জঙ্গি সংগঠন ব্ল্যাক উইডোর কাছে প্রশিক্ষণ। পাহাড় দাপাচ্ছে জিএলএ ক্যাডাররাই।
গোর্খা লিবারেশন আর্মিরই পাহাড়ের সাম্প্রতিক গণ্ডগোলের জন্য দায়ী। মদত রয়েছে উত্তর-পূর্বের জঙ্গি সংগঠনের। হরকা বাহাদুরের দলত্যাগও এবং বিভিন্ন জনজাতিকে নিয়ে বোর্ড গঠনেও বিপাকে পড়ে যায় মোর্চা নেতৃত্
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিং-এ মোর্চার হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের পিছনে গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, উত্তর-পূর্বের একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ভারতের বাইরের কিছু শক্তিও পৃথক গোর্খাল্যান্ড গড়তে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে মদত যোগাচ্ছে।
আটই জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দার্জিলিং রাজভবনে তার প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠক করতে যান তখনও তিনি হয়তো, পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে এই হিংসার কথা ভেবেই উঠতে পারেননি। সঙ্গে সঙ্গে জিটিএ-র সদর দফতর এবং আশপাশেও যে গোর্খা লিবারেশন আর্মির কমপক্ষে একহাজার ক্যাডার রয়েছে সে খবরও পুলিশের কাছে ছিল না। এলাকার একাধিক বাড়িতে পাথর, ভাঙা বোতল কিংবা দাহ্য বস্তু জমা করার খবরও ছিল না স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রে এমনটাই খবর।
সূত্রে খবর, মিরিক ও দার্জিলিং-এ থাকা গোর্খা লিবারেশন আর্মির ক্যাডাররাই সাম্প্রতিক গণ্ডগোলের জন্য দায়ী। এদেরকে সরাসরি সাহায্য করেছে জিএলপি। দুহাজার তেরোয় ইউপিএ সরকার মোর্চার এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই জিএলএ-ই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বিভিন্ন জায়গায় হামলার পরিকল্পনা রচনা করে। যার সম্পর্কে কোনও ধারনাই সমতল থেকে আসা পুলিশকর্মীদের কাছে ছিল না।
জঙ্গি সংগঠন হিসেবে জিএলএ গঠন সিআইএসএফের প্রাক্তন জওয়ান অজয় দাভালের হাত ধরে। সঙ্গে ছিলেন মিরিকের যুবক রুদ্র আচার্য। অসম-নাগাল্যান্ড সীমানায় কাজ করা জঙ্গি সংগঠন ব্ল্যাক উইডোর কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় জিএলএ। পনেরো জন সদস্যের কুড়িটি দল অসমের কার্বি আংলং এবং ডিমা হাসাও জেলার দুর্গম এলাকায় এই প্রশিক্ষণ নেয়।
দুহাজার চারসালে জিএলএ-র গঠন হলেও, অর্থের অভাবে দীর্ঘদিন এরা গুপ্ত সংগঠন হিসেবেই কাজ চালাতে থাকে। মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং-এর গাড়ির চালক উমেশ কার্মির গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জিএলএ এবং তাদের অর্থ সরবরাহের দিকটি সামনে আসে।
পাহাড়ের কিছু নেতা যে গোর্খা লিবারেশন আর্মি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন দুহাজার চোদ্দোসালেই সিআইডি রিপোর্টেই তার উল্লেখ রয়েছে। হরকা বাহাদূর ছেত্রী দল ছাড়তেই পাহাড়ে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে মোর্চা নেতৃত্ব। সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল, পাহাড়ের বিভিন্ন জনজাতিকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত। পরবর্তী পর্যায়ে মিরিক পুরসভায় তৃণমূলের জয় এবং একাধিক ওয়ার্ডে তৃণমূলের ভোট বৃদ্ধিও বিপাকে ফেলে মোর্চা নেতৃত্বকে। মোর্চার কিছু নেতা-কর্মীপাহাড়ে নতুন করে অস্ত্র হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মোর্চার যুব শাখা গোর্খা যুব মোর্চার বহু সদস্য দলীয় নেতৃত্বকে অমান্য করেই গোর্খাল্যান্ডের জন্য নতুন করে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এই মুহুর্তে জিএলএ এবং জিএলপি একসঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে এবং তাদের হাতে প্রচুর অস্ত্র ও টাকা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পাহাড় আগের থেকে আরও অশান্ত করার ক্ষমতাও রয়েছে তাদের কাছে।