শশশশশ! ওরা আসে আঁধারে, তাই সূর্যাস্তের পর ঢুকতে মানা ভানগড়ে
রাত নামলেই ওরা আসে। তখন সেখানে জ্যান্ত মানুষের যাওয়া মানা। আপনি ভূত মানুন আর না-ই মানুন, সরকারি কর্তারা কিন্তু মানেন। তাই আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বোর্ড সতর্কবার্তা শোনায়। সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের পর অন্দরে যাওয়া মানা।
ভানগড়। রাজস্থানের আলোয়ার জেলায় অবস্থান। ছোট্ট শহর রাজগড় লাগোয়া। জয়পুর থেকে ৮০ কিলোমিটার। গাড়িতে ঘণ্টা দেড়েক লাগে। দিল্লি থেকে ২৭৫ কিলোমিটার। সারিস্কা ব্যাঘ্র প্রকল্প দেখতে গিয়ে অত্যুৎসাহীরা কেউ কেউ ঘুরে আসেন। 'ভূতের ঘর' বলে পরিচিত সারা দেশে মায় বিদেশেও। এই ভানঘরেই সূর্য ডুবলে 'অতৃপ্ত আত্মারা' ঘুরে ঘুরে বেড়ায় নির্ভয়ে, নির্বিচারে!
ভানগড়ের কাহিনী আজকের নয়। কেউ বলেন, ১৫৭৩ সালে এখানে জনপদ গড়ে তোলেন অম্বরের রাজা ভগবন্ত দাস। প্রসঙ্গত, অম্বরের রাজা ভগবন্ত দাস ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের সহযোগী। কারও মতে, ১৬১৩ সাল থেকে এখানে লোকবসতি গড়ে ওঠে। ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত গমগম করত এই শহর। তার পর শহরটি উজাড় হয়ে যায়।
কিন্তু ভানগড়ে ভূত এল কী করে?
দু'টি জনশ্রুতি আছে। প্রথমটি হল, এক তান্ত্রিকের অভিশাপ। বলা হয়, ভানগড়ে থাকতেন এক তান্ত্রিক। বাবা বলনাথ। রাজপ্রাসাদের পাশেই ছিল তাঁর আস্তানা। একবার রাজ পরিবার স্থির করে যে, রাজপ্রাসাদের উচ্চতা বাড়ানো হবে। এতে আপত্তি জানান ওই তান্ত্রিক। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, রাজপ্রাসাদের উচ্চতা বাড়লে তাঁর কুঁড়েতে সূর্যের আলো ঢুকবে না। ছায়া পড়বে। যদি সেটা হয়, তা হলে ভানগড়ে মহামারী দেখা দেবে। কিন্তু তান্ত্রিকের মত অগ্রাহ্য করে প্রাসাদের উচ্চতা বাড়ানো হয়। তার পরই অজানা রোগে হাজারে হাজারে লোক মারা যায়। ক্রমশ জনশূন্য হয়ে শহরটি। তার পর থেকে শুরু হয় ভূতের উপদ্রব।
সূর্যাস্তের পরে ঢোকা নিষিদ্ধ। কেউ ঢুকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে
দ্বিতীয় জনশ্রুতিটি হল, ব্যর্থ প্রেমের আখ্যান। ভানগড়ের রাজকুমারী রত্নাবতী ছিলেন অসামান্য সুন্দরী। তাঁকে বিয়ে করার জন্য নাকি দেশ-বিদেশ থেকে আকছার প্রস্তাব পাঠাতেন রাজা-মহারাজারা। একবার রত্নাবতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে প্রেম নিবেদন করেন এক তান্ত্রিক। তাঁর নাম ছিল সিংঘিয়া। কিন্তু জনসমক্ষে চরম অপমান করা হয় সিংঘিয়াকে। তখনই তিনি ক্ষেপে গিয়ে অভিশাপ দেন, ধ্বংস হয়ে যাবে ভানগড়। কিছুদিন পরই পার্শ্ববর্তী রাজ্য আজবগড়ের রাজা হামলা চালান ভানগড়ে। সেই রত্নাবতীকে পেতে। কিন্তু রত্নাবতী জহরব্রত পালন করে মারা যান। ক্রমশ শ্রী হারিয়ে শ্মশানের চেহারা নেয় ভানগড়। তার পর তা নিষিদ্ধ ভূখণ্ড।
দিনের বেলা ভানগড়ে যেতে অসুবিধা নেই। কিন্তু সরকারি নির্দেশে স্পষ্ট বলা আছে, ভানগড়ের সীমায় সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের পরে ঢোকা নিষিদ্ধ। কেউ না মানলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 'প্রেতাত্মার হামলা' থেকে বাঁচতেই এই নির্দেশনামা বলে দাবি প্রশাসনের।
স্থানীয় মানুষ থেকে থানা, সরকারি কর্তা, এখানে সবাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন ভূতের অস্তিত্বের কথা। ভানগড়ে খণ্ডহরের সামনে দাঁড়িয়ে ভূতের অস্তিত্ব নস্যাৎ করবে, এমন মানুষ তাই খুঁজে পাওয়া যাবে না সেখানে।