বাঘ-তরজায় শিয়াল-কটাক্ষ! বিমান-সুব্রত বাকযুদ্ধে সঙ্গত করলেন দিলীপ-প্রদীপরাও
বাঘ নিয়ে তরজা শুরু করল শাসক-বিরোধীরা। বিরোধীরা ঘুরিয়ে সরকারের উপর দায় চাপাতেই সরকার পক্ষ কটাক্ষ করল বিরোধীদের।
বাঘ নিয়ে তরজা শুরু করল শাসক-বিরোধীরা। বিরোধীরা ঘুরিয়ে সরকারের উপর দায় চাপাতেই সরকার পক্ষ কটাক্ষ করল বিরোধীদের। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মন্তব্যকে খাটো করে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সু্ব্রত মুখোপাধ্যায় শেয়াল বলে কটাক্ষ করলেন তাঁকে। বাঘ-তরজায় তাঁকে শেয়াল-কটাক্ষে রাজ্য রাজনীতির আঙিনা ফের উত্তাল হল।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বাঘঘরায় জঙ্গলের মধ্যে বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার হয় শুক্রবার। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। বাঘটির গলা বল্লম-বিদ্ধ ছিল। এরপরই কে খুন করল বাঘটিকে, তা নিয়ে তরজায় চোরা শিকারিদের কথা উঠে আসে। উঠে আসে আদিবাসী শিকারিদের কথাও।
বছরের এই সময়ে আদিবাসীরা জঙ্গল সফরে বের হন শিকারের উদ্দেশ্যে। এবার লালগড়ের জঙ্গলে বাঘের দেখা মেলায় বন দফতরের তরফে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল জঙ্গলে শিকারে যাওয়ার ব্যাপারে। তবু সেই নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করে অনেকেই গিয়েছিলেন শিকারে। আক্রান্তও হয়েছিলেন তাঁদের অনেকে। শেষমেষ বাঘের বল্লম-বিদ্ধ দেহ মিলতেই আদিবাসী শিকারিদের ঘাড়েও এই খুনের দায় চাপানো হয় কোনও কোনও পক্ষ থেকে।
এরপর এদিন এই প্রসঙ্গেই বিমান বসু বলেন, বাঘটি শিকারিদের দ্বারা হত্যা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তা বলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর সরাসরি এই দায় চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। কারা বাঘটিকে হত্যা করল, তা আগে তদন্ত করে জানার পরই দোষ চাপানো উচিত।
তিনি বলেন, শিকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি। বাঘ-খুনের দায় চাপালে তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। এই অপবাদ দেওয়া উচিত নয়। বনদফতরের উচিত ছিল লোক বাড়ানো। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, তা করতে পারেনি। এখন আদিবাসীদের উপর দোষ চাপিয়ে দায় সারতে চাইছে।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিমান বসুর এই মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, উনি তো শেয়াল, তাই সঠিক সময়ে বলে দিয়েছেন এই কথা। তিনি আরও বলেন, বাঘটিকে হত্যা করা হয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। বাঘটি ধরার সমস্ত রকম চেষ্টা চালাচ্ছিল বন দফতর। তবু কেন এই ঘটনা ঘটে গেল, তা মুখ্যমন্ত্রী নিজে তদন্ত করছেন।
কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, এই বাঘ-হত্যা বন দফতরের অপদার্থতাই প্রমাণ করে। বন দফতরের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত ছিল। বন দফতর বসেছিল কবে বাঘ ধরা দেবে। একই সুর বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলায়। তিনি বলেন, বাঘ ধরা নিয়ে দুমাস ধরে নাটক করে গিয়েছে বন দফতর। সরকার ব্যর্থ। শুধু ড্রোন নামিয়ে ড্রামা বাজি হয়েছে। আসলে পঞ্চায়েত ভোটের মরশুমে বিরোধীরা যেভাবে আক্রান্ত হয়েছে, তেমনই শিকার হয়েছে বাঘ। বাঘটি বড় ভুল সময়ে ঢুকে পড়েছিল লালগড়ের জঙ্গলে।
এদিন বন্যপ্রাণ আইন মেনে বাঘটির ময়নাতদন্তের পর শেষকৃত্য করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, বিষক্রিয়ায় নয়, বল্লমের খোঁচায় মারা গিয়েছে বাঘটি। বাঘের মাথায় খুলিটি ভাঙা ছিল। গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ৬ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা ১০-১২ বছরের বাঘটির ওজন ছিল ২২০ কেজি।