IPL 2022: 'বাংলা-বিদ্বেষী' কেকেআরকে সমর্থন না করার আহ্বান দিন্দার, মনোজ দল গঠনে ক্রিকেটীয় যুক্তি পাচ্ছেন না
মনোজ তিওয়ারি ও অশোক দিন্দা। একজন বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী, অপরজন রাজ্যের বিরোধী দলের বিধায়ক। ক্রিকেট মাঠে দুজনেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাকে সাফল্য এনে দিয়েছেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া বাংলার দুই ক্রিকেট-যোদ্ধা। দিন্দা ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন, মনোজ এখনও খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দুজনেই ভালোভাবে নেননি কেকেআরের বাংলাকে ব্রাত্য করে রাখার ধারাবাহিকতা এবারও অব্যাহত থাকায়।
দিন্দার বাউন্সার
আইপিএলে মনোজ ও দিন্দা কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সি পরলেও দুজনেরই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। বল হাতে পিচে যেমন আগুন ঝরানোর নজির দিন্দা মাঠে রেখেছেন বহুবার, বসন্তের তপ্ত দুপুরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রসঙ্গ উঠতেই দিন্দার বিস্ফোরণ! বরাবর সোজা কথা সোজাভাবে বলা দিন্দা বললেন, আমি চাই এবার নতুন কোনও দলের হাতে উঠুক আইপিএল। আইপিএল শুরুর আগে বলা যায় না কোন দল ফেভারিট। তবে চাইব, আমাদের কলকাতার মালিকের দল, যাঁর পুনে দলের হয়ে আমি নিজেও খেলেছি সেই লখনউ সুপার জায়ান্টসকে আমি সমর্থন করব। কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোনও চান্সই নেই। নতুন ক্যাপ্টেন এনেও কিস্যু হবে না!
|
নাইটদের বয়কটের ডাক
দিন্দা আরও বলেন, আমি তো বটেই, সকলের কাছে আর্জি রাখব আইপিএলে ১০টি দলের মধ্যে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে একেবারেই সমর্থন করবেন না। দলের নামেই শুধু কলকাতা রয়েছে, বাংলার ক্রিকেটারদের ওরা কী চোখে দেখে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। আমাদেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে। নিলামে বাংলার কোনও ক্রিকেটারকে নিতে ওরা আগ্রহ দেখায় না! আমি একজন ক্রিকেটার হিসেবে বলতে পারি, অন্য রাজ্যের যাঁদের দলে নেওয়া হয় তাঁদের থেকে অনেক বেশি দক্ষতাসম্পন্ন বাংলার ক্রিকেটাররা। তাছাড়া অন্য দলও বাংলার ক্রিকেটারদের নিচ্ছে। এবারও বাংলার যে ক্রিকেটাররা আইপিএলে দল পেয়েছেন আমার পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে সুযোগ পেলে তাঁরা দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরবেন। তাতেই প্রমাণিত হবে, ক্রিকেটীয় কারণ নয়, বাংলাকে বঞ্চনা করতেই ওদের যাবতীয় স্ট্র্যাটেজি। তাই ওরা যদি বাংলাকে ব্রাত্য করে রাখে, তাহলে ওদেরও বাংলা থেকে সমর্থন না করাই উচিত।
চ্যালেঞ্জ নিক কেকেআর
দিন্দার মতো ততটা আগ্রাসী নন বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি। কেকেআর বা লখনউও মনোজকে এবারের নিলাম থেকে নেয়নি। তার জন্য অবশ্য মনোজের কোনও মন খারাপের বিষয় নেই। তাঁর কথায়, হয়তো ভবিষ্যতের কথা ভেবে দল গঠনের লক্ষ্যেই আমার নাম বিবেচনায় আসেনি বয়সের কারণে। তবে ফিটনেস ধরে রাখতে পারলে এর পরেও আমি আইপিএল নিলামে নাম লেখাব। কেকেআরে ব্রাত্য বাংলা প্রসঙ্গে মনোজ বলেন, এটা বেসরকারি ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সিদ্ধান্ত কাদের নেবে বা নেবে না। তবে বাংলার প্লেয়ারদের যখন দলে নেওয়া হচ্ছে না, তখন তো জিতে দেখাতে হবে। বাংলার ক্রিকেটাররা জেতাতে পারবেন না বলেই তো তাঁদের নেওয়া হচ্ছে না, আস্থা রাখা হচ্ছে না। যখন ভরসা নেই তখন তাহলে বাকিরাও যদি জেতাতে না পারে তাহলে তো প্রশ্ন উঠবেই।
বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডরের দলে বাংলাই ব্রাত্য
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শাহরুখ খানকে ব্র্যান্ড অ্য়াম্বাসাডর করেছেন। ইডেনে আইপিএল-জয়ী কেকেআরকে সংবর্ধনাও প্রদান করা হয়েছে। তারপরও বাংলা ব্রাত্য এই ব্যাপারটাই বোধগম্য হচ্ছে না কারও। মিলছে না ক্রিকেটীয় যুক্তি। মনোজ ও দিন্দা এখন রাজনীতিতে। ফলে রাজনীতির ছোঁয়াও লাগছে এই গোটা বিষয়ে। তৃণমূলের প্রতি নিশানা করে বিজেপি বারবারই বলে থাকে একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে তোষণ করে রাজ্য সরকার। দিন্দার কথায়, উনি কিং খান বলেই এতো বিশিষ্ট মানুষ থাকা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওঁকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করেছেন। বাকিটা বুঝে নিন। তবে এটাও বলব, বাংলার রাজ্য ক্রিকেট সংস্থারও ক্রিকেটারদের স্বার্থে আরও সক্রিয়তা কাম্য। মনোজ তিওয়ারি পাল্টা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো এখানে রাজ্য সরকার কোনও ক্রীড়া সংস্থা চালানোর কাজে হস্তক্ষেপ করে না। বিজেপির রাজ্যগুলির দিকে তাকালে দেখবেন, নিজেদের রাজনীতিবিদদের অ্যায়োসিয়েশনে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাছাড়া আইপিএলের বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফে বলার কিছু নেই। এই চাপানউতোরের মধ্যেই মনোজ ও দিন্দা দুজনেই বাংলার ক্রিকেটারদের আইপিএল শুরুর আগে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।