২ বছর পূর্ণ : সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে যে পথ পার করল মোদী সরকার
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে। একাই সরকার গড়ার মতো আসন পায় বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী। এরপর দেখতে দেখতে ২ বছর কেটে গিয়েছে।
এই দু'বছরে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে মোদী সরকার। নানা ইস্যুতে বারবার বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে কেন্দ্র। আবার নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যও সঙ্গী হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। এখনও বেশিরভাগ মানুষেরই পছন্দের তালিকায় পয়লা নম্বরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদীই।
মূল্যবৃদ্ধি রোধ, দুর্নীতি দমন, কালো টাকা ফিরিয়ে আনা, শিল্প ও পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া সহ একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেন্দ্রের সরকার দখল করেছিল এনডিএ। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির হার কমানো, অচল আইনের স্খলন বা সংস্কার, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানো এছাড়া কর ব্যবস্থার সরলীকরণের মতো ইস্যুগুলিকে নির্বাচনী ইস্তেহারে বলা হয়েছিল।
অচল আইনের নিষ্কাশন
মোদী সরকারের আমলে মোট ১১৫৯টি অচল আইনের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। আগের সবকটি সরকার মিলিয়ে ৬৪ বছরে মোট ১৩০১টি অচল আইন বন্ধ করেছিল। সেখানে মোদী সরকার মাত্র ২ বছরেই দারুণ কাজ করেছে।
কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক
কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে মোদীজি নিজে সুসম্পর্কের কথা বললেও গত দুইবছরে বেশ কয়েকটি রাজ্য়ের সঙ্গে কেন্দ্রের তুমুল সংঘাত হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে গিয়ে বিজেপি সরকার বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে। এছাড়া দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি সরকারের সঙ্গেও নিত্য বিতণ্ডা হয়েছে সরকারের।
মূল্যবৃদ্ধি ইস্যু
মূল্যবৃদ্ধি আটকাতে নানা পরিকল্পনার কথা বলেছিল মোদী সরকার। তবে তাতে খুব একটা রাশ টানতে পারেনি। শিক্ষাক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ, নির্মাণ শিল্পে ১০ শতাংশ, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ১৪ শতাংশ, বিদ্যুতে ৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে গত দু'বছরে। প্রতিবছর খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে ৬.২১ শতাংশ হারে, জ্বালানি খরচ বেড়েছে ৩.০৩ শতাংশ হারে।
স্মার্ট সিটি পরিকল্পনা
ক্ষমতায় এসে মোট ১০০টি স্মার্ট সিটি তৈরির কথা জানিয়েছিল মোদী সরকার। তাতে প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোগত সমস্ত সুবিধা থাকবে বলে ঘোষণা হয়েছিল। তবে গত একবছরে নানা ধরনের পরিকল্পনার পরে গত জানুয়ারিতে মাত্র ২০টি শহরের নাম জানিয়েছে সরকার যেগুলিকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরিত করা হবে। এবং সবমিলিয়ে মোট ৪০টি শহরের নাম এবছরের শেষে ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।
শিক্ষাক্ষেত্র
শিক্ষাক্ষেত্রকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখার অঙ্গীকার করেছিল এনডিএ সরকার। এক্ষেত্রে 'সর্বশিক্ষা অভিযান'-এর মাধ্যমে মোট বাজেটের ৬ শতাংশ খরচ করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৩.৯ শতাংশই খরচ করা হয়েছে। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্র ঘোষণা করে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের অনুদানের মোট ১০ শতাংশ শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ করতে হবে। এক্ষেত্রে খরচের দায় রাজ্যগুলির উপরে চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে বিতর্ক বেঁধেছে।
মহিলাদের উন্নয়ন
নারীকল্যাণের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছিল এনডিএ সরকার। লোকসভা ও বিধানসভাগুলিতে আইন করে অন্তত ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছিল। তবে তা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে 'বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও' প্রকল্পটি ইতিমধ্যে যথেষ্টা সাড়া ফেলেছে ও দেশের নানা রাজ্যে এর ভালোই সাড়া পড়েছে।
বুলেট ট্রেন ও রেল যোগাযোগে উন্নতি
দূরপাল্লার রেলের গতি কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে প্রথম থেকেই সচেষ্ট থেকেছে মোদী সরকার। বুলেট ট্রেন যাতে ভারতেও চালানো সম্ভব হয় সেদিকে লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। কিছুক্ষেত্রে সরকার সফলও হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে হাই স্পিড ট্রেন চালানোর কাজ চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই স্বপ্ন পূরণ হবে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমন হলে দেশের মূল শহরগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও দ্রুত ও আধুনিক হবে।
পরিবেশ দূষণ কমাতে উদ্যোগ
পরিবেশ দূষণ কমাতে মোদী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। স্বচ্ছ্ব ভারত অভিযান বা গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার জন্য নির্মল গঙ্গা অভিযান পরিকল্পনা সহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে মোদী সরকার। এছাড়া কোনও কাজ করতে গেলে সংস্থাকে যেখানে পরিবেশের ছাড়পত্র পেতে গেলে কম করে ২ বছর অপেক্ষা করতে হত, এখন তা কমে মাত্র ৬ মাসে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে গোটা বিষয়টিকে তিন মাসের মধ্য়ে নিয়ে আসার।
অর্থনৈতিক সংস্কার
শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারতের জিডিপির বৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। করদানের সরলীকরণ বা জিএসটি বিল নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিল তা সর্বার্থে রক্ষা হয়নি। এখন ভারতের জিডিপি রেট হল ৬.৭ শতাংশ যা তুলনায় বেশ কম।
এর পাশাপাশি জিএসটি বিল পাশ করানো নিয়েও রাজ্যসভায় বিরোধিতার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। এখনও তা পাশ করানো যায়নি কারণ রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
কালো টাকা ইস্যু
বিদেশের ব্যাঙ্কে রাখা কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে নানা প্রতিশ্রুতির কথা বলেছিল মোদী সরকার। ২০১৫ সালে এই নিয়ে আইনও কার্যকর হয়েছে। তবে এটি এখনও সেভাবে কার্যকর হয়নি। এতদিনে মাত্র ৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা ফেরত আনা গিয়েছে।
কোনও দুর্নীতির দাগ না থাকা
আগের কংগ্রেস সরকারের আমলে নানা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ২জি স্পেকট্রাম, কমনওয়েলথ গেমস, কয়লা ব্লক বণ্টন কেলেঙ্কারি ইত্যাদি। তবে মোদী সরকারের আমলে এখনও পর্যন্ত কোনও আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর নেই।
মোদী সরকারের বিদেশ নীতি
নেপাল ভূমিকম্পের পরে যেভাবে ভারত প্রতিবেশী হিসাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা থেকেই ফের একবার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সৌহার্দ্য়ের বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
স্যোশাল মিডিয়া ও রেডিওয় জনসংযোগ
আগের কোনও কেন্দ্রীয় সরকার এভাবে স্যোশাল মিডিয়া বা রেডিওর মতো গণমাধ্যমকে হাতিয়ার করে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা করেনি। মোদীজির 'মন কি বাত' রেডিও অনুষ্ঠানটি গ্রামীণ জনজীবনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।