নতুন আশার পাহাড় সফরে নয়া সমীকরণের খোঁজে মমতা, মোদী-হটানোর ‘ব্লু-প্রিন্ট’ তৈরি
দেশ থেকে মোদী-রাজ হটানোই তাঁর উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যে পাহাড় রাজনীতির ব্যাটনও নিজের হাতে রাখার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে পাহাড়ে পা রেখেছেন মমতা।
আট মাস পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পা রাখলেন পাহাড়ে। নতুন সাজে সেজে উঠে শান্ত পাহাড় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাগত জানাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিনিময়ে দিয়েছেন নতুন আশা। সেইসঙ্গে ছোট ছোট চালে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার পাখির চোখ লোকসভা ভোট। দেশ থেকে মোদী-রাজ হটানোই তাঁর উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যে তিনি ঘুঁটি সাজিয়েছেন। পাহাড় রাজনীতির ব্যাটনও নিজের হাতে রাখার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে তিনি পাহাড়ে পা রেখেছেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরে বেনজির পুলিশি নিরাপত্তা ছিল। পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে আনা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। পাহাড়ের একাধিক জায়গা এদিন পরিদর্শনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী কিছু কর্মসূচিও রেখেছিলেন। যেমন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ- পাহাড়ের রোহিনী রোড প্রাক্তন জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিংয়ের নামে করা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি জিএনএলএফকে কাছে টানতে চাইলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টারস্ট্রোকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায় ফাটল ধরেছে। এখন অধিকাংশ মোর্চা নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেছেন। বিমল গুরুংকে কার্যত 'একা' করে দিয়েছেন তিনি। গুরুংয়ের শিবির থেকে এক এক করে তিনি কেড়ে নিয়েছেন বিনয় তামাং, অনীত থাপাদের। তারপর পাহাড়ের মোর্চা বিধায়করাও এখন মমতা-পন্থী হয়ে উঠেছেন।
শুধু মোর্চাই নয়, পাহাড়ের অন্যান্য দলও এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সহমত। তাঁরা চাইছেন পাহাড়ে শান্তি বিরাজ করুক। আবার সুদিন ফিরে আসুক পাহাড়ে। পাহাড়ে আবার ভিড় জুমক পর্যটকদের। সেইকারণেও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক সঙ্গে পথ চলতে আগ্রহী।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে তাই অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে উদ্দেশ্যে কী বার্তা দেন, সেদিকেই তাকিয়ে পাহাড়বাসী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য-সমর্থকদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি সমস্ত রাজনৈতিক দলের পাশে রয়েছেন। সবাইকে নিয়েই তিনি চলতে চান।
উল্লেখ্য, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে তিন মাস ভর আগুন জ্বলেছে। অনেক সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, অকালে ঝরে গিয়েছে অনেক প্রাণ। শেষপর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্যে অবিচল থেকে পাহাড়ে ফের শান্তি ফিরিয়েছেন। এবার গুরুং-হীন পাহাড়কে নতুন করে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজে গতি দিতেই মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন পাহাড় সফরে।
তবে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের আগে এই পাহাড় সফরে এবার আরও বড় হয়ে উঠেছে ভোট-অঙ্ক। মে-জুন মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট আর বছর ঘুরলেই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির লড়াই। তার আগে বিজেপির প্রভাব ধুয়ে-মুছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শক্তিশেল প্রয়োগ করবেনই এই সফরে।