করোনার মার! এক সপ্তাহ অনাহারে থেকে মৃত্যু পাঁচ বছরের শিশুর
করোনা ভাইরাসের জেরে দেশজুড়ে লকডাউন মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যার প্রভাব সবথেকে বেশি পড়েছে সমাজের দরিদ্র সম্প্রদায়ের ওপর। সম্প্রতি আগ্রার বারাউলি আহির ব্লকের নাগলা বিধিচন্দ গ্রামের এক পাঁচ বছরের শিশু সোনিয়া ক্ষিধের তাড়নায় মারা যায়। যদিও আগ্রা প্রশাসন দাবি করছে যে ওই শিশুটির ডায়রিয়া ও জ্বরের জন্য মারা গিয়েছে, ক্ষিধের জন্য নয়। মৃত শিশুর পরিবারকে এখন থেকে ১০০ কেজি রেশন দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, অপুষ্টি বা খিদের জ্বালায় মৃত্যুর হার ভারতে সব থেকে বেশী।
একমাস খাবার পায়নি পরিবার
মৃত শিশুর মা শীলা দেবী জানিয়েছেন যে তিনি দৈনিক মজুরের কাজ করেন এবং তাঁর স্বামীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার জন্য কোনও কাজ করতে পারেন না। লকডাউনের সময় শীলা দেবী কাজে যেতে পারেননি এবং একমাস ধরে তাঁদের খাওয়ার জন্য কিছুই ছিল না। প্রতিবেশীরা ১৫ দিন পর্যন্ত সাহায্য করেছেন তারপর কমপক্ষে এক সপ্তাহ তাঁদের খাবার জোটেনি। যার জন্য ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার জ্বর চলে আসে। শীলা দেবীর কাছে খাবার বা ওষুধ কিছু কেনারই টাকা ছিল না। তিনি তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি এবং শুক্রবার শিশুটি মারা যায়।
নেই রেশন কার্ড, কেটে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ
শীলা দেবী জানিয়েছেন যে তাঁর কাছে কোনও রেশন কার্ড নেই, যার জন্য তাঁরা রেশন তুলতে পারেননি। এর মধ্যে এই পরিবারের বিদ্যুৎ বিল সাত হাজার টাকা না মেটানোর জন্য টরেন্ট পাওয়ার এসে বাড়ির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। শীলা দেবী বলেন, ‘চার বছর আগে নোটবন্দীর সময় আমার আট বছরের ছেলে না খেতে পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়।' জানা গিয়েছে, মৃত শিশুর পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি ঠিক নয়। শীলা দেবী প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন যে এই কঠিন সময়ে তাঁদের কিছু আর্থিক সহায়তা করার জন্য।
না খেতে পাওয়ায় মৃত্যুর দাবি খারিজ জেলা শাসকের
জেলা শাসক প্রভু এন সিং এই ঘটনার তদন্তের জন্য তেহসিলদার সদর প্রেমপাল সিংকে নিয়োগ করেছেন। রিপোর্টে প্রেমপাল সিং জানিয়েছেন যে শিশুটি ক্ষিধের জন্য মারা যায়নি, কিন্তু তার ডায়রেয়া ছিল। মৃত শিশুর পরিবারকে ইতিমধ্যেই ৫০ কেজি ময়দা, ৪০ কেজি চাল সহ অন্যান্য রেশন সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। পরিবারের হাতে রেশন কার্ডও তুলে দেওয়া হয়। তবে শিশুটির বাবা জানিয়েছেন যে শুক্রবার দুপুরে সোনিয়া এক বাটি দুধ খাওয়ার পরই তার ডায়রিয়া হয়। শীলা দেবী কাজ থেকে বাড়ি ফেরার আগেই তাঁর সন্তান মারা যায়। মৃত শিশুটি রক্তস্বল্পতায় ভুগছিল।
শিশু মৃত্যুর পর টনক নড়েছে প্রশাসনের
প্রভু এন সিং জানিয়েছেন যে তাদের স্বাস্থ্য দপ্তরের দল ওই গ্রামের সকল বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং মাল্টি-ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। শীলা দেবীর পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য টরেন্ট পাওয়ারকে জানানো হয়েছে। সিএসআরের মাধ্যমে শীলা দেবীর বাকি টাকা বিদ্যুৎ বিভাগকে মিটিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জানিয়েছেন যে রাজস্ব আধিকারিকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে সরকার কর্তৃক চালু দরিদ্রদের জন্য কোনও প্রকল্প এই পরিবার যোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, যদি তা হয় তবে কেন এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসাবে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি? এছাড়াও, হিন্দুস্তানি বীরাদারির ভাইস চেয়ারম্যান বিশাল শর্মা মেয়েটির মৃত্যুতে শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের, বিশেষত গ্রাম প্রধানের প্রথম-স্তরের ব্যর্থতা, যিনি সহজেই পরিবারের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করতে পারতেন এবং মেয়েটিকে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে দিতে পারতেন।