বিজেপি-মুক্ত ভারত গড়তে চাইছে দেশবাসী! বুমেরাং হবে না তো নিজেদের স্লোগান
২০১৪ থেকে ২০১৯- পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করে ফের বিপুলভাবে জিতে ক্ষমতা এসেছে বিজেপি। কিন্তু তিন শতাধিক আসনে জিতে ক্ষমতায় এলেও স্বস্তি নেই তাদের। একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হয়েই চলেছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংকটে, কোনও উন্নয়নমূল কাজকর্ম নেই, শুধু ধর্মের নামে দেশ চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাই কি বিজেপিমুক্ত দেশ গড়ার দিকে এগোচ্ছে দেশবাসী!

২০১৭-য় দেশের মানচিত্রে ছিল গেরুয়ার রঙের ছড়াছড়ি
২০১৪ সালে কংগ্রেসমুক্ত দেশ গড়ার স্লোগান তুলেছিল বিজেপি। সেই দিকে এগিয়েও নিয়ে যাচ্ছিল তারা। ২০১৭ সালের শেষে যে চিত্র সামনে এসেছিল, তাতে ৭০ শতাংশের বেশি রাজ্যে ছিল বিজেপির শাসন। কংগ্রেস তখন কোনওরকমে তিনটি রাজ্যে বাতি জ্বেলে রেখেছে। দেশের প্রায় গোটা মানচিত্রটাই গেরুয়া। তারপরই বদল ঘটতে শুরু করল।

২০১৮ সাল থেকেই বিজেপির স্বপ্ন ভাঙতে শুরু করে
২০১৮ সাল থেকেই বিজেপির স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে কংগ্রেস কামব্যাক করার লক্ষ্যে এগোতে শুরু করেছিল। কর্ণাটকে বিজেপিকে আটকাতে জেডিএসকে সমর্থন দিয়েই কংগ্রেসের বিজয়যাত্রা শুরু হয়েছে তার আগেও অবশ্য ২০১৫ সালে বিহার বিধানসভায় কংগ্রেসের মহাজোট বিজেপিকে ভোটে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল।

বিহার ও কর্ণাটকের গল্প একটু আলাদাই
কিন্তু ২০১৭ সালে সেই জোট ভেঙে জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে হাত মেলায়। ফলে বিহার হয়ে যায় গেরুয়া। কর্ণাটকও এই ২০১৯-এ গেরুয়া হয়েছে। কর্ণাটকেও ভোটের পর বিজেপি নীতির বালাই না রেখে সরকার গড়েছিল। সেই সরকার ফেলে কংগ্রেস-জেডিএস জোট ক্ষমতায় আসে। তাদেরকে অপসারিত করে কর্ণাটকে এখন গেরুয়ারাজ।

মাত্র দেড় বছরে বিজেপি নেমে গিয়েছে ৩৫ শতাংশে
তারপরও মোদী-শাহের কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়তে পারলেন না। উল্টে বিজেপি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। কমতে কমতে ৭০ শতাংশ থেকে মাত্র দেড় বছরে বিজেপি নেমে গিয়েছে ৩৫ শতাংশে। অর্থাৎ দেশের ৩৫ শতাংশে শুধু বিজেপির শাসন। বাকি ৬৫ শতাংশে হয় কংগ্রেস নতুবা অ-বিজেপি সরকার। অর্থাৎ কংগ্রেসমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্নভঙ্গ তো হয়েইছে, বিজেপি ক্রমশ সংখ্যালঘু হতে শুরু করেছে।

বছর শেষের সপ্তাহকাল আগেই গেরুয়া রঙ আরও ফিকে
বছর শেষের সপ্তাহকাল আগেই ফের ধাক্কা বিজেপি শিবিরে। আরও একটি রাজ্যের ক্ষমতা হাতছাড়া হল বিজেপির। বিজেপিকে হারিয়ে ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় এল কংগ্রেস-জেএমএম-আরজেডি জোট। বছরের শেষে ভারতের মানচিত্রে আরও ফিকে হল গেরুয়া রঙ। গেরুয়া মুছে ভারতের মানচিত্রে এখন নানা রঙের সমাহার।

২০১৯-এর শেষে কংগ্রেস-বিজেপি প্রায় সমান সমান
২০১৯-এর শেষে রাজ্যওয়াড়ি বিচারে কংগ্রেস-বিজেপি প্রায় সমান সমান। বাকি অংশে আঞ্চলিক দলের দাপাদাপি। সেই হিসেবে তিনভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে ভারত। ১৯-শের লোকসভায় বিপুলভাবে জিতেও বিজেপির রাজ্যওয়াড়ি ফল কেন তলানিতে পৌঁছে গেল তা দেখা দরকার মোদী-শাহদের।

২০২০-এর শেষে বিজেপি পরিস্থিতি আরও করুণ হবে!
তা না হলে ২০২০-এর শেষে বিজেপি পরিস্থিতি আরও করুণ হতে পারে। কেননা ২০২০-তো বিহার ও দিল্লির ভোট রয়েছে। তারপর কর্ণাটক, গোয়া, মনিপুর, যেভাবে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি, তা যে কোনও মুহূর্তে অন্য দিকে ঢলে পড়তে পারে। ঝাড়খণ্ড নির্বাচন জেতার পর কংগ্রেসও আশাবাদী। লোকসভায় হারের পর কংগ্রেসও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে, বুঝিয়ে দিতে পেরেছে বিজেপি অপ্রতিরোধ্য নয়।

লোকসভার আগে-পরে ৮ রাজ্যের ফলে অশনি সংকেত
সম্প্রতি লোকসভার আগে ও পরে মোট আটটি রাজ্যে নির্বাচন হয়েছিল। তার মধ্যে বিজেপি কোনওরকমে একটি রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাদের হাতছাড়া হয়েছে পাঁচটি রাজ্য। বিজেপির হাতছাড়া হওয়া পাঁচ রাজ্য অর্থাৎ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় সরাসরি কংগ্রেস কেড়ে নিয়েছে বিজেপির হাত থেকে। আর মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ড কংগ্রেস দখল করেছে আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে জোট করে। হরিয়ানায় বিজেপি ক্ষমতা দখল করেছে বিরোধী শিবিরের একাংশের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে। আর দুটি রাজ্য- তেলেঙ্গানা ও ওড়িশায় আঞ্চলিক দলের আধিপত্যই বজায় রয়েছে।