নেতা বাছতে আলোচনা-বিতর্ক করতে হয়; যেমন করছে আমেরিকায় ডেমোক্র্যাটরা; কংগ্রেস কি শিখছে?
ভারতের শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অবস্থা এই মুহূর্তে তথৈবচ। একের পর এক নির্বাচনে হেরে দলটির নেতৃত্ব তো দিশেহারা বটেই
ভারতের শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অবস্থা এই মুহূর্তে তথৈবচ। একের পর এক নির্বাচনে হেরে দলটির নেতৃত্ব তো দিশেহারা বটেই, পাশাপাশি জাতীয় অধ্যক্ষ রাহুল গান্ধী ইস্তফা দিতে জেদ ধরে থাকাতে আরও সমস্যায় পড়েছে তারা। শেষ খবর পাওয়া অনুযায়ী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডের পরবর্তী কংগ্রেস অধ্যক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অন্তত কংগ্রেসের 'কনসেন্সাস ক্যান্ডিডেট' হিসেবে যে তাঁরই নাম উঠে আসছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
সাতাত্তর বছরের শিন্ডে, যিনি এবারেও তাঁর নিজের গড় সোলাপুরে হেরেছেন বিজেপির প্রার্থীর কাছে, নরেন্দ্র মোদীর এই ভরপুর বাজারে কতটা সুবিধে করতে পারবেন তা তিনি এবং তাঁর দলই জানে।
কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। যদি রাহুল গান্ধী নিজের কাঁধে আর দায়িত্ব নিতে চাইছেন না এমনকি পরবর্তী নেতা কে হবেন তা নিয়ে চর্চা করতেও রাজি নন, সেখানে শিন্ডেকে ঠিক কী প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বাছাই করা হচ্ছে? তাঁকে কি সামনে আনা হচ্ছে শুধুমাত্র আসন্ন মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনকে নজরে রেখে?
মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের অবস্থাও কংগ্রেসের মতোই
এখানেই কংগ্রেসের শেখার রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে। কংগ্রেস যেমন মোদী জমানায় চূড়ান্ত নাজেহাল হচ্ছে, আমেরিকার বর্তমান রাজনীতিতে তেমনই রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে চূড়ান্ত ব্যর্থ ডেমোক্র্যাটরাও। আগামী বছরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ডেমোক্র্যাট শিবিরে এখনও নানা মুখের ভিড়; কে ট্রাম্পের মোকাবিলা করবেন কেউ জানে না।
গত সপ্তাহেই ডেমোক্র্যাটদের বিতর্কসভা শুরু হয়েছে এবং সেখানে বেশ তপ্ত তর্ক দেখা গিয়েছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের মধ্যেই। ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কমলা হ্যারিসের সঙ্গে প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি জন বাইডেন-এর তর্কাতর্কি তো বেশ শোরগোল ফেলেছে। দু'দিনের এই বিতর্কসভায় আলাদা ভাবে ২০ জন প্রার্থী অংশ নেন এবং শরণার্থী, জাতি থেকে পরিবেশ নানা বিষয়ই তাঁরা তর্কে বিদ্ধ করেন একে অপরকে।
অন্তত বিতর্ক তো করছে ডেমোক্র্যাটরা; কংগ্রেসের সেসবের বালাই নেই
কংগ্রেসের মতো ডেমোক্র্যাটরাও জর্জরিত। কে চূড়ান্ত রাষ্ট্রপতি প্রার্থী তাই নিয়ে নানা হট্টমেলায় জেরবার তাদের শিবির। বার্নি স্যান্ডার্সের মতো প্রবলভাবে বামপন্থী এবং বাইডেনের মতো প্রবল ডানপন্থী প্রার্থীও রয়েছেন এবারের দৌড়ে। দলের শেষ অবস্থান কী হবে কেউ জানে না। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে যে আশার আলো দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে আলোচনা-বিতর্ক।
চাপিয়ে দেওয়ার হলে রাহুল গান্ধীই থাকুন
কংগ্রেসের মধ্যে এই সংস্কৃতিরই সমূহ অভাব। নতুন নেতা বাছতে কেন ডেমোক্র্যাটদের মতো দলের মধ্যে আলোচনা-বিতর্ক হতে দেখা যাচ্ছে না? যদি সেই সোনিয়া গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাধরাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে তা গুণগতভাবে কী আলাদা হল? কংগ্রেসে তো ঘটা করে চিন্তন শিবিরের আয়োজন হয়, এইরকম একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়েও তা হবে না কেন?
অথচ কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ এগোতে পারে একমাত্র ওই পথেই। কংগ্রেস মহাত্মা-নেহরুর সময়ে শুধুমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবেই পরিচিত ছিল যে, তা নয়। তার মধ্যে আলোচনা, পারস্পরিক চিন্তা-ভাবনা দেওয়া নেওয়ার রীতিনীতি তাতে ছিল। সেটা ব্যতীত দলের মাথায় যাকেই বসানো হোক, আখেরে লাভ কিছুই হবে না।