ধেয়ে আসছে মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও ১৫ গুণ বিশালাকার ‘দৈত্য’, অভিমুখ পৃথিবী
ধেয়ে আসছে মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও ১৫ গুণ বিশালাকার ‘দৈত্য’, অভিমুখ পৃথিবী
মাউন্ট এভারেস্টের ১৫ গুণ বড় 'দৈত্য' ধেয়ে আসছে পৃথিবী অভিমুখে। একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্ল্যকর তথ্য। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওটি আসলে একটি ধূমকেতু। নাম বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন। ওই ধূমকেতুর পৃষ্ঠের ব্যাস প্রায় ১৩৭ কিলোমিটার রয়েছে। দৈর্ঘ্যে তা মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও ১৫ গুণ বেশি লম্বা।
মাউন্ট এভারেস্টের ১৫ গুণ দীর্ঘ ধূমকেতু
এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সমস্ত ধূমকেতুর থেকে এই দৈত্যাকার ধূমকেতু বড়। তা আমাদের সৌরজগতের মধ্য দিয়ে ভয়ঙ্কর গতিতে দৌড়াচ্ছে। ফ্রান্স এবং স্পেনের গবেষকদের পরিচালিত গবেষণাটি অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। সেখানেই উল্লেখ করা হয়ছে। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮৮৪৮.৮৬ মিটার বা প্রায় ৮.৮৫ কিলোমিটার। সেই তুলনায় ১৫ গুণেরও বেশি দৈর্ঘ্য ওই ধূমকেতুর।
ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটানো ধূমকেতুর থেকে ৬ গুণ
ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ধূমকেতুটি অসম্ভব বড়। যে ধূমকেতুর দ্বারা ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটেছিল, তার থেকেও প্রায় ছয় গুণ বড় এই ধূমকেতু বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন। তবে বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন পৃথিবীর এক বিলিয়ন মাইলের মধ্যে আসবে না বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ধূমকেতুটি আবিষ্কৃত হয়েছিল যে অনুসন্ধানের ফলে
ডার্ক এনার্জি সার্ভেতে বাইরের সৌরজগতের বস্তুর অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ধূমকেতুটি আবিষ্কৃত হয়েছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন হল দূরবর্তী ধূমকেতুগুলির বিশিষ্ট প্রত্নপ্রকৃতি, যার কার্যকলাপ হাইপারভোলাটাইলস (কার্বন মনোক্সাইড এবং মিথেনের মতো যৌগ) দ্বারা চালিত হয়, গবেষণা অনুসারে।
উর্ট ক্লাউডকে অনেক ধূমকেতুর উৎপত্তি বলা হয়
এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় ওর্ট ক্লাউড অবজেক্ট বা ধূমকেতু হেল-বপের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বড়। ওর্ট ক্লাউড হল সৌরজগতের অন্য সব কিছুর চেয়ে অনেক দূরে বরফের বস্তু। এটি প্লুটো এবং কুইপার বেল্টের সবথেকে দূরবর্তী প্রান্তের বাইরে অবস্থিত বলে নাসার পক্ষ থেকে উর্ট ক্লাউডকে অনেক ধূমকেতুর উৎপত্তি বলে মনে করা হয়।
সবথেকে উজ্জ্বল ধূমকেতু হেল বপ
ধূমকেতু হেল বপ ছিল একটি অস্বাভাবিক উজ্জ্বল ধূমকেতু, যেটি ১৯৯৭ সালে পৃথিবীর কাছাকাছি এসেছিল এবং নাসা অনুসারে রেকর্ড করা ইতিহাসে সৌরজগতের অভ্যন্তরে পৌঁছনো সবথেকে উজ্জ্বল ধূমকেতুগুলির মধ্যে একটি। ১৯৯৭ সালের ওই ধূমকেতু হেল বপ ছিল একটি রেকর্ড-ব্রেকিং ধূমকেতু। তা হ্যালির ধূমকেতুর থেকে হাজার গুণ বেশি উজ্জ্বল। হেল-বপ একটি বিশেষ ধূমকেতু ছিল। কারণ আর্থস্কাই অনুসারে, বৃহস্পতির কক্ষপথের বাইরে থাকাকালীন ধূমকেতুগুলি সাধারণত এত উজ্জ্বলভাবে জ্বলে না।
এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ধূমকেতু
বার্নারডিনেলি-বার্নস্টেইন পেরিহেলিয়নের কাছে যাবে এবং তা অতিক্রম করবে। পেরিহেলিয়ন একটি প্রদক্ষিণকারী মহাজাগতিক বস্তু যা সূর্যের সবচেয়ে কাছের বিন্দু। এই পেরিহিলন থেকে ধূলিকণা এবং গ্যাস নির্গমনের নিরীক্ষণ, ধূমকেতুর কার্যকলাপের ধরণ নিয়ে গবেষণা করা আদর্শ। রেজিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সামান্থা ললারকে উদ্ধৃত করে নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, ধূমকেতুটি বিশাল এবং এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ধূমকেতু।
কখন ধূমকেতু প্রথম দেখা যায়?
নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে মহাজগতে গ্যালাক্সিগুলির সার্ভের সময় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অসাবধানতাবশত ধূমকেতুটি প্রথম দেখেছিলেন। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০টি জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট বা সূর্য থেকে প্রায় তিন বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে ২০২১-এর ৪ অগাস্ট তা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।
ধূমকেতুর দৈর্ঘ্য ও দূরত্ব পরিমাপক
ধূমকেতুটি ২০৩১ সালে প্রায় ১১টি জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট বা ১.৬২ বিলিয়ন কিলোমিটারের একটি পেরিহিলিয়নের দিকে যাবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ধূমকেতুর 'তাপীয় প্রবাহ' ধূমকেতুর পৃষ্ঠের সমতুল্য পৃষ্ঠ ব্যাস প্রদান করে। তারপরে, অ্যালবেডো, যা একটি জ্যোতির্বিদ্যাগত বস্তুর পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত আলোর অনুপাত, ব্যাস এবং এইচ মাত্রার মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থেকে নির্ধারিত হয়। ওই ভিজ্যুয়াল ম্যাগনিটিউড একজন পর্যবেক্ষক রেকর্ড করবে, যদি গ্রহাণুটিকে একটি জ্যোতির্বিদ্যায় স্থাপন করা হয়। সূর্য থেকে একক দূরে এবং শূন্য পর্যায় কোণে তা রেকর্ড হবে।
বিধ্বংসী বিস্ফোরণ হয়েছিল আমেরিকায়
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ সিনসিনাটি-এর গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর কাছাকাছি একটি ধূমকেতুর ফলে হোপওয়েল সংস্কৃতি, একটি প্রাচীন প্রাক-কলম্বিয়ান নেটিভ আমেরিকান সভ্যতার দ্রুত পতন ঘটতে পারে। ধূমকেতু থেকে পতিত ধ্বংসাবশেষ উত্তর আমেরিকায় ১৫০০ বছর আগে একটি বিধ্বংসী বিস্ফোরণ তৈরি করেছিল।
প্রতীকী ছবি