কৃষকবন্ধুর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মমতা কৃষকদের মন জয়ে বাজেট বরাদ্দ বাড়ালেন কয়েক গুণ
রাজ্য সরকারের তরফে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেট আজ বিধানসভায় পেশ করলেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পরে বিধানসভায় নিজের ঘরে বসে বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিকগুলি বিশ্লেষণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের মন জয়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কাজের খতিয়ান দিয়ে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কৃষিজ বিপণন ক্ষেত্রেও বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে।
বরাদ্দ বৃদ্ধি
২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেটে কৃষি বিভাগের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯,৩১০ কোটি টাকা। কৃষিজ বিপণন দফতরের জন্য বরাদ্দ ৪০৩.৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সেচ ও জলপথ পরিবহণ বিভাগের জন্য ৩,৮০০.০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই পেশ হওয়া বাজেটে কৃষিক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৯,১২৫ কোটি টাকা। কৃষিজ বিপঅন বিভাগে বরাদ্দ ছিল ৩৯১.৯৩ কোটি টাকা। সেচ ও জলপথ পরিবহণে বরাদ্দ ছিল ৩,৬৪৭.০৩ কোটি টাকা।
কৃষকবন্ধু প্রকল্প
কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে যে রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব দেয় তা স্পষ্ট রাজ্য বাজেটে। প্রথমেই রয়েছে কৃষি বিভাগের কাজের বিস্তারিত খতিয়ান। কৃষকবন্ধু প্রকল্পকে পুনর্গঠন করে কৃষকবন্ধু (নতুন) নামে চালু করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৭৭.৯৫ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের সহায়তা পেয়েছেন। যার মধ্যে ১,৮১৮.৯৯ কোটি টাকা খারিফ ও ২,২১৬.১০ কোটি টাকা রবি মরশুমে দেওয়া হয়েছে। কৃষকবন্ধু (মৃত্যজনিত) ক্ষতিপূরণ প্রকল্পের অধীনে ৩৮,৫৩৩ জন মৃত কৃষক পরিবারের হাতে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ সালে আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত ১৭,৮৫৫ কৃষক পরিবার রয়েছে। কৃষকবন্ধু বার্ধক্যজনিত পেনশন প্রকল্পের অধীনে উপকৃতের সংখ্যা ৮৬,৫২৩ জন। জয় বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁরা ১ হাজার টাকার পেনশন প্রতি মাসে পাচ্ছেন।
মমতা-স্পর্শ
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে যশ-এর ক্ষতিপূরণ বাবদ দুয়ারে ত্রাণ কর্মসূচিতে কৃষকবন্ধুদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে ২৬১ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ১৮.০৫ লক্ষ কৃষককে ডিবিটির মাধ্যমে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হয়। ১৫.৬৬ কোটি টাকা জরুরি ত্রাণের ভিত্তিতে ব্যয় করা হয়েছে। ২.৩ লক্ষ বিঘা লোনা লাগা ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে নোনা স্বর্ণ প্রজাতির ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২ লক্ষ কুইন্টাল ধান উৎপাদন হবে, যার বাজারমূল্য ৪০ কোটি টাকা।
কৃষিসেচের উপভোক্তা
বাংলা কৃষিসেচ যোজনার মাধ্যমে ২০২১ সালের ডিসেম্বর অবধি ৬৪,৫১৮ জন সুবিধাভোগী কৃষকের ২১,১১৯ হেক্টর জমি সেচসেবিত করা হয়েছে। বঙ্গশ্রী ব্র্যান্ডের ১৩০ মেট্রিক টন উন্নত প্রজাতির আলুবীজ কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। ভুট্টা চাষের জমি বাড়়াতে স্টেট ডেভেলপমেন্ট স্কিম চালু হয়েছে। যার আওতায় ৪০ হাজার হেক্টর জমি ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ভুট্টা চাষে ব্যয় করা যাবে। ৯ বছরের মধ্যে ৪০,৩৭৩ হেক্টর পতিত জমিকে কৃষিজমির আওতায় আনা হয়েছে। ২ হাজার মেট্রিক টন raw সিল্ক উৎপাদনে ব্যাপক কর্মসূচি রাজ্য হাতে নিয়েছে।
সুফল বাংলা
রাজ্য সরকারের দাবি, ২০১৪ সালে চালু হওয়া সুফল বাংলা প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে সারা রাজ্যে ৬৩টি মোবাইল ভ্যান, ৩টি হাব ও ৩৫১টি বিপণন কেন্দ্র চালু হয়েছে। দিনপ্রতি ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৭৫ থেকে ৮০ মেট্রিক টন কৃষিজ শস্য সুফল বাংলা বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রয় হচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিন ২.৪ থেকে ২.৬ লক্ষ ক্রেতা সুবিধা পাচ্ছেন।
সেচের বিস্তার
২০২১-২২ বর্ষে দক্ষিণবঙ্গে মাঝারি ও ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের অধীনে সংস্কারসাধন করে ৬২,৯৩০ একর জমিকে সেচসেবিত ও চাষযোগ্য করে তোলা হয়েছে। খারিফ মরশুমে সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে ২১.২০ লক্ষ একর জমিকে চাষযোগ্য করে তোলা হয়েছে। রবি-বোরো মরশুমে ডিভিসি ও সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ৬.৪০ লক্ষ একর জমিতে সেচ ব্যবস্থার জন্য রিজার্ভারগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে জল ধরে রাখা হয়েছে। রবি-বোরো মরশুমে এত বড় অঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা গ্রহণ বিগত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করেছে রাজ্য সরকার।