খোলনলচে পরিবর্তন! বদলে যাওয়া নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে কী বলছেন কলকাতার নামী শিক্ষাবিদেরা
খোলনলচে পরিবর্তন! বদলে যাওয়া নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে কী বলছেন কলকাতার শিক্ষাবিদেরা
প্রায় ৩৪ বছর পর বদলাতে চলেছে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে। বুধবারই কেন্দ্রের তরফে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হল। নতুন শিক্ষানীতির হাত ধরে উঠে যেতে চলেছে প্রথাগত মাধ্যমিক পরীক্ষা ব্যবস্থা। তুলে দেওয়া হচ্ছে এম.ফিল। চালু করা হচ্ছে চার বছরের স্নাতক কোর্সও। এদিকে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের পরেই তুমুল শোরগোল পড়ে গেছে শিক্ষা-মহলে। অভিভাবক থেকে পড়ুয়া, কেন্দ্রের আচমকা ঘোষণার পর এই নয়া শিক্ষানীতির ঠিক ভুল বিচার করতে বসে দিশেহারা অনেকেই। এমতাবস্থায় কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতির বিষয়ে ভালো-খারাপ দিক নিয়ে ওয়ান ইণ্ডিয়ায় বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদেরা।
‘দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচ্ছন্ন ভাবে গেরুয়া-করণের চেষ্টা চলছে’, মত ওম প্রকাশ মিশ্রের
এদিকে নয়া নীতিতে স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে একগুচ্ছ সংস্কার মুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই সমস্ত সিদ্ধান্ত ঠিক কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন সমাজের বিভিন্ন মহলের বিশিষ্ট জনেরা। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ওম প্রকাশ মিশ্রকে কেন্দ্রের অনেক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্বিমত পোষণ কর দেখা যায়। তাঁর কথায়, " এই নতুন শিক্ষানীতি বাস্তব শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে কার্যত সম্পর্কহীন।" পাশাপাশি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির সিদ্ধান্তকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাধান্য দেওয়া হয়নি বলে তাঁর মত। পাশাপাশি বিজেপি শাসিত বর্তমান কেন্দ্র সরকার গোটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রচ্ছন্ন ভাবে গেরুয়া-করণের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
(ওম প্রকাশ মিশ্র, বিভাগীয় প্রধান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)
মাধ্যমিক পরীক্ষা তুলে দেওয়ায় হতাশার সুর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের গলায়
এদিকে নতুন এই শিক্ষা নীতির বেশ কিছু আঙ্গিক ভারতের মতো দেশে কিভাবে বাস্তবোচিত উপায়ে প্রয়োগ করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে খানিক চিন্তায় রয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। মাধ্যমিক তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গেও এদিন তার গলায় হতাশার সুর শোনা গেল। তাঁর কথায়, "কোনও পড়ুয়ার জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষা ছিল মাধ্যমিক। কিন্তু সেটা এখন তুলে দেওয়া হলে একজন ছাত্র প্রথম বড় ধাক্কা খেতে চলেছে সরাসরি ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষায়। পূর্ববর্তী বড় পরীক্ষার কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তাকে একাধিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বাকিদের সঙ্গে ইঁদুর দৌড়ে নামতে হবে।"
(চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, সহ উপচার্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ছবি সৌজন্যে - রিসার্চগেট.নেট)
বিশ্ববিদ্যালয় গুলির আর্থিক স্বশাসনের বিষয়ে কি বলছেন যাদবপুরের শিক্ষাবিদেরা ?
এদিকে নয়া শিক্ষানীতিতে গুণগত মানের নিরিখে প্রাপ্ত গ্রেডের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে আর্থিক স্বশাসনেরও নির্দেশ দেওয়া রয়েছে কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিতে। এই বিষয়টির সরাসরি বিরুদ্ধতা করতে দেখা যায় শিক্ষাবিদ ওম প্রকাশ মিশ্রকে। অন্যদিকে এর ফলে রুশা সহ একাধিক কেন্দ্রীয় আর্থিক প্রকল্পের সুবিধা পেতে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় গুলির আগামীতে বিশেষ সুবিধা হবে বলে জানান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহ উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
সৌজন্যে - যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পোর্টাল
পাঁচ বছরের ইন্টিগ্রেটেড কোর্স কতটা যুক্তিযুক্ত ?
আর্থিক স্বশাসনের ক্ষেত্রে হাভার্ড, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহ মার্কিন মুলুকের একাধিক নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরে ব়্যাঙ্কিয়ের ভিত্তিতে আর্থিক অনুদান পাওয়ার কথা তুলে ধরেন চিরঞ্জীব বাবু। যদিও এই ক্ষেত্রে গোটা দেশে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সামনের সারিতে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে নয়া শিক্ষানীতি খানিক অন্তরায় হতে পারে বলেও সতর্কও করেন তিনি।পাশাপাশি সমস্ত বিষয়ে পাঁচ বছরের ইন্টিগ্রেটেড কোর্স চালু ক্ষেত্রেও বেশ কিছু আশঙ্কা বাণী শোনা যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বরিষ্ঠ অধ্যাপক তথা প্রশাসনিক কর্মকর্তার গলায়।
বেসরকারিকরণের দরজা আরও প্রশস্ত হল, কেন্দ্রকে নিশানা ওমপ্রকাশের
এদিকে কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে পদার্থবিদ্যা বা রসায়নের সঙ্গে একইসাথে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের মতো বিষয় নিয়ে একই সাথে পড়া যাবে বলে শোনা যায়। যাদবপুরের একটা বড় অংশের শিক্ষাবিদদের মতে এই চিন্তাধারার বাস্তবায়ন বিদেশে সম্ভব হলেও ভারতে তা বেসরকারিকরণের দরজাকেই আরও প্রশস্ত করবে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কেন্দ্রে বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায় ওম প্রকাশ মিশ্রকে। তাঁর কথায়, "এই মুহূর্তে কোন কলেজে কেমিস্ট্রি আর ফ্যাশন ডিজাইনিং একইসাথে রয়েছে বলতে পারেন ? ইচ্ছামতো সাবজেক্ট চয়েসের বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে ভাল মনে হলেও সব কলেজে এই সুযোগই থাকবে। প্রথম সারির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে এর সামান্যতম সুযোগ থাকলেও সিংহভাগ ক্ষেত্রেই পড়ুয়ারা এই সুযোগ পাবে না। ফলে সহজেই তারা বেসরকারি কলেজের দিকে ঝুঁকবে। "
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী