শীলা দীক্ষিত ক্ষমতা হারানোর পরে দিল্লিতে আর একটি আসনও পায়নি কংগ্রেস; তাঁর উত্তরসূরি কে?
শনিবার, ২০ জুলাই, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেত্রী শীলা দীক্ষিত। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১। টানা ১৫ বছর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকা শীলা একসময়ে রাজ্যের বড় জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন। কিন্তু নিজের সুদর্গ রাজনৈতিক কেরিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি শীলা খান ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে, আমি আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে সে বছরের বিধানসভা নির্বাচনে।
যদিও সেই বছর কংগ্রেসের হারের মধ্যে অবাক হওয়ার মতো কিছু দেখেননি অনেকেই, কিন্তু শীলার ব্যক্তিগত পরাজয়টা আশ্চর্য হয়েছিলেন অনেকেই। শীলার মতো মাতৃস্থানীয় ভাবমূর্তি দেশের খুব কম রাজনীতিবিদেরই আছে আর তাই তাঁর পরাজয়কে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি অনেকেরই, বিশেষ করে আপ-এর মতো একটি আনকোরা দলের কাছে।

২০১৩ সালে প্রবীণ শীলা পরাজিত হন নতুনের কাছে
আসলে ২০১৩ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে শীলা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। একে তো দলের ক্রমাগত অবনতি এবং আপ-এর মতো নতুন দলের বিরুদ্ধেও তাদের নেতা-মন্ত্রীদের ব্যর্থতা। তার উপরে দিল্লির নতুন ভোটারদের আপ যতটা প্রভাবিত করতে পেরেছিল সেই সময়ে, তা শীলার মতো প্রবীণ নেত্রী পারেননি। বিনা পয়সায় জল, বিদ্যুতের দাম কমানো, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আরও ভালো সরকারি পরিষেবা ইত্যাদি নানা ইস্যুতে শীলার সরকার বেশ কোনঠাসা হয়ে পড়ে সেবার। ছিল ২০১০-র কমনওয়েলথ গেমস-এর দুর্নীতি এবং ২০১২ সালের নির্ভয়া গণধর্ষণের কাণ্ডও। কেন্দ্রের কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-২ সরকারের নানাবিধ কুখ্যাতিও তাঁর কাজ কঠিন করেছিল।

শীলা অব্যহতি পাননি ভোটে হেরেও; কিন্তু কংগ্রেস আর আসন পায়নি দিল্লিতে
কিন্তু পরাজয়ের পরেও শীলার রাজনৈতিক কেরিয়ারে বিরাম পড়েনি। তাঁকে কেরালার রাজ্যপাল হতেও দেখা যায় তারপর। এমনকি, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী যখন রীতিমত বেগ দিচ্ছেন কংগ্রেসকে, তখন তারা মানুষের মনে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ফেরাতে শীলার শরণাপন্ন হয়। দেখানোর চেষ্টা করা হয় যে শীলার মতো দীর্ঘমেয়াদি মুখ্যমন্ত্রীও তারা দিতে পারে। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও শীলাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী করার কথা ভেবেছিল কংগ্রেস যদিও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। আবার এই বছরও ৮১ বছরের শীলাকে উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে শীলাকে ফের আরেকবার ভোটের ময়দানে নামে কংগ্রেস যদিও তিনি হেরে যান 3.66 লক্ষ ভোটে। ২০১৩ সালে শীলার ক্ষমতা থেকে পতনের পরে দিল্লিতে আর খাতা খুলতে পারেনি কংগ্রেস। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন, ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দিল্লিতে একটি আসন পায়নি।

শীলার উত্তরসূরি তৈরী করার কথা ভাবেইনি কংগ্রেস
আর এখানেই সম্ভবত শীলাকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারেনি কংগ্রেস। নেত্রীর বয়স বাড়লেও তাঁকেই আরও আরও দায়িত্ব দিয়েছে দল কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা এবং প্রাজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন প্রজন্মের নেতা তৈরী করতে পারেনি দল। একাশি বছর বয়সেও শীলাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে কংগ্রেস ফের আরেকবার প্রমাণ করল যে উত্তরসূরি খোঁজার প্রশ্নে সেই জওহরলাল নেহরুর আমল থেকে আজও তারা দিশেহারা।