বিশ্ববিখ্যাত 'পিসা'র থেকেও হেলানো বারাণসীর রত্নেশ্বর মন্দির, নেপথ্যে নানা আখ্যান
বিশ্ববিখ্যাত পিসার থেকেও দ্বিগুণ হেলে বারাণসীর রত্নেশ্বর মন্দির, নেপথ্যে নানা আখ্যান
বারাণসী ওরফে বেনারস বা কাশীকে শান্তির পীঠস্থান বলেন পর্যটকরা। এই প্রাচীন শহরে প্রচুর মন্দির আছে। কিন্তু রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দিরের মতো একটি মন্দিরও নেই। এই মন্দির ইতালির পিসা স্তম্ভের সঙ্গে তুলনীয়। তুলনীয় বললেও কম বলা হয়, কাশীর এই রত্নেশ্বর মন্দির ইতালির বিশ্বখ্যাত পিসা স্তম্ভকেও হার মানায়।
মন্দির হেলে পড়ার নেপথ্য আখ্যান বেশ মজার
কাশীর রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির নিয়ে অনেক কল্পকথা রয়েছে, যা এই মন্দিরকে ঐতিহ্যশালী করে তুলেছে। মণিকর্ণিকা ঘাটের কাছে রত্নেশ্বর মন্দিরকে কাশী কারভাত নামেও পরিচিত। এর অর্থ কাশীর একটি মন্দির, যা একদিকে ঝুঁকে। মন্দিরটির এই হেলে পড়ার নেপথ্য আখ্যান বেশ মজার। এক নয় এমন একাধিক আখ্যান রয়েছে এই হেলানো মন্দির নিয়ে।
এই মন্দির মাতৃঋণ নামেও পরিচিত, নেপথ্য কাহিনি
রাজা মান সিং-এর রাজসভার একজন কর্মচারী তাঁর মায়ের জন্য এই মন্দির নির্মাণ করেছিল। তাঁর মায়ের নাম ছিল রত্না বাই। রত্না বাইয়ের নামে মন্দিরটি তৈরি হয়। মন্দির নির্মাণের পর ওই রাজকর্মী গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি তাঁর মায়ের ঋণ পরিশোধ করলেন। এই কথা তাঁর মুখ বের হওয়ার পরই মন্দিরটি পিছনের দিকে হেলতে শুরু করে। কথিত আছে, মন্দিরটি উত্তর-পশ্চিমে কাত হয়ে দেখাতে শুরু করে, মায়ের ঋণ কখনও শোধ করা যায় না। এই মন্দিরটি তাই মাতৃঋণ নামেও পরিচিত।
ইন্দোরের রানি অহল্যাবাইয়ের অভিশাপে হেলে পড়ে মন্দির
শুধু এই একটিই নয়, আরও উপাখ্যান রয়েছে মন্দিরটি নিয়ে। মন্দিরটি ইন্দোরের রানি অহল্যাবাই হোলকারের এক দাসী রত্না বাইয়ে দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তিনি নিজের নাম অনুসারে মন্দিরটির নামকরণ করেন। তখন অহল্যা বাই রাগান্বিত হয়ে এই মন্দিরটিকে অভিশম্পাত করেছিলেন। তাঁর অভিশাপের কারণে মন্দিরটি হেলতে শুরু করে।
মন্দির নির্মাণ নিয়ে ভিন্ন তথ্যও রয়েছে রেকর্ডে
তবে নির্মাণ সম্পর্কিত সূত্র থকে জানা যায়, উনিশ শতকে গোয়ালিয়রের রানি বাইজা বাই নির্মাণ করেছিলেন এই রত্মেশ্বর মন্দির। বারাণসীর রাজস্ব রেকর্ড অনুসারে মন্দিরটি ১৮২৫-১৮৩০ সালে নির্মিত হয়েছিল। জেলা সাংস্কৃতিক কমিটির ডাঃ রত্নেশ ভার্মার মতে, ১৮৫৭ সালে আমেঠি রাজপরিবার মন্দিরটি নির্মাণ করে।
১৮৬০-এর দশকের তোলা ছবিতে মন্দিরটি সোজা ছিল
