দুর্নীতির দায়ে ১৮৬ কোটি টাকা গুণাগার দিলেন মমতা! জানেন, কার পাপে এই সাজা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতদিন অভিযোগ করতেন, বাম আমলের বিপুল ঋণের বোঝা রয়েছে তাঁর মাথার উপর। এবার নতুন এক বোঝা চাপল, ১৮৬ কোটি টাকা মেটাল সরকার।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। সারদা থেকে শুরু রোজভ্যালিসহ একাধিক চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে। হালে আবার নারদ ঘুষ কেলেঙ্কারির দায় বর্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের উপর। কিন্তু এরই মধ্যে একটা বড় অঙ্কের টাকা গুনাগার দিতে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে হওয়া লোহাচুর কেলেঙ্কারির সেই বিপুল আর্থিক দায় নিয়ে ১৮৬ কোটি টাকা পরিশোধ করল তৃণমূল সরকার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতদিন অভিযোগ করতেন, বাম আমলের বিপুল ঋণের বোঝা রয়েছে তাঁর মাথার উপর। তাঁকে কেন্দ্রের কাছে ওই ঋণের যে সুদ মেটাতে হয়, তাতে উপার্জনের অধিকাংশই চলে যায়। ফলে রাজ্যে উন্নয়ন ব্যহত হয়। বারবার কেন্দ্রের কাছে ঋণ মকুবের আবেদন করেও সুরাহা মেলেনি। এবার নতুন এক বোঝা চাপল রাজ্যের উপর। উপায় না থাকায় শেষপর্যন্ত খাদ্য দফতরের তরফে লোহাচুর কেলেঙ্কারিতে বকেয়া ১৮৫ কোটি ৮৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৩০ টাকা মিটিয়ে দিতে হল জরুরি ভিত্তিতে।
বাম আমলে ২০০৫ সালে চিনে আকরিক লোহা রফতানির জন্য বিপুল ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে নেওয়া সেই ঋণ সম্পূর্ণ শোধ করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। ২০০৭ সালে বকেয়া ঋণ বাবদ ২৩২ কোটি টাকা সাতটি বার্ষিক কিস্তিতে পরিশোধ করার জন্য ব্যাঙ্ক ও খাদ্য দফতরের অধীন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম (ইসিএস)-এর মধ্যে চুক্তি হয়। রাজ্য সরকার ৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে। বকেয়া কিস্তি না মেটানোয় তা সুদে আসলে দাঁড়ায় প্রায় ১৮৬ কোটি।
উল্লেখ্য, বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে লোহা আকরিক রফতানি করা হয়েছিল। কিন্তু চিন পর্যন্ত ওই লোহা পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। এই ঋণ মেটানোর জন্য বিপুল চাপ ছিল খাদ্য দফতরের উপর। ঋণ পরিশোধ না করে কোনও উপায় ছিল না খাদ্য দফতরের। অক্টোবরের মধ্যে ওই টাকা না পরিশোধ করলে ইসিএসসি-কে দেউলিয়া ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেত। সেই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতেই বাম আমলের বকেয়া মেটানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, টাকা না মেটালে ইসিএসি-কে দেউলিয়া ঘোষণা করে নিলাম করে বকেয়া টাকা তুলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। এই প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ফের বাম আমলের বিপুল বকেয়া মেটাতে হল তৃণমূল সরকারকে। আমরা চেয়েছিলাম অন্তত সুদ ছাড় দেওয়া হোক। সেক্ষেত্রে ১৫৬ কোটি টাকা মেটাতে হত। কিন্তু সেখানেও ছাড় না মেলায় ১৮৬ কোটি টাকা মেটাতে হল। প্রবল আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও বকেয়া পরিশোধ করতে গিয়ে নতুন ধান কিনতে বিপাকে পড়তে হবে খাদ্য দফতরকে। উল্লেখ্য, এই ইসিএসসি-ই সরকারি উদ্যোগে চাষিদের কাছে থেকে ধান কেনার দায়িত্বে রয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, বামফ্রন্ট সরকার লুঠপাটের রাজনীতি করেছে। সেই টাকা গুনাগার দিতে হচ্ছে তৃণমূল সরকারকে। লোহাচুর কেলেঙ্কারির টাকা বামফ্রন্টের বড়-ছোট শরিকদের পকেটেও গিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। প্রাক্তনমন্ত্রী নরেন দে-র দিকেও আঙুল তোলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে ফের তদন্তে গতি আনার জন্য চিঠি দিয়েছি। এই টাকা কার উদর পূর্তি হয়েছে, তা অবিলম্বে জানা দরকার। দরকার অনতিবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার।
প্রাক্তনমন্ত্রী নরেন দে এ প্রসঙ্গে অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, 'সিআইডি আগে আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। আমি লিখিত উত্তর দিয়েছিলাম সমস্ত প্রশ্নের। আমার উত্তরে সিআইডি সন্তুষ্ট হয়েছিল বলেই আর জিজ্ঞাসাবাদ এগোয়নি।' তিনি খাদ্য দফতরের দায়িত্বে আসার আগেই বিষয়টি ক্লোজড চ্যাপ্টার হয়ে যায় বলে দাবি প্রাক্তনমন্ত্রীর। ইতিমধ্যে সিআইডি চার্জিশটও পেশ করেছে এই মামলায়।