ভারতের কোন রাজ্য সবথেকে বেশি ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ, বিচার করুন তালিকা দেখেই
ভারতের কোন রাজ্য সবথেকে বেশি ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ, বিচার করুন তালিকা দেখেই
প্রাক বর্ষার মরশুম এলেই ঘূর্ণিঝড় হানা দেয় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের হানায় তটস্থ থাকে ভারতের উপকূল। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন ভারতের পূর্ব উপকূলই হোক বা আরব সাগর সংলগ্ন পশ্চিম উপকূল- সর্বত্রই ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটা লাগেই। কিন্তু কোন রাজ্য সবথেকে বেশি ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ, এই প্রতিবেদনে তারই তথ্য তালাশ করার চেষ্টা হয়েছে।
ভারতের ঘূর্ণিঝড় প্রবণ অঞ্চলের কথা
ভারতের চারটি রাজ্য রয়েছে, যেখানে সর্বাধিক ঘূর্ণিঝড় হানা দেয়। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গ। আর এরইসঙ্গে রয়েছে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরি। এখানেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ পড়ে বেশ। এই পাঁচ রাজ্য ও অঙ্গরাজ্যই ভারতের পূর্ব উপকূলে অর্থার বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। ঘূর্ণিঝড়ের বিপর্যয়ের জন্য ভারতের সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হল এগুলি।
ভারতের পূর্ব উপকূল বেশি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ
ঘূর্ণিঝড় ভারতের সমগ্র উপকূলকে প্রভাবিত করে। তবে পশ্চিম উপকূলের তুলনায় পূর্ব উপকূল বেশি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ। বঙ্গোপসাগরে বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। তুলনায় কম ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় আরব সাগরে। আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় আবার বেশিরভাগই অন্য দেশে হানা দেয়, ভারতের পশ্চিম উপকূল তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে আবহবিদরা জানান।
ভারতে ঘূর্ণিঝড় না বন্যা, কার প্রভাব বেশি
গত কয়েক দশক ধরে ভারতে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং ভূমিকম্প। এর মধ্যে বন্যা দেশটিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ঘূর্ণিঝড় সাধারণত মে-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বর সময়সীমার মধ্যে ঘটে। যদিও এই ঘূর্ণিঝড়গুলির প্রভাব সমগ্র ভারতীয় উপকূলজুড়ে অনুভূত হয়। তবে পশ্চিম উপকূলের তুলনায় পূর্ব উপকূল বেশি দুর্যোগপ্রবণ।
ভারতের ঘূর্ণিঝড়প্রবণ রাজ্যের ঘূর্ণিঝড়প্রবণ জেলা
ভারতের কোন কোন রাজ্য ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ, তা তো ইতিমধ্যেই জেনেছেন, কিন্তু জানেন কি ভারতের ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ রাজ্য এবং জেলা কোনগুলি। তালিকার দিকে নজর দিলেই পরিষ্কার ধারণা পাবেন। এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও কলকাতা। অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী, নেলোর ও কৃষ্ণা। ওড়িশার বালাশোর, কটক, ভদ্রা, গঞ্জাম, কেন্দ্রপাড়া, পুরী, গজপতি, খড়দা ও জগৎসিংপুর। তামিলনাড়ুর চেন্নাই, থিরুভল্লুর, কাঞ্চিপুরম ও তিরুভন্নামালাই এবং পুদুচেরির ইয়ানম।
পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা
ঘূর্ণিঝড় ভোলা উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় রূপে ১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল। ভয়ানক প্রভাব পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গেও। তারপর থাকবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মরশুমের প্রথম ক্রান্তীয় ১৮৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়েছিল। ভারত, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলিকে কভার করে এই ঝড়। আর এরপরেই থাকবে ঘূর্ণিঝড় বিওবি ০৩-২০০২। ২০০২ সালের ১২ নভেম্বর প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় আয়লা, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলও উল্লেখযোগ্য। ওড়িশায় আছড়ে পড় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবও গতবার পড়ে বাংলায়। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি বছর গড়ে ১.১৫টি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে।
