কাদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, জানেন?
কাদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, জানেন?
একে করোনায় রক্ষে নেই, তারমধ্যে মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এসে জুটলো মাঙ্কিপক্স। ভারতে প্রথম মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হওয়ার পরই দেশজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরে আসা এক ব্যক্তি কেরলে মাঙ্কিপক্সের জন্য পরীক্ষা করালে তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আর এরপরই চিন্তায় পড়েন দেশবাসী। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ এএনআই-কে বলেন, “চিন্তা বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং বর্তমানে আক্রান্ত রোগী স্থিতিশীল রয়েছেন।”
মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স একটি বিরল, ভাইরাল জুনোটিক সংক্রমণ, যা প্রাণী থেকে মানুষ এবং ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মাঙ্কিপক্সের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলি নিজে থেকেই চলে যায়। গ্লোবাল হেলথ এজেন্সি মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট শারীরিক জটিলতার বিষয়ে সতর্ক করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সেকেন্ডারি স্কিন ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, বিভ্রান্তি এবং চোখের সমস্যা। 'হু' জানায় যে, অতীতে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে ১ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ মানুষ মারা গেছে। তাহলে এবার দেখে নেওয়া যাক কাদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কাদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
মাঙ্কিপক্স আছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করলে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু তাই নয়, যারা ইঁদুর এবং গৃহপালিত পশুর সংস্পর্শে আসে, তাঁদের মাঙ্কিপক্স হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীদের দেখাশোনা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা
জানা গেছে, মাঙ্কিপক্স সংক্রামিত ব্যক্তি বা প্রাণীর সংস্পর্শে থাকলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাঙ্কিপক্স সাধারণত ত্বক থেকে ত্বক, মুখ থেকে মুখ বা মুখ থেকে ত্বক অথবা যৌন সঙ্গমের মাধ্যমেও মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। আক্রান্তদের পাশাপাশি মাঙ্কিপক্স রোগীদের যত্ন নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং নিজেদের রক্ষা করার জন্য সেইসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অন্তর্নিহিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে
'হু'-এর মতে, নবজাতক শিশু, ছোট শিশু এবং অন্তর্নিহিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে এমন ব্যক্তিরদের ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিছু ক্ষেত্রে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
ইমিউন সিস্টেম যখন সঠিকভাবে কাজ করে না তখন, একটি ইমিউন ডেফিসিয়েন্সি ডিজিজ বা ব্যাধি দেখা দেয়। জিনগত কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি নিয়ে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরা প্রাথমিক ইমিউনোডেফিসিয়েন্ট হিসাবে পরিচিত।২০০ টিরও বেশি প্রাথমিক ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ডিসঅর্ডার রয়েছে সেইসব মানবদেহের ভিতরে।
গুটিবসন্তের টিকা নেওয়া থাকলে মাঙ্কিপক্সের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
স্মলপক্স ভ্যাকসিনগুলি মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে মনে করা হয়। মাঙ্কিপক্স গুটিবসন্তের মতো ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হওয়ার কারণে, এনএইচএস অনুসারে, স্মলপক্স (এমভিএ)-এর ভ্যাকসিনটি মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে লড়তে কার্যকরী হবে।
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলি সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলি সাধারণত ৬ থেকে ১৩ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। উপসর্গগুলি দেখা দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর আপনি বুঝতে পারবেন যে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর আপনার শরীরে প্রায় দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এই ভাইরাস। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস (এনএইচএস) জানিয়েছে যে, ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে।
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের উপসর্গগুলি কী কী?
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে, উচ্চ তাপমাত্রা, মাথা ব্যাথা, পেশীর ব্যথা, পিঠব্যথা। এছাড়াও, মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে ফোলা গ্রন্থি, ঠান্ডায় কাঁপুনি, ক্লান্তি। কোনও ব্যক্তির শরীরে এই উপসর্গগুলি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
'বিদেশ থেকে আসলে অবশ্যই...'! মাঙ্কিপক্স নিয়ে নয়া গাইডলাইন স্বাস্থ্যমন্ত্রকের