ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে পুনরুদ্ধারে হাত মেলালো এই দুই বড় সংস্থা, তৈরি হচ্ছে দশটির বেশি ছবি
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে পুনরুদ্ধারে হাত মেলালো এই দুই বড় সংস্থা
করোনা ভাইরাসের মহামারি একপ্রকারভাবে চলচ্চিত্র জগতকে কিছুটা হলেও মন্দার দিকে নিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে গত বছর থেকে সিনেমা হলগুলি বন্ধ হয়ে যাওযার ফলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তবে করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হতেই সিনেমা হলগুলি ফের খুলতে শুরু করে দেয়। এরই মাঝে এই অবস্থা থেকে সিনেমা হল ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর তাগিদে এগিয়ে এল ভারতের দুই বৃহৎ ফিল্ম স্টুডিও। জানা গিয়েছে, ভারতের চলচ্চিত্র অঙ্গনের বড় দুই প্রযোজনা সংস্থা টি-সিরিজ ও রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট ফের যৌথভাবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। তারা বড়, মাঝারি ও ছোট বাজেটের ১০টির অধিক সিনেমা বানাবে। আর এর জন্য বিনিয়োগ করবে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা।
১০টির বেশি সিনেমা বানানো হবে
বলিউডের প্রধান সংস্থা টি-সিরিজ ও শিল্পপতি অনিল আম্বানির রিলায়েন্স অ্যাকশন থ্রিলার, ঐতিহাসিক বায়োপিক, ড্রামা ও কমেডি সহ ১০টির বেশি সিনেমা বানাবে, তাও আবার আগামী ৩৬ মাসের মধ্যে। এক সাক্ষাতকারে এই দুই প্রযোজনা সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন যে এর মধ্যে কিছু সিনেমা আগামী বছরের গোড়ার দিকেই মুক্তি পাবে। সাম্প্রতিক ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় অর্থ বিনিয়োগের সাহসী প্রচেষ্টা বলা চলে, যখন দেশে অনেক প্রযোজকই মহামারি চলাকালীন সিনেমা হলে ছবি মুক্তির ইচ্ছাকে পরিত্যাগ করে, প্রিমিয়ারের জন্য অ্যামাজন ও নেটফ্লিক্সের মতো শীর্ষস্থানীয় প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছে। অন্যান্য দেশের মতোই ভারতেও লকডাউন ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে ডিজিটাল স্ট্রিমিংয়ের চাহিদা অত্যন্তভাবে বেড়ে গিয়েছে, কারণ মানুষ এখন বাড়িতেই বিনোদন খুঁজে নিয়েছে।
সিনেমা ছাড়া বড় বাজেট পুনরুদ্ধার করা যাবে না
তবে বড় প্রযোজকরা জানিয়েছেন যে সিনেমা ছাড়া বড় বাজেট পুনরুদ্ধার করা যাবে না। টি-সিরিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান ভূষণ কুমার বলেন, 'ওটিটিকে মাথায় রেখে আমরা কোনও বড় বিনিয়োগ, এত সিনেমা করতে পারব না।' প্রসঙ্গত, রিলায়েন্স ও টি-সিরিজ উভয়ই একগুচ্ছ সম্ভাব্য ব্লকব্লাস্টার ছবির মুক্তি গত বছর থেকে পিছিয়ে চলেছে কারণ সিনেমা হলগুলি খুলছে আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মুম্বইয়ে খোলেনি সিনেমা হল
তবে দেশের কিছু রাজ্যে করোনা বিধি অনুসরণ করে সিনেমা হলগুলি পুনরায় খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দেশের পাশ্চাত্য রাজ্য মহারাষ্ট্র, যেখানে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বই ও বলিউড রয়েছে, সেখানে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। এটা বলিউডের কাছে মোটেও ভালো খবর নয় যে মূলধারার হিন্দি ছবি সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার পরও ৩০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ তা আয় করতে পেরেছে। ভূষণ কুমারের মতে এই রাজ্য বিশাল বাজার এবং বক্স অফিস তার চাবিকাঠি। মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে বড় পর্দার গুরুত্বরে কথা ক্রমাগত তুলে ধরে দেশের প্রযোজনা গিল্ড ও ভারতের সিনেমা হলের বৃহও চেইন সোশ্যাল মিডিয়া ও গত সপ্তাহে সংবাদপত্রে পুরো একপাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্য সরকারকে পুনরায় সিনেমা হল খোলার আর্জি জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, সিনেমা হলগুলি যদি ক্রমাগত বন্ধ থাকে তবে এই ইন্ডাস্ট্রি মাসে মোটা টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
নভেম্বরে পুনরায় খুলতে পারে সিনেমা হল
ভূষণ কুমার আশা করছেন যে দেশের সব সিনেমা হলগুলি পুনরায় খুলে যাবে দিওয়ালির সময় নভেম্বরের গোড়ার দিকে, কারণ সেই সময় ভারতের সবচেয়ে বড় উৎসব চলবে। তবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে দেশ কীভাবে এই ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করছে তার ওপর। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন যে একমাসব্যাপী দীর্ঘ উৎসবের মরশুমই দেশে করোনার তৃতীয় ওয়েভকে স্বাগত জানাবে। শুধুমাত্র দেশের ১২ শতাংশ জনসংখ্যা সম্পূর্ণভাবে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে, রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (গ্রুপ সিইও) শিবাশীষ সরকার বলেছেন, টি-সিরিজের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার জন্য তিনি মুখিয়ে আছেন। এমন কিছু সিনেমা তাঁরা নির্মাণ করবেন, যা চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।