জলবায়ু পরিবর্তনে সবথেকে ঘাটতি হবে জলের! বায়ুতেই বিকল্পের খোঁজ গবেষকদের
দ্রুত বদলাচ্ছে জলবায়ু। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সংকট তীব্রতর হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রার। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।
দ্রুত বদলাচ্ছে জলবায়ু। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সংকট তীব্রতর হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রার। জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যেই পানীয় জলের সংস্থান ৪০ শতাংশ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈশ্বিক জল সংকট নিয়ে বিশ্বের কাছে আসন্ন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে বলে গবেষকদের মত।
বায়ু থেকে জীবনী শক্তিদায়ক তরল গবেষকদের আবিষ্কার
গবেষকরা এখন এই জলসংকট মোকাবিলায় বিকল্প উপায় বের করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ইতিমধ্যেই গবেষকরা এক বিকল্প উপায়ের খোঁজও পেয়েছেন। বিশ্বজুড়ে বায়ু থেকে জল সংগ্রহের পরিকল্পনামাফিক কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। অ্যাটমস্ফিয়ারিক ওয়াটার হার্ভেস্টার বায়ু থেকে জীবনী শক্তিদায়ক তরল টেনে আনতে পারে, যা বিশুদ্ধ জলের ন্যায় জীবনীশক্তি প্রদান করতে পারে।
শুষ্ক জায়গায় একজন ব্যক্তিকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য পর্যাপ্ত জল
দ্য মুনশট ফ্যাক্টরির নেতৃত্বের জ্যাকসন লর্ড অফ এক্সের গবেষকরা একটি প্রোটোটাইপ মডেল ডিজাইন তৈরি করেছেন, যা সৌর শক্তিতে চলে এবং ছোট স্কেলে ঘনীভবনের প্রক্রিয়াটিকে প্রতিলিপি করে৷ জ্যাকসন লর্ড অফ এক্সের গবেষকদের দলটি অনেক শুষ্ক জায়গায় একজন ব্যক্তিকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য পর্যাপ্ত জল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
জনপ্রতি প্রতিদিন পাঁচ লিটার পানীয় জলের লক্ষ্যমাত্রা
নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে গুগল, ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ এবং এক্স মুনশট ফ্যাক্টরির গবেষকরা তাদের প্রোটোটাইপের প্রক্রিয়া এবং ডিজাইনের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। গবেষকরা বলেছেন যে এই জাতীয় ডিভাইস জনপ্রতি প্রতিদিন পাঁচ লিটার পানীয় জলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে।
পানীয় জলের সুনিশ্চিকরণই হবে অগ্রাধিকার
গবেষকরা বলেন, সকলের জন্য নিরাপদ পানীয় জল নিশ্চিত করা এই মুহূর্তে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে অগ্রাধিকার পাবে এই বিষয়টি। জাতিসংঘের পরিকাঠামোতে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অগ্রাধিকার হিসাবে স্বীকৃত হবে পানীয় জলের সুনিশ্চিকরণের বিষয়টি।
বিশ্বব্যাপী জলের ঘাটতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হুয়ের মতে, বিশ্বব্যাপী ২.২ বিলিয়ন লোকের নিরাপদ পানীয় জলের পরিষেবা নেই। ৪.২ বিলিয়ন মানুষের নিরাপদে স্যানিটেশন পরিষেবা নেই এবং তিন বিলিয়ন মানুষের মৌলিক হাত ধোয়ার সুবিধার অভাব রয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থার যৌথ মনিটরিং প্রোগ্রামের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় তিনজনের মধ্যে একজনের নিরাপদ পানীয় জলের নির্ভরযোগ্যতা নেই। এই পরিসংখ্যান বাড়তে পারে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলছে প্রতিনিয়ত।
বায়ুমণ্ডলও জলাভাবে ভুগতে শুরু করবে যখন
গবেষকরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, "পানীয় জলের সমস্যার মাত্রা ও তীব্রতা বহু বছর ধরে বেড়ে চলেছে। জলবায়ু পরিস্থিতি বজায় রাখা সর্বাধিক প্রয়োজন মানব সভ্যতা রক্ষার জন্য। সেখানেই অবহেলা। বায়ুমণ্ডলের জল সংগ্রহকারী উপাদানেরও একটা সীমা রয়েছে। সেই সীমা অতিক্রম করে গেলে আরও বিপদ। তখন বায়ুমণ্ডলও জলাভাবে ভুগতে শুরু করবে।
কীভাবে বাতাস থেকে জল টানা হয়?
গবেষকরা একটি প্রোটোটাইপ হার্ভেস্টার তৈরি করেছেন, যা ঘনীভবনের নীতিতে কাজ করে। ঘনীভবন বলতে বাষ্পকে তরলে বা জলে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। যখন উষ্ণ, আর্দ্র বায়ু শীতল বাতাসের সাথে মিলিত হয় বা একটি শীতল পৃষ্ঠে আঘাত করে, তখন এর অণুগুলি ধীর হয়ে যায় এবং তরলে পরিণত হয় এবং ঠান্ডা হয়।
বায়ুমণ্ডলে মেঘ তৈরির প্রক্রিয়া অনুসরণে হার্ভেস্টার ডিজাইন
এটি একই প্রক্রিয়া যা থেকে বায়ুমণ্ডলে মেঘ তৈরি হয় বা গ্রীষ্মের দিনে কোমল পানীয়ের ঠান্ডা ক্যানে জলের বিন্দু জমা করে। এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করে গবেষকরা সোলার হিটার, এয়ার ফ্যান, কনডেন্সার, অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার ফ্যান এবং হিট এক্সচেঞ্জার সমন্বিত একটি হার্ভেস্টার ডিজাইন করেছেন।
সূর্যালোক মেশিনের উপরে বায়ুর পুনঃপ্রবাহকে গরম করে
সূর্যালোক মেশিনের উপরে বায়ুর পুনঃপ্রবাহকে গরম করতে ব্যবহৃত হয়। এই পরিবেষ্টিত বাতাস থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে। বাতাসের এই উষ্ণ আর্দ্র প্রবাহ তাপ এক্সচেঞ্জারে একটি শীতল প্রবাহের মধ্য দিয়ে যায় এবং শীতল হয়। কুলিং ডাউন বায়ু তরলে রূপান্তরিত হয়, যা ডিভাইসের নীচে সংগ্রহ করা হয় এবং অবশিষ্ট বাযু তাপ এক্সচেঞ্জারে উত্তপ্ত হওয়ার জন্য ফিরে যায় এবং চক্রটি চলতে থাকে।
তিন বছর কাজ করার পর একটি ডিভাইস তৈরি
গবেষকরা বলেন, "তিন বছর কাজ করার পর আত্মবিশ্বাসী বোধ হচ্ছিল যে আমরা এমন একটি ডিভাইস তৈরি করতে পেরেছি, যা প্রতি লিটারে ১০ ডলারের বিনিময়ে জল উৎদন করবে। তবে এটির খরচ প্রতি লিটারে ১ ডলারে নামিয়ে আনার জন্য আরও উন্নয়নমূলক কাজ করতে হবে।
সকলের জন্য নিরাপদ জলের অধিকার, গবেষণা চলবে
গবেষণাপত্রটির উপসংহারে গবেষকরা বলছেন, সকলের জন্য নিরাপদ জলের অধিকার প্রদানের জন্য প্রযুক্তির উন্নয়ন জটিল সমস্যার একটি অংশ মাত্র। ডিভাইসগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ব্যবহার-কেন্দ্রিক গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ। মোট কথা এই গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত।