ইন্টারনেটে বিনোদন দর্শনে শহরের আগে গ্রাম, আর কি বলছে আইএএমএআই-এর সমীক্ষা
আঞ্চলিক ভাষায় ডিজিটাল ভারতের মানচিত্রে খুব শিগগিরি ঢুকতে চলেছে আরও ২০৫ মিলিয়ন নতুন ইন্টারনেট ইউজার। এমনই তথ্য সামনে নিয়ে এসেছে মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া বা আইএএমএআই ও কান্টার আইএমআরবি।
আঞ্চলিক ভাষায় ডিজিটাল ভারতের মানচিত্রে খুব শিগগিরি ঢুকতে চলেছে আরও ২০৫ মিলিয়ন নতুন ইন্টারনেট ইউজার। এমনই তথ্য সামনে নিয়ে এসেছে মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া বা আইএএমএআই ও কান্টার আইএমআরবি। এই যৌথ সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, পছন্দমতো ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিলে এই ২০৫ মিলিয়ন মানুষ আঞ্চলিক ভাষার ডিজিটাল ভারতের মানচিত্রে ঢুকে পড়বে।
আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ কম!
সমীক্ষায় প্রকাশ যে ভারতে ৪৮১ মিলিয়ন ইন্টারনেট ইউজারের মধ্যে ৩৩৫ মিলিয়ন ইনডিক বা আঞ্চলিক ভাষায় নন-ইউনিক ইউজার। এই সংখ্যার মধ্যে আবার ১৯৩ মিলিয়ন নন-ইউনিক ইউজার রয়েছেন শুধুমাত্র শহরাঞ্চল থেকে। গ্রামাঞ্চলে এই সংখ্যাটা ১৪১ মিলিয়ন। আঞ্চলিক ভাষায় বা ইনডিক-এ নন-ইউনিক ইউজার মানে এই সংখ্যক লোকেরা আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান না।
আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্ট ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে গ্রামাঞ্চল
অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া বা আইএএমএআই ও কান্টার আইএমআরবি-র করা যৌথ সমীক্ষায় দাবি, আঞ্চলিক ভাষায় সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট কনটেন্ট ব্যবহার হয় গ্রামাঞ্চলে। সেখানে ৭৬% মানুষ ইন্টারনেটে আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্ট দেখে থাকেন। শহরাঞ্চলে এই সংখ্যাটা ৬৬%। সমীক্ষায় আরও প্রকাশ যে আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় যারা পিছিয়ে মূলত তাঁদের মধ্যে আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট কনটেন্ট ব্যবহারের প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। এই ধরনের মানুষ যেমন শহরাঞ্চলে রয়েছে, তেমনি গ্রামাঞ্চলেও রয়েছে।
শহর ও গ্রামে একই বয়সের ইউজারের সংখ্যাধিক্য
আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট কনটেন্ট ব্যবহারে বয়স যে গুরুত্বপূর্ণ তা এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট কনটেন্ট ব্যবহারে শহরাঞ্চলের ৭৫% ইউজারের বয়স ৪৫-এর ঊর্ধ্বে। আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট কনটেন্ট ব্যবহারে গ্রামাঞ্চলের ৮৬% মানুষের বয়সও ৪৫-এর উপরে।
ইন্টারনেটে বিনোদন ভালবাসে গ্রামের মানুষ
গ্রামাঞ্চলে মানুষ ইন্টারনেটে বিনোদনমূলক ভিডিও ও মিউজিক ভিডিও দেখতে পছন্দ করে। এছাড়াও খবর ভিত্তিক ভিডিও দেখাটা এদের পছন্দের। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে গ্রামাঞ্চলের অন্তত ৭০% ইউজার ইন্টারনেটে এমন প্রবণতার দিকে ঝুঁকে রয়েছেন।
জনপ্রিয় ই-কমার্সের আঞ্চলিক ভাষায় সার্চের প্রবণতা কম
সমীক্ষায় আরও যে তথ্যটি সামনে এসেছে তাতে দেখা গিয়েছে, অনলাইন ব্যাকিং, জব সার্চ বা অনলাইন টিকিট বুকিং-এর মতো জনপ্রিয় ই-কমার্স বিষয়গুলি ইন্টারনেটে আঞ্চলিক ভাষায় সার্চের প্রবণতা কম। এই প্রবণতা ২০%-এর নিচে। এমনকী আঞ্চলিক ভাষায় সার্চ ইঞ্জিন খোঁজার প্রবণতাও যথেষ্ট কম। মাত্র ৩৯% মানুষ আঞ্চলিক ভাষায় সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে থাকেন।
আরও এক তথ্য
আইএএমএআই-এর করা এই সমীক্ষায় এটা পরিষ্কার যে আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা অনেকটাই সংকীর্ণ করে রেখেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলে সে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে না ইউনিক ইউজারের সংখ্যা। এমনকী, আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকাদের মধ্যেও এটা প্রভাব ফেলছে।
২৩% মানুষ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আসবে
সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের যথেচ্ছ সুযোগ অন্তত ২৩% ইন্টারনেট নন-ইউজারকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসবে। এর ফলে আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারে ২০৫ মিলিয়ন মানুষ-এর আগমন ঘটবে।
ইন্টারনেটকে পুরোদস্তুর আঞ্চলিক ভাষায় করতে মত
আইএএমএআই-এর মতে, তারা শুধুমাত্র ইন্টারনেট কনটেন্টকে ভাষা ভিত্তিক করতে বলছে না, ইউআরএল থেকে শুরু করে ডোমেন নেম, কি ট্যাগস, ইনডেক্সিং ইত্যাদি ইন্টারনেট ব্যাকএন্ড জিনিসগুলোকে আঞ্চলিক ভাষায় লেখার সুবিধা থাকলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আরও বেশি করে মানুষকে আকর্ষণ .করবে।
আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারে চিন প্রথমে
ইন্টারনেট কনটেন্টে মান্দারিন ভাষার স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে এই মুহূর্তে চিন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশের তকমা পেয়েছে। ইন্টারনেটে তাই ইংরাজির পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ভাষা মান্দারিন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় বিশ্বে মাত্র ০.১% মানুষ আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ভিসনকে সফল করতে হলে ভারতকেও আঞ্চলিক ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের ইকোসিস্টেমকে গড়ে তুলতে হবে বলেও মনে করছে আইএএমএআই।
কে এই আইএএমএআই?
আইএএমএআই বা দ্য ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া হল একটি নবীন সংগঠন। ভারতে ডিজিটাল ব্যবসার প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সংগঠন তৈরি হয়েছে। ২০০৪ সালে ভারতের অনলাইন পাবলিশার্স-দের ঐক্যবদ্ধতায় এই সংগঠন দিনের আলো দেখেছিল। গত ১৩ বছরে এই সংগঠন ডিজিটাল ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া বাজার এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তার বদলে যাওয়া বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে সফলভাবে তথ্য তুলে ধরছে। অনলাইন পাবলিশিং হোক বা ডিজিটাল পেমেন্টস বা উদ্ভাবক ক্ষেত্রগুলি, যেমন- ফাইন-টেক বা এডু-টেক, হেলথ-টেক-এ সবসময়ই কাজে লাগার মতোই তথ্য তুলে ধরেছে আইএএমএআই।