কৃষিই অগ্রগতির ভিত্তি, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় অভিনব ভাবনা
Array
বাংলা কৃষি প্রধান রাজ্য। বাংলার সামগ্রিক প্রগতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কৃষির উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। কৃষির উন্নয়ন মানে সমাজ, দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন। সেই ভাবনাকেই এবার লক্ষ্মী পুজোর থিম হিসাবে তুলে ধরেছে গ্রামীণ হাওড়ার বাগনান-১ ব্লকের জোকা গ্রামের জোকা সৃষ্টি ক্লাব।
খালনা 'লক্ষ্মীগ্রাম'
হাওড়া জেলার খালনা 'লক্ষ্মীগ্রাম' হিসাবে বাংলার বুকে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সমানে সমানে পাল্লা দিচ্ছে বাগনানের দামোদর লাগোয়া জোকা গ্রাম। বেশ কয়েক বছর ধরে জোকা গ্রামে অত্যন্ত জাঁকজমক সহকারে লক্ষ্মীপুজো অনুষ্ঠিত হয়। জোকা গ্রামের বিগ বাজেটের লক্ষ্মীপুজোগুলোর মধ্যে সৃষ্টি ক্লাবের পুজো অন্যতম। এবার ১১ তম বর্ষে তাদের ভাবনা 'কৃষি উন্নয়ন, সার্বিক উন্নয়ন'।
গ্রাম্য সংস্কৃতি
গ্রাম্য সংস্কৃতির মধ্যে এই ভাবনাকে শিল্পীরা তাঁদের শৈল্পিক ভাবনায় তুলে ধরছেন। আর্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের তুলির টানে সেজে উঠছে মন্ডপ। মন্ডপসজ্জায় খড়, কাপড়ের মতো বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মলয় গুছাইতের কথায়, জোকা গ্রাম কৃষিপ্রধান গ্রাম। বহুদিন থেকে এখানকার মানুষ কৃষির উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু নতুন প্রজন্ম বিভিন্ন কারণে ক্রমশ কৃষি থেকে বিমুখ। কৃষি আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি।
এই বিষয়টাকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই আমাদের এবারের এই থিম। তিনি জানান, এবার পুজোর বাজেট প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। মন্ডপের পাশাপাশি প্রতিমাতেও এবারের ভাবনার প্রতিফলন ঘটবে। স্থানীয় শিল্পী বুবাই দেঁড়ে ও আর্ট কলেজের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী এবার মন্ডপসজ্জায় রয়েছেন।
আমতা দুই নম্বর ব্লক
হাওড়া জেলার আমতা দুই নম্বর ব্লকের খালনা গ্রাম পঞ্চায়েতের রায়, মল্লিক, রীত, দত্ত বাড়ি ও বিভিন্ন ক্লাব, সমিতি, সংঘে লক্ষী পুজোর প্রস্তুতি চলছে। খালনা নদী মাতৃক হওয়ায় দামোদর নদী, রূপনারায়ণ নদী, মুণ্ডেশ্বরী নদী, হুড়হুড়িয়া খাল, বেগুনেঘাটা দহ , সর্টকাট চ্যানেল দিয়ে ঘেরা পূর্বে ও এখন ।
তখন নদ , নদী দিয়ে ব্যবসা বানিজ্য করতো এলাকার মানুষ জন। সেই থেকে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর চল চলে আসছে। গৃহে গৃহে ও বারোয়ারী পুজো, সর্বজনীন পুজো, ক্লাব , সমিতি, সংঘে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান, খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মেলা ও হাজারো বিকিকিনির সম্ভার নিয়ে ডালি পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা। কয়েক মাস ধরে নিজেরাই নিজেদের মতো করে লক্ষ্মী ঠাকুর, মণ্ডপ, আলোক সজ্জায় ভরিয়ে তোলে। গত কয়েক বছর করোনার কারনে জয়পুর থানার লক্ষ্মী গ্রাম খালনায় লক্ষ্মী পুজোয় কিছুটা হলেও ছাপ পড়েছে।
বাড়িতেও লক্ষ্মী পুজো
ছোট ,বড়, মাঝারি, বিগ বাজেটের মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ থেকে সত্তরটি ও বিভিন্ন বাড়িতেও লক্ষ্মী পুজো অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান খালনার প্রাক্তন প্রধান গৌতম চক্রবর্তী। আজকে খালনা এলাকায় লক্ষ্মীপূজার প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে দেখা গেল এলাকায় এলাকায় প্রস্তুতি চলছে কোথাও মণ্ডপ তো আবার কোথাও কোথাও মণ্ডপ ও লক্ষ্মী প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে।
তারাই শৈল্পিক ভাবনায় মন্ডপ সাজিয়ে তুলছেন। পুজোর পাশাপাশি থাকছে বস্ত্র বিতরণ, গুণীজন সংবর্ধনা সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিজয়া দশমী হয়ে যাওয়া মানেই লক্ষ্মীপুজোর প্রহরগোনা শুরু। আর তারই শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে জোকা গ্রামের সৃষ্টি ক্লাব প্রাঙ্গণে।