হার না মানা লড়াইয়ের নাম যুবরাজ সিং, কিছু পরিসংখ্যান
বারবার হেরে গিয়েও হার না মানা লড়াইয়ের নাম যুবরাজ সিং। একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ৫০ ওভার ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন।
বারবার হেরে গিয়েও হার না মানা লড়াইয়ের নাম যুবরাজ সিং। একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ৫০ ওভার ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন।
১৯৯৭ সালে রনজি ট্রফিতে ওড়িশার বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল যুবরাজ সিংয়ের। কিন্তু ওপেন করতে নেমে শূণ্য রানে ফিরে গেছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।
১৯৯৯ সালে প্রথম ব্রেক-থ্রু পেয়েছিলেন যুবরাজ। অনুর্ধ্ব ১৯ কোচবিহার ট্রফিতে বিহারের বিরুদ্ধে এক ইনিংসে ৩৫৮ রান বানিয়েছিলেন যুবি। যা প্রথম ইনিংসে তোলা বিহারের দলগত রানের থেকে এক রান বেশি।
ওই ইনিংসের সৌজন্যে সেবার শ্রীলঙ্কাগামী অনুর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলে জায়গা পেয়েছিলেন যুবরাজ। সিরিজের তৃতীয় ওয়ান ডে ম্যাচে ৫৫ বলে বিধ্বংসী ৮৯ রান করেছিলেন যুবি। ১৯৯৯-২০০০ মরশুমের রনজি ট্রফিতে হরিয়ানার বিরুদ্ধে ১৪৯ রান বানিয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ২০০০ সালের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে মহম্মদ কাইফ নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বলে-ব্যাটে কামাল দেখানো যুবরাজ সেই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপরেই ভারতের সিনিয়র দলের দরজা খুলে যায় তাঁর সামনে।
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাওয়া ভারতীয় দলে ডাক পান যুবরাজ সিং। কেনিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ব্যাট না পেলেও, ৪ ওভার বল করে ১৬ রান দিয়েছিলেন যুবি। তাঁর জীবনের মোড় ঘোরানো ৮০ বলে ৮৪ রানের ইনিংস আসে ভয়ঙ্কর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪১ রান করার পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও নিয়েছিলেন যুবরাজ সিং।
কোকা-কোলা কাপ
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর দুটি সিরিজে লাগাতার ব্যর্থতার জেরে ভারতীয় ক্রিকেট দল থেকে বাদ পড়েন যুবরাজ। ২০০১-এ শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত কোকা-কোলা কাপে জাতীয় দলে কামব্যাক করেন যুবি। গোটা সিরিজেও দাহ কাটতে না পারলেও পঞ্চম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অপরাজিত ৯৮ রানের ইনিংস খেলে নিজের পা কিছুটা শক্ত করেছিলেন ভারতের বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ওই সিরিজে ৮টি উইকেটও নিয়েছিলেন যুবরাজ। এরপর ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়ার মধ্যে হওয়া ত্রিদেশীয় একদিনের সিরিজের ৬টি ম্যাচে মাত্র ৬৯ রান করা যুবরাজ আবারও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন।
আবারও ফিরে আসা
এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে রান তোলার মরিয়া চেষ্টা করেন যুবরাজ। রনজি ট্রফিতে ব্যর্থ হলেও দলীপ ট্রফিতে নর্থ জোনের হয়ে ২০৯ রানের ইনিংস খেলে আবারও নির্বাচকদের নজরে আসেন যুবি। ঘরের মাঠে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের মাঝপথেই তাঁকে জাতীয় দলে ডেকে পাঠানো হয়। ওই সিরিজের দুটি ম্যাচে ৮০ ও ৭৫ রান করার পর যুবরাজের ইনিংস ট্রাকে ফেরে।
২০০২ ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি
ইংল্যান্ডের ওই ঐতিহাসিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে মহম্মদ কাইফের সঙ্গে যুবরাজের ম্যাচ উইনিং জুটি এখনও ক্রিকেট বিশ্বের চর্চার বিষয়। সেই ম্যাচে ৬৯ রান করেছিলেন যুবি। টুর্নামেন্ট জুড়ে ব্যাটে, বলে, ফিল্ডিংয়ে কামাল দেখিয়ে ভারতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করেছিলেন যুবরাজ সিং। এরপরও যুবির ব্যাটিং গ্রাফ আপ-ডাউন করতে থাকে।
২০০৩ বিশ্বকাপ
দক্ষিণ আফ্রিকাগামী ১৫ জনের দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। ওই টুর্নামেন্টেও যুবরাজের ব্যাট থেকে মিশ্র পারফরম্যান্স বেরোয়। তবু হার মানতে রাজি ছিলেন না যুবি। এই বছরই ঢাকাতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জীবনের প্রথম শতরান (১০২) পান পাঞ্জাব তনয়। এরপর ধীরে ধীরে ভারতীয় দলে নিয়মিত সদস্য হয়ে যান যুবি। ২০০৪, ২০০৫ সালেও তাঁর দারুণ ফর্ম অব্যাহত থাকে।
২০০৬-র চোট
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ শুরুর আগে লিগামেন্টে চোট পেয়ে জাতীয় দল থেকে ছিটকে যান যুবরাজ। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক দু-মাস আগে তিনি চোট সারিয়ে ফিরে আসেন এবং ভারতের হয়ে পারফরম্যান্স করে দেখান। এরপর তাঁকে ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী বিশ্বকাপ দলে রাখা হয়।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপগামী ভারতীয় দলে যুবরাজ সিংকে সহ-অধিনায়ক বাছা হয়। ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডকে ৬ বলে ছয়টি ৬ মারা যুবিকে ওই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় বাছা হয়। ইতিমধ্যে ভারতের হয়ে টেস্টেও সাফল্য পেতে শুরু করেন যুবরাজ সিং।
সোনালী ২০১১
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞকা বলে ২০১১ বিশ্বকাপেই জীবনের সেরা ফর্মে ছিলেন যুবরাজ সিং। তাঁর একটি সেঞ্চুরি, চারটি হাফ সেঞ্চুরি সহ ৩৬২ রান ও ১৫ উইকেট ভারতকে সেবার বিশ্বকাপ জেতাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন যুবরাজ।
ক্যান্সার
২০১১-র বিশ্বকাপ খেলতে খেলতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন যুবি। তাঁর ব্রেন ক্যান্সার ধরা পড়ে। এক বছর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পর ২০১২ সালে মনের জোড়ে আবারও জাতীয় দলে কামব্যাক করেন যুবি। তবে এরপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে তাঁর ফর্ম পড়তে থাকে।
পরিসংখ্যান
কেরিয়ারে ৩০৪টি ওয়ান ডে ম্যাচে ৩৬.৫৫-গড়ে ৮৭০১ রান করেছেন যুবরাজ। ১৪টি শতরান রয়েছে তাঁর। ৪০টি টেস্ট ম্যাচে ৩৩.৯২-র গড়ে ১৯০০ রান করেছেন যুবি। টেস্টে তাঁর তিনটি শতরানও রয়েছে।