মৃত্যু ঘিরে এ যেন সেলিব্রেশন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অমিতাভকে নিয়ে এ কোন হরি লুঠ
অমিতাভ মালিকের মৃত্যু নিয়ে সত্যি কি দরদ আছে সোশ্যাল মিডয়া ব্যবহারকারী একটা অংশের মানুষের? এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে।
কেউ কফিনবন্দি অমিতাভের দেহের সামনে নিচ্ছেন 'সেল্ফি'। কেউ আবার লিখছেন 'আহা','বাছা' জাতীয় শব্দ। সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে এটাই এখন ট্রেন্ড। যার নাম 'অমিতাভ মালিক মৃত্যুকাণ্ড'। অনেকে আবার আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে। অমিতাভের মৃত্যু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের ফল না অপেশাদারি হাতে বিমল গুরুং-এর সশস্ত্র বাহিনীকে মোকাবিলা করার পরিণাম?- এই নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের পর পোস্ট করছেন। তাতেও যেন থামছে না অমিতাভ-র মৃত্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার হইচই। কেউ কেউ আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন 'দেশের জন্য শুধু অমিতাভ নয় আরও অনেকেই শহিদ হয়েছেন। তাঁদেরও বউ-বাচ্চা আছে-কিন্তু তাঁদের জন্য কেউ চোখের জল ফেলছেন কি?' যাঁরা আবার একটা সময় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁদের মধ্যে কেউ প্রশ্ন করছেন, 'ডিএসপি পদমর্যাদার কোনও অফিসারের এই ধরনের অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত ছিল, সেখানে অমিতাভ-র মতো একজন জুনিয়র এসআই-কেন সামনে রাখা হল?'
বলতে গেলে অভিযান শুরুর আগে খোদ অমিতাভরা বিমল গুরুং-কে ধরতে এতটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছিলেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু, মধ্যমগ্রামের ছেলে তথা দার্জিলিং-এ পুলিশি ডিউটিতে মোতায়েন থাকা অমিতাভ মালিকে নিয়ে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই শুরু হয়েছে তাতে যতটা না দরদ ঝরে পড়ছে তার থেকে বেশি সামনে আসছে অন্য কোনও অ্যাঙ্গেল।
যেভাবে সামাজিক মাধ্যমকে মঞ্চ করে রাতারাতি কিছু লোক অমিতাভের মৃত্যুর নিয়ে এক-একরকম খবরের 'অ্যাঙ্গেল' বার করছেন, ঠিক তেমনি তাঁদের করা পোস্ট থেকেও বেরিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর সব অ্যাঙ্গেল। আর সেই সব 'অ্যাঙ্গেল'-এর চূলচেরা বিশ্লেষণ করলে প্রণেতাদের সদিচ্ছাতেও উঠতে পারে প্রশ্ন। অমিতাভকে নিয়ে করা এই সব পোস্টে পড়ছে অগুণিত লাইক। বইছে কমেন্টের বন্যা। এমনসব কীর্তিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মানুষগুলি অন্যের নজরে পড়তেই পারেন। তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অমিতাভ চর্চার পিছনে কি বেরিয়ে আসছে না নিজেকে জাহির করার ইচ্ছাটা?
কেউ কেউ আবার অমিতাভ এবং স্ত্রী বিউটি-র ছবি দিয়ে তৈরি করেছেন কোলাজ ভিডিও। তাতে আবার মুখ্য আকর্ষণ অমিতাভ-র স্ত্রী বিউটির বুকভাঙা কান্না। যা দেখিয়ে দিন কয়েক ধরে টিআরপি টেনে চলেছে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমগুলো। এদের মধ্যে কেউ তো আবার লজ্জা-নীতির মাথা খেয়ে হেডলাইন জুড়েই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বানিয়ে দিয়েছেন। সেই দেখাদেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলি কেউ আবার লিংক করে পোস্টও করছেন। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন জাতীয়তাবাদীমূলক ক্যাপশন। গরম শব্দ, চমকদার লাইন-- আর সেই দেখে গরম হচ্ছে মানুষ। আরও যেন 'ভাইরাল' (ডিজিটাল মিডিয়ায় একটি প্রচলিত পরিভাষা) হয়ে উঠছে 'অমিতাভ মৃত্যুকাণ্ড'। 'স্নো বোলিং' নামে ইংরাজীতে একটি প্রচলিত শব্দ আছে। মানে একটা ছোট তুষারের গোলা গড়াতে গড়াতে আরও কিছু তুষারকে পেচিয়ে নিয়ে একটা বড় আকার ধারণ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অমিতাভ-র মৃত্যু নিয়ে চর্চা যেন এখন এই 'স্নো বোলিং'-এর আকার ধারণ করেছে। হয়তো এই চর্চা থেমে যেতেও খুব বেশি দিন লাগবে না। তখন অমিতাভের জায়গায় স্থান পাবে অন্য কোনও বিষয়।
সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষে মানুষে বিষয় আধারকৃত চর্চা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু, সেই চর্চা যখন মানব দরদি হওয়ার ভেক ধারণ করে তখন তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠাও যুক্তিযুক্ত। তাই, এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় অমিতাভ চর্চায় মেতে থাকাদের অবস্থাটা অনেকটা 'বিড়াল তপস্বী'।