোষ, মদন মোহন মালভিয়া আরও অনেকে।

অ্যানি বেসান্ত
১৯১৭ সালে প্রথমবার কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতিত্ব করে একজন নারী। অ্যানি বেসান্ত ১৯১৭ সালে কলকাতা অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন মোতিলাল নেহরু।

চিত্তরঞ্জন দাস ও সরোজিনী নাইডু
১৯২১ এবং ১৯২২ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন চিত্তরঞ্জন দাস। এরপর ১৯২৩ সালে দিল্লির কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ। পরবর্তী বছর, অর্থাৎ ১৯২৪ সালে মহাত্মা গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। আর তার পরের বছরই কংগ্রেস সভাপতি হন সরোজিনী নাইডু।

জওহরলাল নেহরু
১৯২৯ সালে লাহোর অধিবেশনে প্রথমবার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে হন জওহরলাল নেহরু। এরপর ১৯৩০ সালে করাচি অধিবেশন, ১৯৩৬ সালে লখনউ অধিবেশন, ১৯৩৭ সালে ফৈজাবাদ অধিবেশনে পরপর সভাপতি হন জওহরলাল নেহরু।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু
১৯৩৮ ও ১৯৩৯ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও ১৯৩৯-এ নির্বাচিত হয়েও পর পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। সভাপতি পদে বসেন রাজেন্দ্র প্রসাদ। এরপর ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ।

নেহরু-ইন্দিরা আধিপত্ব
স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে দিল্লি এবং ১৯৫২ সালে কলকাতা অধিবেশনেও তিনিই সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ইউএন ধেবার কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন। এরপর ১৯৫৯ সালে দিল্লির বিশেষ অধিবেশনে প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হন ইন্দিরা। এরপর জাতীয় কংগ্রেস ভাঙনের পর ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত কংগ্রেসের সভাপতির পদে থেকেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।

ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া কিছু নাম
মাঝে কংগ্রেস সভাপতির পদ সামলেছেন নীলাম সঞ্জীব রেড্ডি, কে কামরাজ, এস নিজলিঙ্গাপ্পা। ১৯৭০ ও ৭১ সালে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জগজীবন রাম। এরপর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন ডঃ শঙ্কর দয়াল শর্মা। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত দেবকান্ত বরুয়া কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন।

নরসিংহ রাও
ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর কংগ্রেস সভাপতি হয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। এবং তাঁর মৃত্যুর পর কে কংগ্রেসের হাল ধরেন সেই সময়ে গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন পি ভি নরসিংহ রাও। তিনি বসেন কংগ্রেস সভাপতির আসনে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন নরসিংহ রাও। দক্ষিণ ভারত থেকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়া পি ভি নরসিংহ রাওয়ের তত্ত্বাবধানে ভারতে উদার অর্থনীতিতে পরিণত হয়।

সর্বশেষ অ-গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি
স্বাধীন ভারতে কংগ্রেসের অন্দরে সবচেয়ে বিতর্কিত সভাপতি ছিলেন সীতারাম কেশরী। ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতির পদে ছিলেন তিনি। তাঁর সময়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মতভেদ শুরু হয়। পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের সংগঠন ভেঙে পড়ে। কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
লাদাখ সংঘাতের পারদ চড়িয়ে ভারত সীমান্তে চিনের যুদ্ধবিমান জে ২০! জল্পনা ঘিরে চিনের মিডিয়া কী বলছে