বিদেশনীতি ও নির্বাচন: ইন্দিরা ভোটে জিতে পাকিস্তানকে হারিয়েছিলেন; মোদী বালাকোট করে নির্বাচনে জিতবেন?
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন সাঙ্গ হওয়ার পরেই প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন চ্যানেল এবং সমীক্ষা সংস্থার এক্সিট পোল এবং সবাই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএকেই সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে দেখছে।
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন সাঙ্গ হওয়ার পরেই প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন চ্যানেল এবং সমীক্ষা সংস্থার এক্সিট পোল এবং সবাই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএকেই সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে দেখছে। এককভাবেই বিজেপির জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে, কংগ্রেসের ইউপিএ জোটের ভবিষ্যৎ বিশেষ আশাপূর্ণ নয় বলেই জানাচ্ছে এক্সিট পোলগুলি। আঞ্চলিক দলগুলিও এককভাবে কিছু করতে পারবে বলে আশা দেখায়নি তারা।
মোদী যদি এবারে সত্যিই জিতে ক্ষমতায় ফেরেন, তাহলে ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধীর পরে তিনিই হবেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি পরপর দু'বার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবেন। ইন্দিরার কংগ্রেস ১৯৬৭ সালে জেতার পরে একাত্তরে আরও বড় জনাদেশ নিয়ে ক্ষমতায় আসে।
ইন্দিরা ও মোদীর পাকিস্তান যোগাযোগ - নির্বাচনের পরে ও আগে
পরিসংখ্যানের দিক থেকে সামঞ্জস্য যেমন রয়েছে, তেমনি অন্য একটি ব্যাপারেও মোদীর সঙ্গে ইন্দিরার একটি আবছা মিল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবং এই মিলটি বিদেশনীতিতে।
ইন্দিরা নানা অভ্যন্তরীণ কারণে একাত্তরের নির্বাচনে বিপুল জয়লাভ করেন; এমনকী, ভাঙা কংগ্রেসকে নিয়েই। ৫১৮টি আসনে তাঁর কংগ্রেস জেতে ৩৫২টি আসন। এবারের মতো সেবারেও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল একটি সম্মিলিত বিরোধীপক্ষ। যদিও তাঁরা ইন্দিরাকে হারাতে ব্যর্থ হন। তবে একাত্তরের মার্চের সেই নির্বাচন জেতার পরে সে বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানকে যুদ্ধে পর্যুদস্ত করে ইন্দিরা সরকার; পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীন হয়। ইন্দিরার তো বটেই, ভারতের বিদেশনীতির ইতিহাসে এমন ঘটনা অভূতপূর্ব এবং বিরোধীরাও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জয়গান করেন। জাতীয় স্বার্থে ইন্দিরার দুর্দান্ত সাফল্যের পরে সেদিন অন্য সুরে গাইবার কোনও পরিস্থিতিই ছিল না। পাকিস্তানকে দু'টুকরো করে একদিকে যেমন ইন্দিরা সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেছিলেন, তেমনই বিরোধীদের সমর্থন আদায় করে নিতেও সফল হয়েছিলেন। জাতীয়তাবাদী জিগির সেদিনের ভারতকেও স্পর্শ করেছিল, যদিও তা নির্বাচনের পরে।
ইন্দিরা ভোটে জিতে পাককে শিক্ষা দিয়েছিলেন, মোদী কি বালাকোটের ফসল ঘরে তুলবেন?
দু'হাজার উনিশে মোদীও খেললেন সেই একইরকম জাতীয়তাবাদী তাস। তবে নির্বাচনের পরে নয়, আগে। ভোট শুরুর মাস খানেক আগে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে জঙ্গি আক্রমণে প্রচুর ভারতীয় আধা-সেনা জওয়ান নিহত হওয়ার পরে পাকিস্তানের মাটিতে বিমানহানা চালানো হয়েছে বলে দাবি করল মোদীর ভারত। পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি তোলা হল। মাঝ আকাশে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের সঙ্গে লড়াই চলল। যদিও ঠিক কতজন জঙ্গি মারা গিয়েছে বা শিবির ধ্বংস হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক ও জলঘোলা চলেছে, কিন্তু দেশের আপামর জনগণের মনে মোদী প্রয়োজনীয় আবেদনটি করে ফেলেছিলেন এবং এবারের নির্বাচনের এক্সিট পোল যদি ঠিক কথা বলে থাকে, তবে একথা মানতেই হবে যে বালাকোট পর্বের মধ্যে দিয়ে জাতীয়তাবাদী জিগির তুলে মোদীও মাটি করলেন; যদিও ইন্দিরার মতো বিরোধীদের সেভাবে পাশে তিনি পাননি। কারণ হয়তো এবারের ঘটনাটি ঘটেছে নির্বাচনের আগে, পরে নয়।