উপনির্বাচন: নোটের হাওয়ায় ভোট, নজর রাজ্যের তিন কেন্দ্রে
কোচবিহার, তমলুক, মন্তেশ্বর তিন কেন্দ্রেই লড়াই চতুর্মুর্খী হলেও, মূল লড়াই তৃণমূল ও বামফ্রন্টেরই। কোচবিহারে বিজেপি রয়েছে জোরদার লড়াইয়ে।
তমলুক, কোচবিহার ও মন্তেশ্বর, ১৯ নভেম্বর : কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শুরু হল উপনির্বাচনে তিন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। এ রাজ্যের দুই লোকসভা কেন্দ্র ও এক বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটদান চলছে। কোচবিহার, তমলুক, মন্তেশ্বর তিন কেন্দ্রেই লড়াই চতুর্মুর্খী হলেও, মূল লড়াই তৃণমূল ও বামফ্রন্টেরই। কোচবিহারে বিজেপি রয়েছে জোরদার লড়াইয়ে। [৬ রাজ্যে উপনির্বাচন , নোট বাতিলের পর প্রথম ভোটে নজর সবার ]
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, ভোট প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও অবাধ করতে মোট ২৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে। তবে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে না। শুধু স্পর্শকাতর বুথগুলিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। অতি স্পর্শকাতর বুথগুলিতে ভিডিও রেকর্ডিং এর ব্যবস্থা থাকবে। আর যেসব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না সেই সব বুথগুলির মধ্যে অধিকাংশ বুথেই থাকবে CCTV ক্যামেরা।
নোটকাণ্ডের ছায়াতেই আজ ভোট চলছে রাজ্যে। এদিন ইভিএমে যে নোট বাতিলের ছাপ পড়বে তা স্পষ্টই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নরেন্দ্র মোদির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, তিনি যে হোমওয়ার্ক ছাড়াই নোট বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বালখিল্যতা করেছে, রাজ্য তথা দেশজুড়ে সেই চিত্রই স্পষ্ট হয়েছে। সেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ উপনির্বাচন চলছে।
বর্ধমানের মন্তেশ্বর বিধানসভা এবং কোচবিহার ও তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র। যদিও রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূলের বিজয়রথ এই কেন্দ্রে আটকাতে পারবে না কেউ-ই। না বামফ্রন্ট, না বিজেপি। গত বিধানসভা ও ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ব্যবধান ছিল তৃণমূল কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের মধ্যে। সাংসদ রেণুকা সিংহের মৃত্যুর কারণে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ৮৭ হাজার ভোটে বাম প্রার্থী দীপক রায়কে পরাজিত করেছিলেন রেণুকাদেবী।
এবার তৃণমূলের পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে লড়ছেন বামফ্রন্টের নৃপেন্দ্রনাথ রায়। বিজেপি-র হয়ে লড়ছেন হেমচন্দ্র বর্মন। রয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থীও। তবে প্রচারে অনেক পিছিয়ে তারা। বিগত নির্বাচন থেকে আজ পর্যন্ত এই কেন্দ্রে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। ভাঙন দেখা দিয়েছে বাম ও কংগ্রেস শিবিরে।
তমলুকে সাংসদ থেকে মন্ত্রী হওয়ার পর মর্যাদার লড়াইয়ে নেমেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলিকে আড়াই লাখ ভোটে পরাজিত করেন তিনি। এবার শুভেন্দুর ছেড়ে যাওয়া আসনে তৃণমূল প্রার্থী অনুজ দিব্যেন্দু অধিকারী। পরিচিত মুখ, দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক। সিপিএম প্রার্থী মন্দিরা পান্ডা তাঁকে সে অর্থে লড়াই দিতেপারবেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাননি মন্দিরা দেবী। উল্লেখ্য এই লোকসভা কেন্দ্রের অধীন সাতটি বিধানসভার তিনটি রয়েছে বামেদের দখলে। এখানেও লড়াই চতুর্মুখী। কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ বটব্যাল এবং বিজেপি প্রার্থী অম্বুজাক্ষ মোহান্তি। তাঁর কার ভোট কেটে, কার লাভ করায়, সেদিকেই তাকিয়ে বিশেষজ্ঞরা।
এদিন ভোট হচ্ছে বর্ধমানের মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রেও। প্রাক্তন বিধায়ক সজল পাঁজার মৃত্যুতে এই আসনটি শূন্য হয়। তৃণমূলের টিকিটে তিনি গত নির্বাচনে মাত্র ৭০৬ ভোটে জিতেছিলেন সজলবাবু। সেবার কংগ্রেসর সঙ্গে জোট ছিল সিপিএম তথা বামফ্রন্টের। এবার সেই সুবিধা পাবে না বাম শিবির। কংগ্রেস আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। উপনির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী সজল পাঁজার পুত্র সৈকত পাঁজা। সিপিএম প্রার্থী করেছে ওসমান গনি সরকারকে। কংগ্রেসের প্রার্থী বুলবুল আহমেদ শেখ।