আরও এক নক্ষত্র পতন বাংলার সুরের জগত থেকে, জীবনাবসান অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের
এ মাসেই তিন নক্ষত্র ঝরে গিয়েছে সুরের জগৎ থেকে। ফের আরও এক নক্ষত্র পতন হল বাংলা গানের জগতের। সপ্তাহের শুরুতেই বাংলার গানের এক প্রবাদপ্রতিম সুরকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনাবসান হল।
এ মাসেই তিন নক্ষত্র ঝরে গিয়েছে সুরের জগৎ থেকে। ফের আরও এক নক্ষত্র পতন হল বাংলা গানের জগতের। সপ্তাহের শুরুতেই বাংলার গানের এক প্রবাদপ্রতিম সুরকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনাবসান হল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শ্যামল মিত্র, মান্না দে, হৈমন্তী শুক্লা, সুবীর সেনদের অনেক গানের সুরসৃষ্টি করেছিলেন তিনি।
সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলা সঙ্গীত জগতের খ্যাতনামা সুরকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর জানান সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্র ও রূপঙ্কর বাগচি। বেশ কিছউদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মাজে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালেও। দিন কয়েক আগে হাসপাতালে থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন। সোমবার সকালে তিনি বাড়িতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা রয়েছেন।
বহু কালজয়ী গান উপহার দিয়ে গিয়েছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া বহু গান রয়েছে। সলিল চৌধুরীর প্রিয় মানুষের তিনজনের একজন হলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সলিল চৌধুরী তাঁর প্রিয় তিন মানুষকে ডাকতেন প্রবীরানলাভিজিৎ নামে। প্রবীরানলাভিজিৎ-রা হলেন প্রবীর মজুমদার, অনল চট্টোপাধ্যায় ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনজনই বাংলা সঙ্গীত জগতের অন্যতম সেরা সুরকার।
সেই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার সঙ্গীতজগৎ। এক সপ্তাহ আগেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গানের ভুবন ছেড়ে চলে গিয়েছেন অমূতলোকে। তাঁর পরদিনই বাপ্পি লাহিড়ী পাড়ি দিয়েছেন অন্য সুর-লোকে। সন্ধ্যার আগে লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণ ঘটেছে। এবার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বাংলা সঙ্গীতজগৎ স্তব্ধ হয়ে গেল।
ছোটবেলা থেকেই গানের পরিবেশে মানুষ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। মা-বাবা উভয়েই গান জানতেন, গান গাইতেনও। পারিবারিক সূত্রে তিনি ব্রাহ্ম। ফলে ব্রাহ্মসঙ্গীত ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাথায় বসে ছিল। এরই মধ্যে সলিল চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর সঙ্গীতে সলিল চৌধুরীর মিউজিকের প্রভাব বহুবার দেখা গিয়েছে। মুক্তকণ্ঠে তিনি সলিল চৌধুরী গুরু মেনেছিলেন।
একদিন দাদা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় অভিজিৎকে একটা কবিতা দিয়ে বলল, সুর করে দিতে। অভিজিৎ বলল কী করে সুর করব। অরিন্দমও নছোড়বান্দা। তারপর অভিজিৎ সুর করে দিয়েছিলেন, তা অনেকটা রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো হয়েছিল। অরিন্দম বলেছিলেন, ঠিক আছে। তারপর সতেন্দ্রনাথের আর একটি কবিতা দিয়ে তিনি বলেছিলেন সুর করে দিতে। অভিজিৎ সুর করে দেন। তা সলিল চৌধুরীর এতটাই পছন্দ হয়েছিল তিনি শ্যামল মিত্রকে দিয়ে গাইয়েছিলেন। রেকর্ডিংয়ে অরগ্যান বাজিয়েছিলেন স্বয়ং সলিল চৌধুরী। 'ছিপখান তিন দাঁড় তিনজন মাল্লা চৌপর দিনভর দ্যায় দূর পাল্লা'। তারপর তা ইতিহাস।
অভিজিৎ সুরসৃষ্টিতে কত কালজয়ী গান হয়েছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন- সোনালি চম্পা আর রূপালি চন্দ্রকলা, আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো, এমন একটা ঝড় উঠুক। মান্না দে গেয়েছিলেন- কে তুমি কে তুমি শুধুই ডাকো, শ্যামল মিত্র তাঁর সুরে গেয়েছিলেন- হংসপাথা দিয়ে নামটি তোমার লিখি, আশা ভোঁসলে গেয়েছিলেন- ও পাখি উড়ে আয় উড়ে আয়, যদি কানে কানে কিছু বলে বঁধুয়া, নির্মলা মিশ্র গেয়েছিলেন- বলতো আরশি তুমি মুখটি দেখে, সুবীর সেন গেয়েছিলেন- যদি আমাকে দেখো তুমি উদাসিনী, সারাদিন তোমায় ভেবে, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়েছিলেন- দোল দোল চতুর্দোলা, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়েছিলেন- তোমার দুচোখে আমার স্বপ্ন আঁকা, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় গাইলেন- কপালে কপলে সিঁদুর সিঁদুর টিপ পরেছো, পিন্টু ভট্টাচার্য গেয়েছিলেন- ফুলে ফুলে বধূ দুলে দুলে, হৈমন্তী শুক্লা গেয়েছিলেন- এখনও সারেঙ্গিটা বাজছে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন- তারা ঝিলমিল স্বপ্ন মিছিল।