বিশ্বব্যাপী জল জরিপ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ নাসার, প্রথম আলোকপাত জলবায়ু পরিবর্তনে
বিশ্বব্যাপী জল জরিপ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ নাসার, প্রথম আলোকপাত জলবায়ু পরিবর্তনে
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে একটি স্পেস-এক্স রকেট। এটি মার্কিন-ফরাসি উপগ্রহ বহন করে নিয়ে যাবে মহাকাশে। পৃথিবীর পৃষ্ঠে জলের সার্ভে করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নাসার তরফে। এই ঘটনাকে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর নতুন আলোকপাত বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ফ্যালকন নাইন রকেট নাসা চুক্তির অধীনে বিলিওনেয়ার ইলন মাস্কের বাণিজ্যিক লঞ্চ কোম্পানির মালিকানাধীন। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রায় ১৭০ মাইল বা প্রায় ২৭৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ভ্যানডেনবার্গ ইউএস স্পেস ফোর্স বেস থেকে সকাল ৩টে ৪৬ মিনিট নাগাদ ওই রকেট ব্লাস্ট-অফের জন্য সেট করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বভাস অনুযায়ী লিফট অফের অনুকূল অবস্থা ছিল। তাই নাসা লঞ্চ পরিষেবা চালু করে। পরিদর্শকরা রকেটের নয়টি প্রধান ইঞ্জিনের মধ্যে দুটিতে আর্দ্রতা শনাক্ত করার পরে বৃহস্পতিবার থেকে কাউন্টডাউনের জন্য ২৪ ঘণ্টা নির্ধারিত করা হয়েছে।
বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি মহাসাগর, হ্রদ, নদী এবং অন্যান্য জলাধারের পরিমাপ সংগ্রহ করতে রকেটের পেলোড, সারফেস ওয়াটার অ্যান্ড ওশান টপোগ্রাফি স্যাটেলাইটে উন্নত মাইক্রোওয়েভ রাডার প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশে প্রতিস্থাপিত ওই উপগ্রহ নানা কাজে ব্রতী হবে।
গবেষকরা বলেন, প্রতি ২১ দিনে অন্তত দু'বার গ্রহের রাডার সুইপ থেকে সংকলিত ডেটা সংগ্রহ, সমুদ্র-সঞ্চালন মডেল উন্নত করা, আবহাওয়া এবং জলবায়ু পূর্বাভাসকে শক্তিশালী করা এবং খরা-পীড়িত অঞ্চলে দুষ্প্রাপ্য মিঠা জলের সরবরাহে সহায়তা করতে ব্যবহার করা হবে ওই প্রযুক্তি।
এসইউভি আকারের স্যাটেলাইটের উপাদানগুলি প্রাথমিকভাবে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি এবং ফরাসি মহাকাশ সংস্থা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। কানাডা এবং ব্রিটেনের সহযোগীদের নিয়ে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা প্রায় ২০ বছর ধরে উন্নয়নমূলক এই কাজ করে চলেছে। এসডব্লুওটি-র ১৫টি মিশনের মধ্যে একটি ছিল জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত প্রকল্প।
মিশনের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হ'ল, সমুদ্রগুলি কীভাবে বায়ুমণ্ডলীয় তাপ এবং কার্বন ডাই অক্সাইডকে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শোষণ করে, তা অন্বেষণ করা। উল্লেখ্য, ওই পদ্ধতি প্রাকৃতিকভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।
মানব-সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকে থাকা অতিরিক্ত তাপের ৯০ শতাংশের বেশি মহাসাগরগুলি শোষণ করেছে বলে অনুমান করা হয়। কক্ষপথ থেকে সমুদ্র স্ক্যান করে বিজ্ঞানীরা ছোট স্রোত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলিকে সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হবে।
এই পদ্ধতি আরও সুনির্দিষ্ট ডেটা ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করবে যে, ঝড় ও বন্যা এলাকার কত অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং মোহনা, জলাভূমি ও জলাশয়ে লোনা জলের অনুপ্রবেশের পরিমাণ কতদূর পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে। তিন বছরের মিশনে বারবার পৃথিবীর জল সম্পদের ইনভেন্টরি নেওয়ার ফলে গবেষকরা ঋতু পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার ফলে নদী এবং হ্রদের ওঠানামাকে আরও ভালভাবে সনাক্ত করতে সক্ষম হবে নাসা।