ভারতীয় মানেই এই কুসংস্কারগুলি কোনও একটি আপনি মেনে চলবেনই
আমাদের রোজনামচার মধ্যেই বহু কুসংষ্কারাচ্ছন্ন ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। প্রতিদিন পথ চলতে ভারতীয়রা কোন কোন কুসংষ্কার অবশ্যই মানেন তা জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
শিক্ষার আলোয় আলোকিত হলেই যে কুসংষ্কারকে মন থেকে তাড়িয়ে ফেলা সম্ভব না তা কিন্তু নয়। বহু উচ্চ শিক্ষিত মানুষও গড়পড়তা লোকজনের চেয়ে বেশি কুসংষ্কার মানেন। আবার অনেক কম শিক্ষিত মানুষও কুসংষ্কারে বিশ্বাস করেন না। আসলে ঘটনা হল, গড়পড়তা ভারতীয়রা কম-বেশি সকলেই কুসংষ্কারে বিশ্বাস করেন। আমাদের রোজনামচার মধ্যেই বহু কুসংষ্কারাচ্ছন্ন ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। প্রতিদিন পথ চলতে ভারতীয়রা কোন কোন কুসংষ্কার অবশ্যই মানেন তা জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
[আরও পড়ুন:যৌনতা বিপদ ডেকে আনতে পারে, যদি আপনার শরীরে থাকে এই সমস্যা]
মহিলাদের বৈধব্য
বৈধব্য লাভ করা মহিলারা কোনও শুভ কাজে অংশ নিতে পারেন না। তাদের একঘরে করে রাখ হয়। সাদা বস্ত্র পরে বাকী জীবন নিরামিষ খেয়ে কাটাতে হয়। কোনও বিধবার মুখ দেখে শুভ কাজ শুরু করতে নেই বলেও ধারণা ভারতীয়দের।
এক চোখ দেখানো
কোথাও বেরিয়ে কোনও কাজ করার আগে এক চোখ দেখলে বা চোখ কটকট করলে তা অশুভ বলে মনে করা হয়। ভারতীয়রা মনে করে, কিছু বোধহয় খারাপ হতে চলেছে। এই ভেবেই মন ভয় পেয়ে যায়।
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে নানা কুসংষ্কার রয়েছে। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী এই সময়ে রাহু এসে সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করে। ফলে সকলকে ঘরের মধ্যে থাকার কথা বলা হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের সন্তান যাতে কোনওরকম সমস্যা না নিয়ে জন্মায় তাই তাদের বাইরে বেরনো আরও বেশি করে বারণ।
কালো বিড়াল পথ কাটা
এমনিতে যেকোনও বিড়াল পথ কাটলেই আমাদের মনে অস্বস্তি হতে থাকে। তবে যদি কোনওভাবে কালো বিড়াল পথ কাটে তাহলে আর রক্ষা নেই। কারণ শুভ কাজে বেরিয়ে কালো বিড়ালের পথ কাটা ভয়ঙ্কর অশুভ বলে মনে করা হয়।
শনিবারের বারবেলা
শনিবার দিনটি বড় ঠাকুর বা শনি ঠাকুরের দিন বলে মনে করা হয়। শনি দেবতা ভয়ঙ্কর বদরাগী ফলে এইদিনে কোনও শুভ কাজ করতে চায় না অধিকাংশ ভারতীয়। তার উপরে শনিবারের সন্ধ্যেবেলা নিয়েও নানা মুনির নানা মত রয়েছে। বাইরে জামাকাপড় রাখা যাবে না, খোলা চুলে বেরনো যাবে না ইত্যাদি।
লেবু-লঙ্কা দরজায় ঝোলানো
অপদেবতা বা বাজে কিছুকে ধ্বংস করতে বাড়ির গেটে, দোকানের দরজায় অথবা গাড়ির মধ্যে অনেকে লেবু-লঙ্কা একসঙ্গে সুতোয় গেঁথে ঝুলিয়ে রাখে। এতে লেবুর সঙ্গে মোট ৭টি লঙ্কা থাকে। এটিকে শুভ মনে করা হয়। দুর্ভাগ্য কাটিয়ে সৌভাগ্য ফেরাতে এমন করা হয়।
মেয়েদের ঋতুস্রাব সমস্যা
মেয়েদের মাসিককে ভয়ঙ্কর অশুভ বলে ধরা হয়। এই সময়ে কোনও শুভ কাজে মেয়েরা যোগ দেয় না। এমনকী ঠাকুরঘরেও মেয়েদের ঢোকা বারণ। আগেকারদিনে এমন হওয়া মেয়েদের মুখ দেখাও পাপ বলে মনে করা হত।
অসময়ে নখ কাটা
সপ্তাহের বিশেষ দিনে অথবা সূর্য ডোবার পরে নখ কাটেন না বহু ভারতীয়। বিশেষ করে মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবারে নখ কাটলে ভাগ্য প্রসন্ন হয় না, এমনটাই প্রচলিত রয়েছে। সেই কুসংষ্কারই যুগের পর যুগ ধরে রীতি হিসাবে চলে আসছে। উচ্চশিক্ষিত থেকে নিরক্ষর সকলেই তা মেনে চলেন।
এক শালিক দেখা
রাস্তাঘাটে একটি শালিক পাখি দেখলে অনেকেরই আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তারপরে যদি কাজ করতে গিয়ে কিছু এদিক-ওদিক হয় তাহলে পুরো রাগ গিয়ে পড়ে শালিক পাখির উপরে। তবে শালিক দেখার পরে কলাগাছ দেখলে অবশ্য অনেকেই নিশ্চিন্ত বোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে কলাগাছ নমস্কার করে দোষ কাটিয়ে নিতে কসুর করেন না।
পিছনে ডাক
বাড়ি থেকে বেরনোর সময় পিছনে ডাক দেওয়া অনেকেই অশুভ মনে করেন। বিশেষ করে গুরুজনরা ছোটদের কাউকে পিছনে ডাকতে চান না। পাছে রাস্তাঘাটে কোনও বিপদ-আপদ হয়। এর পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি না থাকলেও ভারতীয়রা এই কুসংষ্কার যুগের পর যুগ ধরে মেনে আসছে।