সিপিএমে ভাঙন আসন্ন! প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে নতুন দলের ভাবনা বঙ্গ-ব্রিগেডের
বঙ্গ সিপিএমের ভবিষ্যতের নিরিখে ভোটাভুটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাতে কারাত শিবিরের কাছে ইয়েচুরি শিবিরের পরাজয় বঙ্গ সিপিএমকে একেবারে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছে।
সিপিএমের তাহলে ভবিষ্যৎ কী? কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে কংগ্রেসের হাত ধরা নিয়ে ভোটাভুটি্র পর এখন এই প্রশ্নই উঠে পড়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রকাশ কারাত বনাম সীতারাম ইয়েচুরি যুদ্ধ কার্যত প্রমাণ করে দিয়েছে সিপিএম এখন আদতে দুটি দল। বিশেষ করে বঙ্গ সিপিএমের ভবিষ্যতের নিরিখে এই ভোটাভুটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তাতে কারাত শিবিরের কাছে ইয়েচুরি শিবিরের পরাজয় বঙ্গ সিপিএমকে একেবারে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছে।
সিপিএম যে পার্টি লাইনে থাকতে চাইছে, তাতে বঙ্গ সিপিএম যে ধুলিসাৎ হয়ে যাবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। তাই বাংলায় সিপিএমকে ফের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে নতুন আঙ্গিকে উদ্ভব হতে পারে এক নয়া পার্টির। বলা যায় নতুন রূপে অবতীর্ন হতে পারে সিপিএম। সিপিএম ভেঙেই সিপিএমের নয়া সংস্করণ তৈরি করা হতে পারে। পরিস্থিতি ক্রমশ সেদিকেই এগোচ্ছে।
বঙ্গ সিপিএম মনে করছে এই মুহূর্তে তাঁদের প্রধান শত্রু তৃণমূল ও বিজেপি। কিন্তু কারাত শিবির তা মানতে নারাজ। কারাতের মতে, তাঁদের পয়লা নম্বর শত্রু বিজেপি, আর কংগ্রেসও তাঁদের শত্রু। দুই দল থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে চলতেই তিনি পছন্দ করেন। তিনি চান সিপিএমের পার্টি লাইনও হোক সেটাই। অবশ্যই রাজ্যে সিপিএমের প্রধান শত্রু তৃণমূল। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক জোট গড়ে কংগ্রেস ও বিজেপির সঙ্গে সমদূরত্ব রেখে সেই শক্তিকে শেষ করতে হবে।
কিন্তু বঙ্গ সিপিএম কারাতের এই যুক্তির ঘোর বিরোধী। সূর্যকান্ত মিশ্র, গৌতম দেব থেকে শুরু করে সুজন চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্য, নেপালদেব ভট্টাচার্য-রা চান না ওই সেকেলে যুক্তি মানতে। বঙ্গ শিবির কারাতের উপর চটে রয়েছে। বাংলার সিপিএম বলছে, কারাত যে পার্টি লাইনের কথা বলছেন, সেই পার্টি লাইনেই তো এতদিন চলে এসেছে সিপিএম। তাতে কী লাভ হয়েছে?
গৌতম-সুজনদের প্রশ্ন, বাংলা-ত্রিপুরা আর কেরল ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যে কি প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে সিপিএম? পারেনি। এখনও তাহলে সেই পার্টি লাইন আঁকড়ে থেকে কী হবে। এ রাজ্যেও সিপিএম অপ্রাসঙ্গিক হতে বসেছে। অস্তিত্বহীন হওয়ার আগে তাই একবার শেষ দেখতে চান বঙ্গ সিপিএমের বর্তমান কর্তাব্যক্তিরা।
তাঁরা চান সিপিএমের নয়া সংস্করণ গড়ে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে। কেননা বিজেপি-র এ রাজ্যে কোনও ভিত্তি নেই। এখন যেটুকু বাড়বাড়ন্ত রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ায়। সিপিএম যদি নতুন আঙ্গিকে ফিরে আসতে পারে, তাহলে তারাই হবে প্রধান বিরোধী শক্তি। সেই লক্ষ্যেই এগোতে চাইছে সিপিএমের বঙ্গ ব্রিগেড।
সীতারাম ইয়েচুরির হারের পর কারাতকে শিক্ষা দিতে চাইছে বঙ্গ ব্রিগেড। কেননা কারাটের উপর বঙ্গ সিপিএম দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ। তার প্রথম কারণ জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী না হতে দেওয়া, তারপর পরমাণু ইস্যুতে ইউপিএ ওয়ান সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়া।
এখানেই শেষ নয়, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে স্পিকার পদ থেকে সরানো এবং বহিষ্কার- এমন হাজারো প্রশ্নে বেঙ্গল লবি কারাট বিরোধিতায় সামিল। তাই এবার কারাট শিবিরকে উপযুক্ত জবাব দিতে বাংলা সিপিএমের নয়া সংস্করণ গড়ার পক্ষে অনেকেই। সেক্ষেত্রে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হলেও আপত্তি নেই। একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা হবে বাংলায় ফের বামপন্থাকে ফিরিয়ে আনা যায় কি না।
বুদ্ধ-বিমানরা তাই এখন কোন পদক্ষেপ নেন, তাঁরা কোনদিকে থাকেন তা নিয়ে দোলাচলে আছেন উভয়েই। তবে সূর্যকান্ত মিশ্র যে সিপিএমের বঙ্গ সংস্করণের মুখ হতে পারেন, তা বলাই যায়। কেননা তিনিই প্রথম থেকে বলে আসছেন, বাংলায় তৃণমূল তাঁদের প্রধান ও প্রথম শত্রু। তারপর বিজেপি। তিনি বিশ্বাস করেন, তৃণমূলকে না হটিয়ে বিজেপিকে সরানো যাবে না। সেই অবস্থান নিয়েই নতুন করে যুদ্ধ শুরু হতে পারে বাংলায়।