গাড়ির ‘স্পেয়ার-পার্টস’-এর মণ্ডপে ট্রাফিক নিরাপত্তার বার্তা, দূষণরূপী অসুরবধ দেবী দুর্গার
'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ'। নিরাপদে গাড়ি চালান, জীবন বাঁচান। গড়ে তুলুন দূষণমুক্ত পৃথিবী। পরিবেশ রক্ষা ও ট্রাফিক নিরাপত্তার বার্তা দিতে গাড়ির 'স্পেয়ার-পার্টস'-এর মণ্ডপ এবার মহানগরের শারদ-বন্দনায় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। কলকাতার বুকে মাতৃবন্দনায় এই বিরল বিষয়-ভাবনায় স্বতন্ত্র হয়ে উঠল মল্লিক বাজার সমিতির পুজো মণ্ডপ।
কলকাতা পুলিশের অনুষ্ঠানে ট্রাফিক নিরাপত্তার বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তুলে ধরেছিলেন সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ স্লোগান। লাগু করেছিলেন হেলমেট বিধি। শহরের রাস্তার ইতিউতি তাকালেই দেখা যায় সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের স্লোগান। এবার মাতৃবন্দনার থিমেও ট্রাফিক নিরাপত্তার সেই বার্তা। আর ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি বাতিলের কোর্টের নিদান যে আর মানা হচ্ছে না, দেদার চলছে পুরনো যানবাহন, ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে- তাও তুলে ধরা হয়েছে এই মাতৃবন্দনার মণ্ডপসজ্জায়।
গাড়ির যন্ত্রপাতি দিয়ে আস্ত একটা মণ্ডপ। একেবারে তাক লাগানো বিষয়-ভাবনা। শিল্পীর হস্তনৈপূণ্যেও তা যে আরও অসাধারণ মানতেই হবে। মল্লিকবাজার ব্যবসায়ী সমিতির দুর্গাপুজোর মণ্ডপসজ্জায় গাড়ির যন্ত্রংশের ব্যবহার যে ভাবে করা হয়েছে, তাতে কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয় শিল্পীর। শুধু ট্রাফিক নিরাপত্তাই নয়, এই পুজো কমিটি তাদের বিষয় ভাবনায় তুলে ধরেছে পরিবেশ দূষণের বিষয়টিও। মা তাই বধ করছেন অসুররূপী দূষণকে।
অসুরদলনী
দুর্গা
এখানে
দূষণের
প্রতিরূপ
অসুরকে
নিকেশ
করে
সৃষ্টি
করছেন
নির্মল
দূষণমুক্ত
বিশ্বের।
সমিতির
সভাপতি
সুভাষ
জয়সওয়ালের
কথায়,
তাঁদের
থিম
এবার
'যানবাহন'।
ট্রাফিক
নিরাপত্তা
ও
পরিবেশ
দূষণ
রক্ষায়
তাঁরা
গাড়ির
যন্ত্রাংশ
দিয়ে
সাজিয়েছেন
গোটা
মণ্ডপ।
তাঁরা
যেমন
পুরনো
যানবাহন
বর্জনের
বার্তা
দিয়ে
দূষণমুক্তির
কথা
বলতে
চেয়েছেন,
তেমনি
চেয়েছেন
হেলমেট
ব্যবহার
বাধ্যতামূলক
সেই
বার্তা
দিতেও।
সে
জন্য
পুরনো
মোটর
সাইকেল,
রোবটের
সার্থক
সহাবস্থানে
বুঝিয়ে
দিতে
চেয়েছেন
হেলমেট
ব্যবহারের
প্রয়োজনীয়তা।
এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে আলোর কাজও। চার চাকার গাড়ির চালকের আসনে অধিষ্ঠিত বিশালাকরা অসুর। তিনি যেন পুরনো যানের সওয়ারি। সেই যান থেকে ব্যাপক মাত্রায় দূষণ ছড়াচ্ছে। তা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে সাইলেন্সর, সৃষ্টি করা হয়েছে কৃত্রিম ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ার ছেয়েছে পুরো মণ্ডপ। তখনই আবির্ভূতা হচ্ছেন দেবী দুর্গা। হাতে ত্রিশূল। তিনি অসুরদলনী। তাঁর হাতেই বধ হচ্ছেন দূষণ সৃষ্টিকারী ওই অসুর। আসলে পুজো উদ্যোক্তারা চেয়েছেন দূষণের নিপাত ঘটাতে। তাই অসুরকে দূষণের প্রতিরূপ দেখানো হয়েছে এখানে। দিন দিন দূষণের করাল ছায়া যেভাবে গ্রাস করছে শহরের পরিবেশকে, বিশেষ করে গাড়ির দূষণ তো মাত্রা ছাড়া।
সেই দূষণ থেকে শহরকে মুক্তি দিতে কিছু বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই মাতৃ আরাধনার মাধ্যমে। সেইসঙ্গে ট্রাফিক আইন মেনে চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধিও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে জানিয়েছেন এই পুজোর উদ্যোক্তারা। তারই কিঞ্চিৎ চেষ্টা করা হয়েছে এই উপস্থাপনার মাধ্যমে।মল্লিকবাজারের এই পুজোয় এবার প্রতিমা নিরূপণেও থাকছে চমক। ফাইবারের প্রতিমা থাকছে প্রদর্শনীর জন্য। তা আবার ঝুলন্ত। যথারীতি মৃন্ময়ী প্রতিমাই এখানে আরাধ্যা। চন্দননগরের আলোকসজ্জা থাকছে উদ্যোক্তাদের বার্তা দর্শনার্থীদের মননে তুলে ধরতে। মল্লার ঘোষের আবহ সঙ্গীতেও উঠে এসেছে সেই বার্তা।