পরোয়ানা ‘ভুলে’ একমঞ্চে মানস-ভারতী, শাসক-ছত্রছায়ায় সাহসী কর্মী-খুনে অভিযুক্ত বিধায়ক
এক মঞ্চে মানস ভুঁইয়া ও ভারতী ঘোষ। প্রথম জন সবংয়ের তৃণমূলকর্মী জয়দেব জানা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত বিধায়ক, অন্যজন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার।
ঝাড়গ্রাম, ২ নভেম্বর : এক মঞ্চে মানস ভুঁইয়া ও ভারতী ঘোষ। প্রথম জন সবংয়ের তৃণমূলকর্মী জয়দেব জানা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত বিধায়ক, অন্যজন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার। ঝাড়গ্রামে আয়োজিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে পাশাপাশি উপস্থিত থেকেও ভুললেন গ্রেফতারি পরোয়ানা। তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
সদ্য কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। দলবদলের পরই অনেকেই সুর তুলেছিলেন, তৃণমূলকর্মী জয়দেব জানা হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারি এড়াতেই তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে ৪০ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছেন। সেই মানস ভুঁইয়া হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর মেদিনীপুরে গেলে তিনি যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারেন, এমন আশঙ্কা রয়েই যায়।
কিন্তু এতদসত্ত্বেও সব ভউলে যখন পুলিশ সুপার ও অভিযুক্ত বিধায়ককে একই মঞ্চে দেখা যায়, তখন বিস্মিত হতেই হয়! স্বভাবতই সাধারণ মনে প্রশ্ন জাগে, শাসক দলে থাকার 'অভয়-বাণী' নিয়ে। মানসবাবুর ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। তিনিও যে অভয়বাণী পেয়েছেন! তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত থেকেছেন বুক ফুলিয়ে।
এখন আর তাঁর গ্রেফতারির ভয় নেই! সেই মঞ্চে পুলিশ সুপার স্বয়ং রয়েছেন, তাতে কী! গ্রেফতারি? নৈব নৈব চ। বিরোধীরা অবশ্য কাটা ঘাটে নুনের ছিটে দিতে ছাড়েনি। বিরোধীদের বক্তব্য, রাজনৈতিক দিক থেকে তিনি এখন শাসক দলে থাকতেই পারেন, তা বলে আইনগত প্রশ্নে তিনি কী করে গ্রেফতারি এড়াতে পারেন? যেখানে তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, হাইকোর্ট যেখানে আগাম জামিন নাকচ করে দিয়েছে!
কিন্তু সবই সম্ভব শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকলে। মানসবাবুকে সে প্রশ্ন করলে, তিনি যথারীতি এড়িয়ে গিয়েছেন। ওই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। ওই অভিযোগকেও বিরোধীদের সাজানো বলে ব্যাখ্যা করেছেন মানসবাবু। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর এই সর্বধর্ম সমন্বয়ের মঞ্চকে স্বতন্ত্র উদ্যোগ বলেও বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, দেশের আর কোনও মুখ্যমন্ত্রী এমনভাবে ভাবেননি।
তবে এই বিজয়া সম্মিলনীও বিতর্ক থেকে রেহাই পেল না। এই বিজয়া সম্মিলনীতে ডাক না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে লালগড়ের ক্লাবগুলি। কেন তাঁরা ব্রাত্য, তার সঠিক উত্তর জানা নেই ক্লাব সদস্যদের। মুখ্যমন্ত্রী এদিনের অনুষ্ঠান থেকেই ছটপুজোর সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন।