নন্দীগ্রাম ছেড়ে সিঙ্গুরে মন শুভেন্দুর, পুরভোটে রণেভঙ্গ দিয়ে কৃষক-আন্দোলনে বিজেপি
নন্দীগ্রাম ছেড়ে সিঙ্গুরে মন শুভেন্দুর, পুরভোটে রণেভঙ্গ দিয়ে কৃষক-আন্দোলনে বিজেপি
নন্দীগ্রাম ছেড়ে এবার সিঙ্গুর নিয়ে পড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কলকাতা পুরসভা নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি, তখন বিজেপি কৃষকদের অধিকারের দাবিতে সিঙ্গুরে ধরনায় বসছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কলকাতা পুরভোটের লড়াই থেকে রণেভঙ্গ দেওয়ার শামিল বিজেপির এই রাজনৈতিক কর্মসূচি।
সিঙ্গুরকে পাখির চোখ করেছেন শুভেন্দু
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাইটার্সে পৌঁছনোর সোপান ছিল সিঙ্গুর। নন্দীগ্রামের পাশাপাশি সিঙ্গুরের আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশাল মাইলেজ দিয়েছিল। সেই সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আক্রমণ শানালেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। উল্লেখ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েই তিনি নন্দীগ্রাম থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। এখন তিনি সিঙ্গুরকে পাখির চোখ করেছেন।
পুরভোটের প্রচার ছেড়ে সিঙ্গুরে কেন বিজেপি
কিন্তু সিঙ্গুর থেকে কৃষকদের অধিকার আদায়ের লড়াই লড়াই শুরু করার জন্য তিনি এই সমসকে বেছে নিলেন কেন। কেনই বা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কলকাতা পুরভোটের প্রচার ছেড়ে সিঙ্গুরে ছুটল? তবে কি বিজেপির একপ্রকার বুঝেই গিয়েছে, কলকাতা পুরভোটে এবার তাদের কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই রাজ্য রাজনীতির মোড় অন্য দিকে ঘোরাতে সিঙ্গুরমুখী হল বিজেপি।
প্রধানমন্ত্রী হতে বেরিয়েছেন মমতা, শুভেন্দু সিঙ্গুরে
বিজেপি এখন চাষের ব্যাপক ক্ষতি নিয়ে সিঙ্গুরে ধর্না অবস্থান শুরু করেছে। তাদের দাবি, অতিবৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিকাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমন ধান থেকে শুরু করে শীতকালীন সবজি, আলু ও পান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী এখন কৃষকস্বার্থ না ভেবে প্রধানমন্ত্রী হতে বেরিয়েছেন।
কৃষকদের দাবি নিয়ে সিঙ্গুরে ধর্না শুরু বিজেপির
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এই মর্মে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে। সাত দফা দাবিতে বিজেপির কিষাণ মোর্চা রাজভবনে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসে। বিজেপির কিষাণ মোর্চাকে নিয়েও রাজভবনে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেদিনই তিনি ঘোষণা করেছিলেন ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর কৃষকদের দাবি নিয়ে সিঙ্গুরে ধর্না দেবে বিজেপি।
বিজেপির নেতৃত্ব পুর-যুদ্ধ থেকে সরে গেলেন কেন
পুরভোটের প্রচার যখন তুঙ্গে ওঠার কথা, তখন বিজেপির এই রণেভঙ্গ দেওয়া কলকাতার বিজেপি নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আগাম ভরাডুবি বুঝেই শুভেন্দু অন্য কর্মসূচি নিয়ে বিজেপির নেতৃত্বকে পুর-যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নিলেন, নাকি সিঙ্গুর তথা কৃষকদের অধিকার নিয়ে বিজেপির অন্য পরিকল্পনা রয়েছে, তা ভবিষ্যৎই বলবে। এখন কলকাতা পুর-যুদ্ধে বিজেপির দৈন্যদশা প্রকট হয়ে গেল।
বিজেপি সিঙ্গুর থেকে নতুন করে অক্সিজেন খোঁজার চেষ্টায়
তবে বিজেপি যে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন ও উপনির্বাচনের ব্যর্থতা এবং কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের ফল খারাপ হলেও দমে যাওয়ার পাত্র নয়, তা তাদের সিঙ্গুরে আন্দোলনের সূত্রপাত থেকেই প্রমাণিত। কলকাতা পুরভোটে হারার পর বিজেপি সিঙ্গুর থেকে কৃষকদের নিয়ে নতুন করে অক্সিজেন খোঁজার চেষ্টা করবে। এসবই ২০২৪-এর লক্ষ্যে। কেননা কৃষি আইন করে যে ক্ষত হয়েছে, তা মেটানোর জন্য নতুন এই প্রচেষ্টা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কৃষকদের দাবি মেনে না নিলে আগামীদিনে নবান্ন অভিযানে
সিঙ্গুর-সংকট নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়ে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারের গোপালনগর মৌজায় ধর্না শুরু করেছে বিজেপি। ধর্নায় অংশ নিয়ে সিঙ্গুরের অভিশপ্ত মাঠের দিকে আঙুল উঁচিয়ে তিনি বলেন- এখানে কিছুই হল না। না হল শিল্প, না হল কৃষি। মুখ্যমন্ত্রী সর্ষে ছড়ালেন, তাও কিছু হল না, শিল্পও হল না। তিনি বলেন, এই রাজ্যে নেত্রী বটে, শিল্প ভাগান গুজরাতে। তিনি বলেন, কৃষকদের দাবি মেনে না নিলে আগামী দিনে নবান্ন অভিযানে নামবেন তারা।