আজও দেশবাসীর মনের মণিকোঠায় প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের স্থান, স্বাধীনতার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি
প্রতিবছর ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন দেশবাসী। চলতি বছরে ৭৫ বছরে পূর্তি উপলক্ষে আজাদি কা মহোৎসব উদযাপন করবেন ভারতবাসী। এই দিনে দেশের জন্য যেসব বীর মহান নেতা তাঁদের রক্ত ঝরিয়েছেন, তাঁদেরকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। এমন অনেক মহান বিপ্লবী রয়েছেন। যাদের কথা হয়তো আমরা অনেকেরই অজানা। তার মধ্যে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় একজন। তিনি ভারতীয় রসায়নের জনক। দেশের প্রতি তাঁর অবদন কিন্তু কম নয়। জেনে নিন তিনি কে।
কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
১৮৬১ সালের ২ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন একজন ইতিহাসবিদ, সমাজসেবী এবং রসায়নবিদ। রারুলি কাটিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম হরিশচন্দ্র রায় চৌধুরী। তিনি একজন জমিদার ছিলেন এবং মা ছিলেন মাতা ভুবন মোহিনী। স্থানীয় তালুকদারের কন্যা ছিলেন তিনি। তারা সাত ভাই বোন ছিলেন। তার মধ্যে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন তৃতীয়জন। তাঁর পিতামহ ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে একজন দেওয়ান। তিনি কিন্তু খুব মহান এবং শিক্ষিত একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছিলেন কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজ থেকে। তারপর ফারসি, ইংরেজি এবং সংস্কৃত ভাষায় জ্ঞান অর্জন করেছিলেন ।
বাংলা ছাড়াও অন্যান্য ভাষা কীভাবে শিখেছিলেন
জানা গিয়েছে তিনি যখন ক্লাস ফোরে পড়তেন অর্থাৎ চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি একবার আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর তার স্কুল বন্ধ করে তাকে বাড়িতেই রাখা হয়েছিল। সেই সময় সত্যজিৎ যে তাকে একটি সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছিল। তিনি তাকে ইংরেজি, গ্রীক, সংস্কৃত বা অন্যান্য ভাষায় অধ্যয়ন করাতে শুরু করেন। সত্যজিৎ বিদ্যাসাগর কলেজ তৎকালীন মেট্রোপলিটন প্রতিষ্ঠান যেখানে ফাস্ট অনার্সের ছাত্র হয়েছিলেন তিনি। সে সময় তিনি রসায়নে এমএ তে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেছিলেন তবে সেই কলেজে বিজ্ঞানের সমস্ত বিষয় পাঠদানের সুযোগ না থাকা সত্যজিৎ প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করার সুবিধা করে দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকে প্রফুল্ল চন্দ্র রসায়নের বিষয়ে পড়াশোনা করতে খুব আগ্রহী হয় উঠতে শুরু করেন এবং সেই বিষয়কে নিয়েই তিনি তার কেরিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। যখন তিনি বিয়ে পরীক্ষার জন্য বা সত্যজিৎ তার ব্যবস্থা করে সে সময় প্রফুল্ল চন্দ্র গিলক্রিস্ট প্রাইস স্কলারশিপ এর জন্য আবেদন করেছিলেন।
বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা তিনি
১৮৮৮ সালের তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন তখন তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে রসায়ন বিভাগের পড়াতেন। আর গবেষণা লাইব্রেরীতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তার ছাত্রদের নিয়ে তিনি অনেক কাজও করেছিলেন জনপ্রিয় কাজও করেছিলেন ১৮৮২ সালে যখন তিনি বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
কিসের ওপর গবেষণা করেছিলেন তিনি
১৮৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি নাইট্রেট ও হাই নোটেড যৌগের উপর কাজ করেছিলেন যেটিতে পারদ নাইটের আবিষ্কার সম্পর্কে গবেষণা নিয়ে রচনা করেছিলেন। ১৯০১ সালে তিনি বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক কোম্পানির কোম্পানি লিমিটেড হয়ে ওঠে যা ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি।
বর্তমান সময়ে এই কোম্পানিগুলির ওষুধ প্রস্তুতকারীর মধ্যে একটি। লবণ, সালফার যুক্ত জৈব যৌগ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। হিন্দুর রসায়নের ইতিহাস বইটি প্রফুল্ল চন্দ্র রায় লিখেছিলেন। যেখানে তার অনেক কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। ১৯০১ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৪৪ সালে ১৬ জুন মারা যান মৃত্যুকালীন সময় তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
কী স্লোগান দিতেন ছাত্রদের
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তার ছাত্রদের একটি বিশেষ স্লোগান দিয়ে তাদের মধ্যে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করেছিলেন সেই স্লোগানটি হল,' বিজ্ঞান অপেক্ষা করতে পারে কিন্তু স্বরাজ কখনো অপেক্ষা করতে পারে না'। এই শ্লোগান এই উদ্ভূত হয়ে উঠেছিল তার ছাত্ররা। এবং তাদের মধ্যে জেগে উঠেছিল দেশপ্রেম স্বাধীনতা আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে না পারলেও অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কে সব রকম ভাবে সমর্থন করেছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।
কাঁদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল তাঁর
মহাত্মা গান্ধী থেকে কংগ্রেস নেতারা নিয়মিত তার বাড়িতে যোগাযোগ রাখতেন গান্ধীজি এবং গোপালদের সঙ্গে তার বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁকে নাম আজও ইতিহাসের পাতায় উল্লেখ্য রয়েছে।
ছবি সৌ:ইউটিউব
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন অভিযানে নামা বিপ্লবী লালমোহন সেন বেঁচে আছেন ইতিহাসের পাতায়