অন্ধ্রপ্রদেশে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা
সুপার সাইক্লোনিক ঝড় রূপে বিওবি০১ নামে এই ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৯০ সালের ৯ মে অন্ধ্রপ্রদেশে ল্যান্ডফল করেছিল। এটি তৃতীয় ক্যাটাগরি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৯৬৭ জন মারা গিয়েছিলেন। এরপর থকাবে সাইক্লোন পেয়ার। ২০০৫ সালে ঘূর্ণিঝড় পেয়ার বঙ্গোপসাগরে দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে বিরল পথ ধরে অন্ধ্রপ্রদেশের কলিঙ্গাপত্তনমে ল্যান্ডফল করেছিল। আর ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ ২০১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে মারাত্মক ক্ষতি করেছিল। বিশাখাপত্তনমে ২১৫ থেকে ২৪০ কিমি প্রতি ঘন্টায় ল্যান্ডফল করেছিল। বিশাখাপত্তনম বা ভাইজাগ ছাড়াও ওড়িশাতেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল এই ঝড়টি। মাঝারি থেকে গুরুতর তীব্রতার ঘূর্ণিঝড় প্রতি দুই থেকে তিন বছরে অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হানে।
ওড়িশায় আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা
১৯৯৯ সালে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়টি ছিল উত্তর ভারত মহাসাগরে রেকর্ড করা সবচেয়ে মারাত্মক ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির মধ্যে একটি। ঘণ্টায় ২৬০ থেকে ২৭০ কিলোমিটার গতিতে ১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবর ধ্বংসাত্মক রূপ নিয়েছিল ঘূর্ণিঝড়টি। প্রায় ১০ হাজার জন প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছিল। এরপর সাইক্লোন ফাইলিন হানা দিয়েছিল ২০১৩-তে। আর ২০১৯-এ হানা দিয়েছিলেন ঘূর্ণিঝড় ফণী। এই ঝড়ের তীব্রতা ছিল ক্যাটাগরি-৪ হারিকেনের সমান। আর বিগত বছরে অর্থাৎ ২০২১-এ আছড়ে পড়েছিল সাইক্লোন ইয়াস। ঝড়টি ১৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশকে প্রভাবিত করেছিল৷
তামিলনাড়ুতে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ঘূর্ণিঝড় নিশা কুড্ডালোরে আঘাত হানে এবং তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কার প্রধান অংশগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ঝড়ে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয়। এরপরই উল্লেখযোগ্য ঝড়ের মধ্যে পড়বে সাইক্লোন ফায়ানের নাম। ২০০৯ সালের ৪ নভেম্বর তা আছড়ে পড়ে। ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ভারদাহ কাঞ্চিপুরম, চেন্নাই এবং বিশাখাপত্তনমকে প্রভাবিত করেছিল। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ওচকি ছিল ২০১৭ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। কেরালা, তামিলনাড়ু, গুজরাট উভয়কেই প্রভাবিত করেছিল। তামিলনাড়ুতে প্রতি বছর ৫-৬টি ঘূর্ণিঝড় হয়।
ভারতের পূর্ব উপকূলের কোন রাজ্যে কতগুলি ঘূর্ণিঝড়
১৮৯১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল দিয়ে ধেয়ে গিয়েছে বহু ঝড়। তার মধ্যে সবথেকে বেশি ঝড় বয়ে গিয়েছে ওড়িশা দিয়ে। ওড়িশা দিয়ে এখন পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি ঝড় বয়ে গিয়েছে। এরপরই রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। অন্ধ্রপ্রদেশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ৮০টিরও বেশি ঝড়। তিন নম্বরে রয়েছে বাংলা। বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ৭০টিরও বেশি ঝড়। তামিলনাড়ুতে বয়ে গিয়েছে ৬০টিরও বেশি ঝড়। পুদুচেরি দিয়ে বয়ে গিয়েছে ১০টিরও বেশি ঝড়।
ভারতের পশ্চিম উপকূলের কোন রাজ্যে কতগুলি ঘূর্ণিঝড়
ভারতের পশ্চিম উপকূলের রাজ্যগুলির মধ্যে সবথেকে বেশি ঝড় বয়ে গিয়েছে গুজরাট দিয়ে। গুজরাট দিয়ে ১৮৯১ থেকে আজ পর্যন্ত বয়ে গিয়েছে ৩০টিরও বেশি ঝড়। তারপর রয়েছে মহারাষ্ট্র। মহারাষ্ট্রে ১৫টিরও বেশি ঝড় বয়ে গিয়েছে। এছাড়া কর্নাটক, কেরালা ও গোয়ার উপর দিয়েও একাধিক ঝড় বয়ে গিয়েছে। ১৮৯১ থেকে ২০০২ পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সেই তথ্যে অনুযায়ী যথাক্রমে ২, ৩ ও ২টি ঝড় বয়ে গিয়েছে ওই এলাকা দিয়ে।
ঝড় হল সাইক্লোন! কিন্তু কে কবে প্রথম ব্যবহার করেন এই নাম, একনজরে খুঁটিনাটি