বাঙালি হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, তবু মননে পশিল কী শ্রাবণ!
এই দিনটার জন্যই তো এক বছরের অপেক্ষা। ঐতিহ্যমণ্ডিত কাঁচঘর, ঘণ্টাতলা, সিংহ সদন, আম্রকুঞ্জে আবারও বেজে উঠলেন গুরুদেব। শ্রাবণে পশিল প্রাণ, স্নিগ্ধ হল শান্তিনিকেতন। বাইশে শ্রাবণে পরিপূর্ণ হল বাঙালি।
এই দিনটার জন্যই তো এক বছরের অপেক্ষা। ঐতিহ্যমণ্ডিত কাঁচঘর, ঘণ্টাতলা, সিংহ সদন, আম্রকুঞ্জে আবারও বেজে উঠলেন গুরুদেব। বাইশে শ্রাবণে পশিল প্রাণ, স্নিগ্ধ হল শান্তিনিকেতন। পরিপূর্ণ হল বাঙালি। তবু মননে পশিলেন কী রবীন্দ্রনাথ!
অনেকের মতে, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে গড়া শান্তিনিকেতনে সেই পুরনো জৌলুস নাকি আর নেই। সেই মাটির টান, হৃদয়ের গান, প্রাণখোলা হাসি, বুক ভাঙা অভিমানে ভাগ বসিয়েছে মেকি কৃত্রিমতা। অচেনা মানুষের থিক থিকে ভিড়ে ঢাকা ভুবনডাঙা যেন বাণিজ্যালয়। ধূলো, বালি, গাড়ির ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়া দায়। জলশূণ্য কোপাই, রুক্ষ খোয়াই, হাই রাইজ, রাজনীতি-তুলকালামে মন পাখিরাও হয়েছে পরিয়ায়ী।
আগুনের পরশমণি
হয়তো অভিযোগ সত্যি। সময়ের খেয়ালে হয়তো সত্যিই ঐতিহ্য হারিয়েছে বিশ্বভারতী। প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি হয়তো দূরবীক্ষণ যন্ত্রেও ধরা পড়ে না। সেটাও যেমন সত্যি, তেমন এটাও ঠিক যে অন্তত বাইশে শ্রাবণে কাঁচঘরে এখনও শোনা যায় প্রার্থনা। বৈদিক মন্ত্রপাঠে অংশ নেওয়া আবাসিকদের মনপ্রাণ জুড়ে ভেসে থাকেন গুরুদেব। শ্রাবণের গানে মুখরিত হয় দিগ্বিদিক। বৃক্ষরোপনে অংশ নেওয়া রবি অনুরাগীদের চোখের কোণে চিক চিক করে ওঠে আগুনের পরশমণি। হলকর্ষণ, বসন্ত উৎসব সেই আনন্দেরই বার্তাবহ।
প্রভাত পাখির গান
রবি ঠাকুর নিয়ে বাঙালির কতই না জাঁক। সমালোচনা তো একদিকে, তা বলে ভোরের ট্রেনে কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন না পৌঁছলে কী সৃষ্টিসুখ অনুভব করা যায়! কেউ আবার খরচ বাঁচাতে জোড়াসাঁকো, রবীন্দ্রভারতীতে খুঁজে পান প্রভাত পাখির গান। আবেগে ভাঁটা যে বাঙালি হৃদয়ে পশিবে না। রবি ঠাকুর যে শুধু আমাদেরই। এমন মনে হওয়াটা কিন্তু অভ্যাসে পরিণত।
রবীন্দ্রনাথ কার
সত্যিই কী তাই! একবিংশ শতাব্দীর অস্থির মধ্য গগণে রবীন্দ্রনাথ কী শুধুই মুখ ঢেকে আছেন শিশু পাঠ্য, কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাসে! গুরু স্মৃতির সব শিকড় আঁকড়ে ধরে রাখার দায় কী কেবল বিশ্বভারতী, রবীন্দ্র ভারতীর! অথচ তারা সামান্যতম ভুল করলেই খারাপ! বিশ্বকবিকে এতটাও সঙ্কুচিত করা কী উচিত কাজ। যদি তাই হয়, তবে বাকিদের দোষ ধরে লাভ কী! কে কী করলেন বা বললেন, তা ভেবে নিজেকে বিচলিত করারই বা কী মানে!
বাড়িতে গীতবিতান, সঞ্চয়িতা তো থাকবেই। মাঝে সাঝে তা উল্টে-পাল্টে দেখে নেওয়াও চলতে থাকবে অবিরাম। গুন গুন করে ধরা আকাশ ভরা সূর্য তারা ঘরের চার দেওয়ালে আটকে রাখা কী বোকামি নয়। সে গান মননে না পশিলে কী বা সুখ!
কোথায় তিনি
বোঝা প্রয়োজন, ঘর নয়, চলার পথে লুকিয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। চার দেওয়ালের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে মানুষে মানুষে লুকিয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। রাগ-দুঃখ-ভালোবাসা-হাসি-কান্না তাঁকে ছাড়া কী মানায়! সমাজের যেখানে অসুখ, সেখানে লুকিয়ে রবীন্দ্রনাথ। দুই বেলা অনাহারে ঘুমিয়ে আছেন তিনি। জন্ম-মৃত্যুতে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ। হিংসা-শান্তিতে নিহীত আছেন তিনিই। তাই তাঁকে পেতে হয় অন্তরে। অনুভব করতে হয় মননে। সৃষ্টিসুখ তো একেই বলে।
বিশ্বজনীন
বিশ্ব মানবতার এক অনন্য শব্দ কোষের নাম রবীন্দ্রনাথ। তিনি যে এখনও কতটা প্রাসঙ্গিক, তা বলে বোঝানোর ধৃষ্টতা করে কী লাভ। শুধু অনুভূত হয়, রবীন্দ্রনাথকে মননে ঠাই দেওয়ার মধ্যেই রয়েছে বাঙালি জাতির মোক্ষলাভ। সেই শপথের সাক্ষী থাকুক বাইশে শ্রাবণ।
বন্যা থেকে শুরু করে কাশ্মীরের পরিস্থিতি, একনজরে দিনের সেরা ছবি