মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসাবে জো বাইডেন ভারতকে কতটা কাছে টেনে নেবেন? কী বলছে ইতিহাস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে তিনি আমেরিকার সর্বোচ্চ আসনে বসতে চলেছেন। শনিবার ফলাফল ঘোষণার পর জানা গিয়েছে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের যে ম্যাজিক ফিগার, তা খুব সহজেই পার করে গিয়েছেন বাইডেন। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন আমজনতার মধ্যে এবং রাজনৈতিক মহলে উঠেছে করেছে যে বাইডেনের জেতা ভারতের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে?
বিশেষ করে ভারতীয়রা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে উৎসুক। এক্ষেত্রে বাইডেনের পুরনো কিছু পদক্ষেপ এবং মন্তব্যকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যা থেকে কিছুটা অনুমান করা সম্ভব যে আগামিদিনে ভারতের প্রতি তাঁর কেমন মনোভাব থাকবে।
এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে বারাক ওবামা যে আট বছর দায়িত্ব সামলেছেন, সেই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব সামলান বাইডেন। ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন। প্রথমেই তিনি মার্কিন সেনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এবং পরে দেশের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও ভালো করার ক্ষেত্রে জোর দেন।
২০০৬ সালে উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার তিন বছর আগে বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে। যেখানে তিনি বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কাছের দুটি দেশ হবে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
প্রথমে বারাক ওবামাও ভারত মার্কিন পরমাণু চুক্তি নিয়ে এগোতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তবে জো বাইডেন দায়িত্ব নিয়েই পরমাণু চুক্তি সম্পাদন করেন ২০০৮ সালে।
জো বাইডেন উপরাষ্ট্রপতি থাকাকালীন প্রথমবার বারাক ওবামার সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানায়। বাইডেন উপরাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সঙ্গী হয় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও বাইডেন সবসময় সরব থেকেছেন এবং সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ে ভারতের প্রতি তিনি বরাবর সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। নিজের প্রচারপত্রে একথা তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনওভাবেই নমনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত নয়। অন্যদিকে চিনের সম্পর্কেও রিপাবলিকান দলের তরফে যেভাবে সরব হয়েছেন ট্রাম্পের নেতৃত্বে অনেকে, ঠিক সেভাবেই মনে করা হচ্ছে জো বাইডেনের নেতৃত্বে ডেমোক্র্যাটরা একইভাবে সরব হবেন। এবং ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে চিনের প্রতি একই মনোভাব পোষণ করবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতি নিয়ে প্রচণ্ড কড়া মনোভাব গ্রহণ করেছিল। তবে ডেমোক্রেটরা অনেক বেশি সহনশীল এবং উদার। ফলে ভারতীয়দের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পড়াশোনা, চাকরি অথবা বসবাসের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন অত বেশি কড়াকড়ি করবে না বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে গত চার বছরে ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে অভিবাসন নিয়ে কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছিল, ঠিক তার বিপরীত পথে হেঁটে বাইডেন প্রশাসন কীভাবে গোটা পরিস্থিতি সামাল দেয় সেটা অবশ্যই দেখার বিষয়।