১৮২০-১৮৩০ দশকে বেনারস টাঁকশালের মুদ্রা পরীক্ষক জেমস প্রিন্সেপ বেনারসের একাধিক চিত্র আঁকেন। সেই চিত্রের মধ্যে রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দিরও ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, মন্দিরের প্রবেশদ্বারটি যখন পানির নিচে ছিল, তখন পুরোহিত পূজা পরিচালনার জন্য জলে ডুব দিতেন। তারপর ১৮৬০-এর দশকের তোলা ছবিতে মন্দিরটিকে হেলে থাকতে দেখা যায়নি। বর্তমানে দেখা যায় প্রায় ৯ ডিগ্রি হেলানো অবস্থায় রয়েছে রত্নেশ্বর মন্দির।
ইতালির বিখ্যাত পিসার টাওয়ারটির থেকেও বেশি হেলে
এই রত্নেশ্বর মন্দির গঙ্গাবক্ষে হেলানো অবস্থায় রয়েছে। ইতালির বিখ্যাত পিসার টাওয়ারটি প্রায় ৫ ডিগ্রি হেলে রয়েছে। আর বেনারসের রত্নেশ্বর মন্দিরটি হলে রয়েছে তার থেকেও বেশি। ত্রুটিযুক্ত ভিত ও ভিত্তিস্তরে পলিমাটি সরে যাওয়ার জন্য তা হেলে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। ২০১৫ সালে এক বজ্রপাতে এর চূড়ার কিছু অংশ ধসে পড়ে। এই মন্দিরের গর্ভগৃহ বছরের বেশিরভাগ সময় গঙ্গার জলস্তরের নিচে থাকে।
মন্দিরটি প্রায় ৯ ডিগ্রি হেলানো অবস্থায় থাকার জন্য বিখ্যাত
রত্নেশ্বর মন্দির পিসার হেলানো টাওয়ারের চেয়ে বেশি হেলে রয়েছে বলে দাবি। সত্যতা যাচাই করে দেখা যায় তা সত্য। রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দিরটি বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটে নয়-ডিগ্রি তির্যক বসে রয়েছে। মন্দির সংলগ্ন 'ঘাট' ভেঙে পড়ে এবং তার ওজন সহ্য করতে না পেরে পিছনের দিকে হেলে পড়ে। তবে মন্দিরটি প্রায় নয় ডিগ্রি হেলানো অবস্থায় থাকার জন্য বিখ্যাত।
ইতালির পিসা টাওয়ারটি ৪.৯৯ ডিগ্রি হেলে রয়েছে
ইতালির বিশ্ববিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভ পিসার হেলানো টাওয়ারের থেকে বেশি হেলানো এই মন্দির। ১১৭৩ সালে নির্মিত হয়েছিল পিসা স্তম্ভ। এটি তৈরি হওয়ার পরই ভিতের এক পাশের মাটি সরে যেতে শুরু করে। পাথর এবং কাঠামো হেলে পড়ে। সর্বশেষ আপডেট অনুসারে, টাওয়ারটি সোজা করার চেষ্টা হয়। তারপরও টাওয়ারটি ৪.৯৯ ডিগ্রি হেলে রয়েছে।
হেলানো এই মন্দিরের উচ্চতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে
অতএব, এটা সত্য যে পিসার হেলানো টাওয়ারের থেকে প্রায় ৪ ডিগ্রি বেশি হেলে রয়েছ রত্নেশ্বর মন্দিরটি। ৯ ডিগ্রির বেশি হেলে রয়েছে রত্নেশ্বর মন্দির। ভাইরাল গ্রাফিকের তথ্য অনুসারে, মন্দিরের উচ্চতা ৭৪ মিটার। তবে উইকিপিডিয়া বলছে যে মন্দিরের উচ্চতা ১৩.১৪ মিটার। লজিক্যাল ইন্ডিয়ানরা স্বাধীনভাবে এই মন্দিরের উচ্চতা যাচাই করতে পারেনি।