
উত্তর–পূর্বে ভারতের নাগরিকদের ক্ষোভের কথা বলবে ‘অনেক’, অনুভব–আয়ুষ্মান জুটি হিট
সিনেমার নাম–অনেক
অভিনয়–আয়ুষ্মান খুরানা, আন্দ্রেয়া কেভিশুসা, মনোজ পাহওয়া, জেডি চক্রবর্তী, কুমুদ মিশ্র
পরিচালক–অনুভব সিনহা
'পিস মেইনটেন করনে সে আসান হোতা হ্যায়, ওয়ার মেইনটেন করনা। ইসিলিয়ে সব করতে হ্যায়। তুম ভি, হাম ভি।’ না, এই সংলাপ দিয়ে 'অনেক’ সিনেমা শুরু হয়নি। তবে এটা আপনাকে একটা ধারণা দেয় যে কোথাও বৈচিত্র্য এখনও একটি বইয়ের শব্দ শুধু। ২০১৯ সালে 'আর্টিক্যাল ১৫’–এর পর অনুভব সিনহা ফের আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গে কাজ করলেন এই সিনেমায়। অনুভব সিনহা বেশিরভাগ সময়ই সাধারণ মানুষকে রাজনীতি সহজ করে বোঝানোর জন্য পরিচিত। অনীকের সঙ্গেও কি সেটা হয়েছে? আসুন জেনে নেওয়া যাক।

'অনেক’ ছবিতে বার্তা দেওয়া হয়েছে 'উত্তর পূর্ব ভারতের নাগরিকদেরও আপন করে নিন’। আর এটাই এই সিনেমার সেরা অংশ বলতে পারেন। সিনেমাটি আপনাকে একযোগে অন্যায় ও বিদ্রোহের সফরে নিয়ে যায়। সিনেমার আরও একটি সেরা দিক হল এই ছবির কাস্টিং। অনুভব সিনহা চেষ্টা করেছেন ছবিটির মাধ্যমে আসল সমস্যাকে ফুটিয়ে তোলার এবং তিনি তাই করেছেন। চরিত্রে কাকে ভালো লাগবে এই বিতর্কে না গিয়ে তিনি সরাসরি সেই প্রদেশের মানুষদের দিয়ে অভিনয় করান, যাতে বিশ্বাসযোগ্যতা ফুটে ওঠে সিনেমায়।
সিনেমার গল্প
এ কাহিনি পরিচালক বলেছেন আয়ুষ্মান খুরানার যশুয়া চরিত্রের মাধ্যমে। আন্ডার কভার এজেন্ট যশুয়া। টাইগার সাংগার মতো বিদ্রোহী নেতার পাশাপাশি উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উপর নজর রাখে সে। যাতে সেখানে শান্তি বজায় রাখা যায়। নিজের কাজের জন্যই আইডো (আন্দ্রেয়া কেভিশুসা) নামের এক উঠতি বক্সারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় যশুয়া। আইডো দেশের হয়ে বক্সিং করতে চাইলেও তার বাবা ওয়াংনাও (মিফাম ওৎসাল) ভারতকে নিজের দেশ মনে করে না। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী গড়ে তোলে। সরকার কি উত্তর-পূর্বে শান্তি আলোচনায় সফল হবে? আইডো কি পারবে ভারতের জন্য সোনার পদক আনতে? এই সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন ছবিটি দেখার পর।
উত্তর–পূর্ব ভারতের সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে
প্রকৃতপক্ষে, সিনেমাটি শুরু হয় কিভাবে উত্তর-পূর্বের লোকেরা তাঁদের আচরণ, চেহারা এবং সংস্কৃতির জন্য প্রায়শই বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে। কীভাবে তাঁদের দেশের অন্যান্য রাজ্যের নাগরিকরা চিঙ্কি, চিলি চিকেন, চাইনিজ এই সব নাম নিয়ে ডাকেন। আর এটা সত্যি খুব বেদনাদায়ক। বছরের পর বছর ধরে চলা অবিচার, যার ফলশ্রুতিতে রাজ্যে অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে যারা ভারত সরকারের সাথে একত্রে কাজ করতে চায় না। আর সেটাই হল যশুয়ার মিশন। অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা – 'অনেক’ ছবির কাহিনি ভারতের এই 'সেভেন সিস্টার্সে’র যেকোনও প্রান্তেরই হতে পারে। রাজনীতির পাশাখেলায় মানুষকে ঘুটির মতো অবস্থান বদলাতেই হয়। একজন ঠিক হলে, অন্যজনকে বেঠিক তো হতেই হয়। 'অনেক’ সিনেমার মাধ্যমে এ কথাই বলতে চেয়েছেন পরিচালক। এই কাজের জন্য পরিচালকের প্রশংসা অবশ্যই প্রাপ্য। তবে কিছু ক্ষেত্রে যেন গল্প একটু পথ হারিয়েছে। আবার মূলস্রোতে ফেরত আসতে সময় লেগেছে।

অভিনয়
একটা সিনেমার দায়িত্ব আয়ুষ্মান খুরানা নিজেই একার কাঁধে তুলে নিতে পারদর্শী, সেটা অন্যান্য সিনেমার মতো এই সিনেমাতেও দেখা গিয়েছে। তাঁর পাশাপাশি চেনা মুখ বলতে মনোজ পাহওয়া এবং কুমুদ মিশ্র। দু’জনেই ক্ষমতার অলিন্দে থাকা মানুষের ভূমিকা সুন্দরভাবে পালন করেছেন। বাকি অভিনেতারা প্রত্যেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের এবং প্রত্যেকের অভিনয় প্রশংসার যোগ্য। বিশেষ করে নায়িকার ভূমিকায় নবাগতা আন্দ্রেয়া কেভিশুসা।
অনুভব সিনহা সফল হয়েছেন
একজন পরিচালক হিসেবে অনুভব সিনহা ভিন্ন ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করেন। দেশের জন্য কাজ করা একজন গোপন এজেন্ট আয়ুষ্মানের মাধ্যমে তিনি একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন। যা আমাদের মাঝে মাঝে অস্থির করে তোলে। একটি প্রশ্ন যা আপনাকে অবশ্যই তাড়িত করে,'নামগুলি সরিয়ে দেওয়া হলে আপনি কি মানচিত্রে সমস্ত উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলি সনাক্ত করতে পারবেন?’ ছবির প্রথমার্ধ কিছুটা ধীরগতির। পরিচালক হিসেবে অনুভব সিনহা চলচ্চিত্রে তার চরিত্রের মাধ্যমে গল্পকে অনেক স্তর দিয়েছেন, যা সেখানকার স্থানীয় ও রাজনৈতিক সংগ্রামকে চিত্রিত করেছে। আঞ্চলিক উপভাষা, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, লোকগান এবং সিনেমাটোগ্রাফির মাধ্যমে পরিচালক গল্পটিকে শক্তিশালী করেছেন। ছবির ভিজ্যুয়াল টোন আশ্চর্যজনক। তবে হ্যাঁ, আপনাকে খুব সাবধানে ছবিটি দেখতে হবে নাহলে এটি আপনার কাছে জটিল মনে হতে পারে। ক্লাইম্যাক্সের চিন্তা-প্ররোচনামূলক সংলাপ হল, 'এই টুকরোটা কারোর দরকার নেই, না হলে এত বছর ধরে এত ছোট সমস্যার সমাধান হতো না?’