বিভ্রান্তি, স্ট্রোক ও স্মৃতিশক্তি লোপ, কিভাবে করোনা ভাইরাস প্রভাব ফেলছে মস্তিষ্কে
করোনা ভাইরাসের ফলে শরীরের একাধিক অঙ্গের যে ক্ষতি হয় তা আগেই জানিয়েছিলেন গবেষকরা। এবার বেশ কিছু নতুন উপসর্গের খোঁজ মিলল। জানা গিয়েছে, করোনা ভাইরাসে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীরা কিছুদিন পর থেকেই গন্ধ পাচ্ছেন না, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন এবং আচরণগত পরিবর্তন হচ্ছে। এ ধরনের কিছু স্নায়ুতন্ত্রের পরিবর্তন হওয়া উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কোভিড রোগীদের মধ্যে।
স্নায়বিক উপসর্গের সৃষ্টি হয়
বেশ কিছু রোগী যাঁরা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁরা প্রলাপ বকছিলেন বলে অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন, চিনতে পারছেন না ও উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। স্ট্রোক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার মতো কিছু গুরুতর প্রভাব কোভিডে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর মধ্যে দেখা গিয়েছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এমডি রবার্ট স্টিভেনসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে অর্ধেক রোগীর মধ্যে স্নায়বিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে। যদিও বিজ্ঞানীরা এটা বোঝার চেষ্টা করছে যে এই ভাইরাসের কারণে মস্তিষ্ক কেন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভিন্ন ধরনের মস্তিষ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি
জন হপকিন্সের আর্টিক্যাল অনুযায়ী রর্বাট স্টিভেনস এই বিষয়ের ওপর গবেষণা করছেন এমন বিজ্ঞানীদের কিছু তত্ত্ব সামনে এনেছেন। এই আর্টিক্যাল অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন কোভিড-১৯ কেস গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে ভিন্ন ধরনের মস্তিষ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তি, চেতনা হ্রাস, খিঁচুনি, স্ট্রোক, গন্ধ ও স্বাদ হারিয়ে ফেলা, মাথা ব্যাথা, দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা ও আচরণগত পরিবর্তন। তবে কিছু পেরিফেরাল স্নায়ুর সমস্যা কিছু কোভিড রোগীকে পক্ষাঘাত ও শ্বাস প্রশ্বাস জনিত সমস্যায় ফেলতে পারে। একই ধরনের উপসর্গ দেখা গিয়েছিল সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রে ও মধ্যপ্রাচ্যের মার্স ভাইরাস জনিত কারণেও।
করোনা ভাইরাস কিভাবে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে
জন হপকিন্সের আর্টিক্যালে চারভাবে করোনা ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে বলে জানানো হয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এটা উঠে এসেছে যে কোভিড-১৯ মানুষের মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলে।
❑ গুরুতর সংক্রমণ
প্রথম সম্ভাব্য উপায় হল ভাইরাসের হয়ত মস্তিষ্কে প্রবেশের সক্ষমতা রয়েছে এবং যার কারণে মস্তিষ্কে আচমকা গুরুতর সংক্রমণ হয়। এখানে আরও বলা হয়েছে যে চিন ও জাপানের কয়েকটি মামলায় মেরুদণ্ডের তরলে ভাইরাসের জনগত উপাদান পাওয়া গিয়েছে এবং ফ্লোরিডার একটি করোনা কেসে মস্তিষ্কের কোষগুলিতে ভাইরাল কণা পাওয়া গিয়েছে। এটা হয়ত রক্তপ্রবাহের মধ্যে বা স্নায়ু শেষে প্রবেশ করে, যার জন্য এ ধরনের প্রভাব দেখা দেয়।
আর্টিক্যাল অনুযায়ী গন্ধ চলে যাওয়ার কারণ কিছু কোভড রোগী আভাস দিয়েছে যে ভাইরাস ঘ্রাণ বাল্বের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করে যা নাকের ওপরে ডানদিকে থাকে যা গন্ধের বিষয়ে মস্তিষ্ককে জানান দেয়।
❑ রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রভাব পড়ে রোগ প্রতিরোধের ওপর, যা একটি প্রদাহজনক ম্যালাডাপটিভ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা এই রোগের জন্য টিস্যু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে।
শরীরের পরিবর্তন
করোনা ভাইরাসের জন্য শরীরের যে পরিবর্তন হয়, যেগুলি হল অত্যাধিক জ্বর বা অক্সিজেনের ঘাটতি বা একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, তার জন্য দায়ি মস্তিষ্কের কাজ বন্ধ হওয়া। এমনকী কিছু কিছু কোভিড-১৯ রোগীরা কোমাতেও চলে গিয়েছেন।
❑ স্ট্রোক
কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে অসুস্থতার সঙ্গে রক্ত-জমাট বাঁধার মতো পদ্ধতি খুবই অস্বাভাবিক। অন্যান্য রোগীদের তুলনায় করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার মতো ঘটনা বেশি হচ্ছে। জমাট বাঁধা শরীরের ভেতর বা ফুসফুসের শিরাগুলিতে হতে পারে, যেখানে তারা রক্তের প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে। রক্ত জমাট বাধার জন্য বা মস্তিষ্কের দিকে যাওয়ার ফলে স্ট্রোক হতে পারে।
১২৫টি কোভিড নমুনা নিয়ে গবেষণা
দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত সমীক্ষায় উঠে এসেছে, গবেষকরা ব্রিটেনের ১২৫ জন কোভিড রোগীর নমুনার ওপর পরীক্ষা করেছেন, যাঁদের স্নায়ুবিক বা মানসিক প্রভাব পড়েছে। যার মধ্যে ৬২ শতাংশ কোভিড নমুনার মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার ফলে স্ট্রোক, প্রলাপ বকা, বিভ্রান্তি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে ফোলাভাব দেখা গিয়েছে।