অ্যান্ড্রয়েড, আইফোনের সঙ্গে পেরে উঠল না মাইক্রোসফট, বন্ধ হয়ে গেল উইন্ডোজ ফোন
এবার উইন্ডোজ ফোনকে সরকারিভাবে বন্ধ করে দিল মাইক্রোসফট, ফলে এখনও যারা উইন্ডোজ ফোন ব্য়বহার করেন, তাঁরা আর কোনও আপডেট পাবেন না
উইন্ডোজ ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য দুঃসংবাদ। এবার উইন্ডোজ ফোনকে সরকারিভাবে বন্ধ করে দিল মাইক্রোসফট। ফলে এখনও যারা উইন্ডোজ ফোন ব্য়বহার করেন, তাঁরা আর কোনও আপডেট পাবেন না। এমনিতেই দু বছর আগে থেকেই উইন্ডোজ ফোনের নতুন কোনও মডেল বাজারে আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল, তাহলে কি মোবাইল ফোনের এই অপারেটিং সিস্টেম মৃত, অবশেষে সেই জল্পনাই সত্যি হল।
২০১০ সালে তখনও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম সেভাবে বাজারে আসেনি। তখনও স্মার্টফোন শব্দটি খুব বেশি মানুষের কাছে পরিচিত নয়। মাত্র তিন বছর আগেই বাজারে এসেছে প্রথম জেনারেশনের আইফোন। যথেষ্ট জনপ্রিয় হলেও দামের জন্যই তা সাধারণ মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল। আর ছিল ব্যাকবেরি অপারেটিং সিস্টেম, যা তখন বাজার ধরে ফেলেছে। এই অবস্থায় বাজারে এল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু নানা কারণে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রথম ফোন বাজার ধরতে পারেনি। এরপর উইন্ডোজ ৭.৫ অপারেটিং সিস্টেম ও নোকিয়ার হাত ধরে ফের কিছুদিনের মধ্যেই ফিরে আসে উইন্ডোজ ফোন। নাম দেওয়া হয় লুমিয়া। এই স্মার্টফোনের লাইভ টাইলস ও ঝকঝকে ইন্টারফেস দেখে প্রথম দর্শনেই অনেকের তা পছন্দ হয়ে যায়। কিন্তু ততদিনে বাজারে পুরোদমে চলে এসেছে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। আর আইফোনও আরও উন্নত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রথমদিকে কিছুটা ধাক্কা খেলেও কিছুদিনের মধ্যেই উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এসে কিছুটা জনপ্রিয় হয় উইন্ডোজ ফোন। তা তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে উইন্ডোজ ফোন। তার অবশ্য কারণ রয়েছে। উইন্ডোজ ফোনের অ্যাপ স্টোরে থাকা অ্যাপের সংখ্যা অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস-এর ধারে কাছেও আসতে পারেনি। এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে উইন্ডোজ ফোন।
পরবর্তী সময়ে নোকিয়ার একাংশকে কিনে নিয়ে উইন্ডোজ ফোনকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করে মাইক্রোসফট। নিয়ে আসে উইন্ডোজ ১০ মোবাইল। কিন্তু তাতে হিতে - বিপরীত হয়। নোকিয়ার নামে তাও যেটুকু ফোন বিক্রি হচ্ছিল, মাইক্রোসফট ফোনের দিকে তাকিয়েও দেখেনি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। নতুন বেশ কিছু ফিচার্স নিয়ে এলেও অ্যাপ স্টোরের অবস্থা সেই তিমিরেই থেকে যায়। এই অবস্থায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে লুমিয়ার দুটি ফ্ল্যাগশিপ মডেল বের করে মাইক্রোসফট। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই দুটি মডেল যা বিক্রি হল,তা হাতে গোনা যায়।
অবশেষে আর ক্ষতির বোঝা ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে নারাজ মাইক্রোসফট আনুষ্ঠানিকভাবেই উইন্ডোজ ফোনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিল। ফলে এখনও যাদের হাতে উইন্ডোজ ফোন রয়েছে, তাঁরা নতুন করে সফটঅয়্যার বা অ্যাপ আপডেট আর পাবেন না। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ব্ল্যাকবেরির ক্ষেত্রে। নিজেদের বাঁচাতে অ্যান্ড্রয়েডের হাত ধরেছে ব্ল্যাকবেরি, মাইক্রোসফট কী করে সেটাই এখন দেখার।