সৌরভ কি সিএবি সভাপতি হচ্ছেন? মমতার ভূমিকা নিয়ে জোর জল্পনা
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে ইনিংস শেষ করতে চলেছেন ১৮ অক্টোবর। বোর্ডে যেভাবে হাওয়া ঘুরেছে তাতে আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে ফের যে পরিস্থিতি বদলাবে না সেটাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সৌরভ যখন শূন্য থেকে শুরু করা কিংবা আরও বড় দায়িত্ব পালনের কথা নিজেই বলছেন। ফলে ক্রিকেট মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা জল্পনা।
কঠিন পিচে সৌরভ
সিএবিতে বার্ষিক সাধারণ সভা ৩১ অক্টোবর। মনোনয়ন জমা দেওয়ার যে সময়সীমা রয়েছে তাতে তার আগেই হয়ে যাবে বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভা। বিভিন্ন পদাধিকারীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। আইসিসিতে সৌরভকে পাঠানো হবে কিনা তা স্পষ্ট হতে পারে বোর্ডের এজিএমে বা তার আগেই। ফলে ১৮ অক্টোবরের বৈঠকে সভাপতিত্ব করার আগে সৌরভ আর মুখ খুলবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। গতকালও এক অনুষ্ঠানে তিনি এক আলাপচারিতা চলাকালীন ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে তাঁর সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, কেউই সারা জীবন খেলেন না, কেউ প্রশাসক হিসেবেও সারা জীবন থাকতে পারেন না। কোনও কোনও সময় প্রত্যাখ্যাতও হতে হয়। তবে নিজের উপর আস্থা রেখে লক্ষ্যপূরণের দিকে এগিয়ে গেলে আরও বড় দায়িত্বও যে পালন করা যায় সে কথা উল্লেখ করে তিনি মহারাজকীয় প্রত্যাবর্তনেরই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তা সে পিচ যত কঠিনই হোক না কেন।
লড়তে পারেন সিএবি নির্বাচনে
সৌরভ গতকাল সিএবিতে গিয়েছিলেন। সেখানে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে তাঁর সিএবি নির্বাচনে লড়তে কোনও বাধা নেই। সূত্রের খবর, তিনি এমন বার্তাও দিয়েছেন যে, বিরোধী শিবির নির্বাচনে লড়লে তিনি নিজে ময়দানে নামবেন। অর্থাৎ সভাপতি পদেই তিনি লড়বেন। বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে, বিশ্বরূপ দে ফেসবুক ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সৌরভের ভূমিকার সমালোচনা করায়। সিএবিতে সৌরভের বিরোধী শিবিরের সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্বরূপ দে, গৌতম দাশগুপ্তর-র সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের এক ঘনিষ্ঠ বৈঠক করেছেন। সিএবির পরবর্তী সভাপতি হিসেবে সৌরভের দাদা স্নেহাশিসই এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের দুই হেভিওয়েট মন্ত্রীর নাম নিয়েও জল্পনা চলছে। সেক্ষেত্রে সৌরভ সভাপতি হতে চাইলে এবং আলোচনার ভিত্তিতে সর্বজনগ্রাহ্য প্যানেল তৈরি হলে ভোটাভুটি এড়ানোও যেতে পারে।
রাজ্য সংস্থার সভাপতি পদে কামব্যাক?
বিসিসিআইয়ের পর আইসিসির দরজা সৌরভের জন্য যদি আপাতত বন্ধ হয়ে যায় তাহলে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে ইনিংসে যতিচিহ্ন পড়বে। কিন্তু সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি সিএবির শীর্ষপদে বসে ক্রিকেট প্রশাসকের ভূমিকা চালিয়ে যেতে পারেন। আগামী বছর দেশের মাটিতে বিশ্বকাপও রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্নেহাশিসের সভাপতি হওয়া হবে না। কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন সৌরভের কাকা দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। তিনিও আর নাও ওই পদে থাকতে পারেন। কেন না, সৌরভ সভাপতি, স্নেহাশিস সচিব, দেবাশিস কোষাধ্যক্ষ থাকলে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারকে বিরোধী শিবিরের নিশানার মুখে পড়তে হতে পারে। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এখনও সিএবি নির্বাচনে সরাসরি প্রভাব খাটানো হয়নি। তবে রাজ্যের শাসক দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিককে সচিব করার তোড়জোড় চলছে। তিনি আবার বিরোধী শিবিরের সঙ্গেও সদ্ভাব বজায় রেখে চলেছেন। এখন সৌরভ ওই সাংবাদিককে সচিব পদে মেনে নিলেই পরিস্থিতি সহজ হয়ে যাবে।
মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপের দিকে নজর
সৌরভকে বিসিসিআই থেকে সরে যেতে হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে, বিজেপিকে নিশানা করে এভাবেই আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে রাজ্যেও যে ক্রিকেট প্রশাসনে রাজনীতির ছায়া নেই সে কথা কেউ জোর গলায় দাবি করতে পারবেন না। সে বাম জমানায় জগমোহন ডালমিয়াকে রুখতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পছন্দের প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে নির্বাচনে দাঁড় করানো হোক ডালমিয়ার প্রয়াণের পরই নবান্ন থেকে সিএবি কারা চালাবেন তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করে দেওয়া। উদাহরণ রয়েছেই। বিসিসিআইয়ে গৈরিকীকরণের অভিযোগ তুলে তৃণমূল যেখানে সৌরভের প্রতি অবিচারের অভিযোগ তুলছে, সেখানে সিএবিতে রাজ্যের শাসক দল কী পদক্ষেপ করে সেটা দেখার। বিশ্বরূপ দে ফেসবুকে সৌরভের সমালোচনা করায় তার পাল্টা দিয়েছেন সৌরভ ঘনিষ্ঠরা। বিশ্বরূপও নিজের বক্তব্যে অনড়। তিনি আবার কলকাতা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর। কিন্তু সৌরভের দিকে যেখানে সহানুভূতির হাওয়া সেখানে তিনি সিএবি প্রশাসনে আসতে চাইলে বিরোধী শিবিরকে যে কার্যত মাঠের বাইরে চলে যেতে হবে সেটাও নিশ্চিত।