এক সময়ে ছদ্মনামের আশ্রয় নিতে বাধ্য হন রাহুল, জেনে নিন তাঁর জীবনের কিছু অজানা ঘটনা
গান্ধী পরিবারের জন্মানো এই ব্য়াক্তিত্বের জীবন ঠিক কেমন ছিল? দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারে জন্মেও কতটা চড়াই উতরাই রয়েছে তাঁর জীবনে, দেখে নেওয়া যাক
২০১৭ সালের বহু প্রতিক্ষিত গুজরাত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের দায়িত্ব উঠেছে তাঁর কাঁধে। নেহরু-গান্ধী পরিবারের এই সদস্যকে নিয়েই এখন আগামী দিনে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভোট বৈতরণী পার করার স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস। বিরোধী রাজনীতির চাপ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে অনন্তর ট্রোল, কিন্তু এসবের মধ্যে ও রাজনৈতিক শালীনতা এখনও হারাননি তিনি। তিনি রাহুল গান্ধী। গান্ধী পরিবারের জন্মানো এই ব্য়াক্তিত্বের জীবন ঠিক কেমন ছিল? দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারে জন্মেও কতটা চড়াই উতরাই রয়েছে তাঁর জীবনে, দেখে নেওয়া যাক।
রাহুল গান্ধীর ছোটবেলা
১৯৭০ সালের ১৯ জুন জন্মান রাহুল। ইন্দিরা গান্ধীর নাতি তথা রাজীব গান্ধীর সন্তান হিসাবে যে ঘরানায় তাঁর বড় হওয়ার কথা সেভাবেই বড় হয়েছেন রাহুল। ১৯৮১ থকে ১৯৮৩ সা পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডের দুন স্কুলে পড়াশুনা করেন তিনি।
ইন্দিরা হত্যাকাণ্ডের প্রভাব
আশির দশকের একটা সময়ে খালিস্তান আন্দোলন নিয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দেশ। হিংসা ,হানাহানির সেই পরিস্থিতির জেরে উত্তপ্ত হয় জাতীয় রাজনীতি। এরই মধ্যে, ১৯৯৪ সালে ৩১ অক্টোবর নিজের বাসভবনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ঠাকুমা ইন্দিরার মৃত্যুর ঘটনা ছুঁয়ে যায় কমবয়সী রাহুলকেও।
কেন বিদেশ পাড়ি দিতে বাধ্য হন
ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্য়ুর পর গোয়েন্দা রিপোর্ট জানায় যে , গান্ধী পরিবারের ওপর শিখ সম্প্রদায়ের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তখন রাহুল দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র। কেউ বলে থাকেন নিরাপত্তার খাতিরে, কেউ বা বলেন উচ্চ শিক্ষার্থেই দেশ ছেড়ে হাভার্ডে পাড়ি দেন রাহুল গান্ধী।
এরপর কী হয়?
একের পর এক হত্য়াকাণ্ড গ্রাস করতে থাকে গান্ধী পরিবারকে। ইন্দিরা গান্ধীর পর রাজীব গান্ধীকে খুন হতে হয় তামিল টাইগারদের হাতে। পিতার এই মৃত্য়ু শোক যেন আরও চেপে বসে রাহুলের মনে। আর আরও একবার স্থানান্তরিত হতে হয় রাহুলকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার রোলিন্স কলেজে ভর্তি হন তিনি।
শিক্ষাজীবন
ফ্লোরিডায় থাকাকালীন তিনি একটি ছদ্মনাম নেন রাহুল ভিন্সি নামে। সদ্য পিতা রাজীব গান্ধীর নৃশংস হত্য়াকাণ্ডের পর তখন এভাবেই নিরাপত্তাকে বেছে নিতে বাধ্য হন রাহুল। তাঁর আসল পরিচয় যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো ছিল। পাশাপাশি মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকেও তাঁর আসল পরিচয় জানানো ছিল সেই সময়ে।
কর্মজীবন
এরপর কেমব্রিজের ত্রিনিটি কলেজ থেকে এমফিল, সম্পন্ন করে লন্ডনের একটি ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্মে চাকরি করা শুরু করেন রাহুল। কিন্তু নেহরু গান্ধী পরিবারের এই সন্তান আর বেশিদিন সেই কাজ করেননি।
তাঁর প্রেমজীবন নিয়ে নানা জল্পনা
বিভিন্ন সূত্র মারফৎ শোনা যায়, ২০০৪ সাল থেকেই নাকি রাহুল গান্ধীর কোনও স্প্যানিশ গার্লফ্রেন্ড ছিল, যিনি পেশায় আর্কিটেক্ট। এই মহিলা নাকি ভেনিজুয়েলাতে থাকেন বলেও বিভিন্ন সূত্রের। রাহুলের সঙ্গে এই মহিলার পরিচয় ইংল্যান্ডে। এমনটাই দাবি বিভিন্ন গোপন সূত্রের।
রাজনীতিতে প্রবেশ
যে পরিবারের সঙ্গে দেশের রাজনীতিক চড়াই উতরাইয়ের ইতিহাস জড়িত সেই পরিবারের সন্তানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়নি। অতঃপর ২০০৪ সালে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী তথা রাহুলের পিতা রাজীব গান্ধীর কেন্দ্র উত্তর প্রদেশের আমেঠি থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হন রাহুল। ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যাবতীয় স্মৃতিকে দূরে রেখে রাজনীতিতে খাতায় কলমে ধরা দেন রাহুল।
কংগ্রেসে পদ মর্যাদা
২০০৭ সালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুব কংগ্রেসের গুরু দায়িত্ব পান করতে থাকেন তিনি। এরপর দলের সহ সভাপতি থেকে ২০১৭ সালে সভাপতি পদে উত্থান রাহুলের।
রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
২০১১ সালে উত্তরপ্রদেশে ভাট্টা পারসৌলে কৃষকদের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর দেখা করার ঘচনাকে কেন্দ্র করে একবার গ্রেফতার হন রাহুল। এরপর , দলে একাধিক পদ মর্যাদার সঙ্গে রাহুলের রাজনৈতিক পদ বাড়লেও, সেভাবে বড় কোনও রাজনৈতিক সাফল্য় এখনও আসেনি রাহুলের ঝুলিতে। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনের দিকে যতটা তাকিয়ে রাহুল ততটাই কৌতূহল দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।