বিজেপির পাখির চোখ গোয়া, চাপের মুখে 'বিতর্কিত' মন্তব্য প্রত্যাহার তেজস্বীর
বড়দিনে নিত্য নতুন ফাঁড়া নিয়ে নাস্তানাবুদ পদ্মশিবির। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একদিকে হরিদ্বার ধর্ম সংসদে ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে 'উস্কানিমূলক' মন্তব্য করার অভিযোগে তোলপাড় গোটা দেশ। তার উপরে ক্রিসমাসে দেশের একাধিক এলাকায় বিভিন্ন চার্চে ভাংচুরের ঘটনায় সরাসরি আঙুল উঠেছে বিজেপির মদত-পুষ্ট হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির দিকে, আর তার উপরে এবার কেন্দ্রীয় শাসক দলের অস্বস্তি বাড়াল বিজেপির যুবনেতা তথা বেঙ্গালুরুর সাংসদ তেজস্বী সূর্যের মন্তব্য।

তেজস্বীর মন্তব্যে তরজা
বিজেপির জাতীয় যুব মণ্ডল সভাপতি তেজস্বী সূর্য শনিবার উদুপির একটি মঠে বক্তৃতা দিতে উঠেছিলেন। সেখানেই তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, "ভারতে যাঁরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম বা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাঁদের সকলকে ফের হিন্দু ধর্মের আওতায় আনতে হবে।" পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন ধর্ম পরিবর্তিত হিন্দুদের পুনরায় নিজ ধরমে ফিরিয়ে আনা দেশের সব মন্দির ঈবং হিন্দু ধর্মগুরুদের প্রধান কাজ। আর তেজস্বীর এই বক্তব্যের পরেই সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা।

ক্রিসমাসে আক্রান্ত চার্চ
এমনিতেই বড়দিনে দেশের একাধিক স্থানে বিভিন্ন চার্চে ভাংচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও অসমে মোট ৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। অম্বালার ১৭৩ বছরের পুরনো একটি গির্জার প্রবেশপথের জিশুমূর্তি ভেঙে দিয়েছে হামলাকারীরা। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের পরে কর্নাটকেও পাশ করানো হয়েছে ধর্মান্তরকরণ বিল। নতুন এই আইন নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তার উপর তেজস্বীর এই বয়ানে রীতিমত ফাঁপরে বিজেপি।

গোয়া নির্বাচনে প্রভাব
সামনেই গোয়ায় হতে চলেছে বিধানসভা নির্বাচন। আর সেখানে একটি বড় অংশের মানুষ খ্রিস্টান। তেজস্বীর এই মন্তব্যে সরাসরি প্রভাব পরতে পারে সেই ভোটে, তাই এখন থেকেই প্রমাদ গুনছে বিজেপি। কারণ গতবার পাল্লা ছিল শুধু কংগ্রেসের সঙ্গে। কিন্তু এবার সেখানে কংগ্রেস ছাড়াও লড়াইয়ে রয়েছে আম আদমি পার্টি ও তৃণমূল। তাই কোনও রকম ঝুঁকি নিতে নারাজ পদ্মশিবির।

তেজস্বীর মন্তব্য প্রত্যাহার
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে লাগাতার চাপ আসছিল বলে এমনিতেই ছিল খবর। আর সেই খবর যে সত্যি তা বোঝা গেল তেজস্বীর টুইটে। সোমবার টুইটারে নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করেন তেজস্বী। তিনি লেখেন, " উদুপির শ্রীকৃষ্ণ মঠে ভারতে হিন্দুদের পুনরুত্থান নিয়ে একটি বক্তব্য রেখেছিলাম। দুঃখজনক ভাবেই সেই বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আমি আমার সমস্ত বক্তব্য নিঃশর্ত ভাবে প্রত্যাহার করে নিলাম।"
প্রসঙ্গত, মনোহর পারিক্করের প্রয়ানের পর থেকেই গোয়ায় কিছুটা হলেও ভীত আলগা হয়েছে বিজেপির, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। আর তারসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার গোয়া ক্যাম্পেন এই মুহূর্তে গলার কাঁটা পদ্ম শিবিরের। কিন্তু এরই মধ্যে বিষ ফোঁড়া তরুণ বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্যর করা মন্তব্য। যা নিয়ে রীতিমত সরগরম দেশের রাজনৈতিক তরজা। আর এর জেরে নিজেদের টার্গেট গোয়া থেকে লক্ষ চ্যুত হতে যে মোটেই রাজি নয় বিজপি তা তেজস্বীর এই বয়ান প্রত্যাহারের মধ্য দিয়েই বোঝাল কেন্দ্রের শাসক দল, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।