মুখ্যমন্ত্রী মমতার নয়া তাস জঙ্গলমহলে! জেলাশাসকরাও উন্নয়নের বা্র্তা নিয়ে ঘুরছেন বাড়ি বাড়ি
জঙ্গলমহলের মানুষ কী চাইছে, উন্নয়নের কাজে কী কোনও ঘাটতি আছে, এলাকার জন্য আর কী কী করা দরকার, তা বুঝতে এবার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে শুরু করেছেন এই এলাকার জেলাশাসকরা।
জঙ্গলমহলের মানুষ কী চাইছে, উন্নয়নের কাজে কী কোনও ঘাটতি আছে, এলাকার জন্য আর কী কী করা প্রয়োজন রয়েছে, তা বুঝতে এবার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে শুরু করেছেন এই এলাকার জেলাশাসকরা। এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে তাদের মন বুঝতে চাইছেন তাঁরা। উন্নয়নের কাজ কী করে আরও ভালো করা যায় তার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসকদের অতি সক্রিয়তা
জঙ্গলমহলের জেলাগুলোর জেলাশাসকদের এই অতি সক্রিয়তায় 'অন্য কিছুর গন্ধ' আছে বলে মনে করছেন এলাকার বিরোধী দলের নেতারা। লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল এলাকায় অবস্থিত মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর আসন হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এই সব আসনে জয়ী হয় বিজেপি। জেলা পরিষদগুলি নিজেদের দখলে রাখতে পারলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক আসনে হেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
হারানো জমি ফিরে পেতে মমতার ঘূঁটি
উন্নয়নের কাজে খামতি থাকা, দলের নেতাদের দুর্নীতি ও দলবাজির কারণে জঙ্গলমহলের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দেয় বলে উপলব্ধি করে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। তারপর এই এলাকার হারানো জমি ফিরে পেতে, মানুষের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে ও মানুষের মন বুঝতে 'দিদিকে বলো' কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বাড়িতে বাড়িতে অভিযান জেলাশাসকদের
এই 'দিদিকে বলো' কর্মসূচিতে এলাকায় এলাকায় ঘুরে মানুষের সাথে কথা বলে, এলাকায় রাত কাটাচ্ছেন শাসক দলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়করা। এই বার মানুষের সাথে কথা বলে তাদের মন বুঝতে এলাকায় ঘুরতে শুরু করেছেন এই এলাকার জেলাশাসকরা।
এলাকায় রাত কাটালেন জেলাশাসক
শুক্রবার রাতে লালগড় এলাকার ধরমপুরের ভুলাগেড়া যান ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েশা রানি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আধিকারিকরাও। মানুষের সাথে কথা বলে সেখানে রাতে থাকেন তিনি। একসময় এই এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে মাওবাদীরা। সেই এলাকায় মানুষের কী চাহিদা তা জানার জন্য সেখানে যান জেলাশাসক।
জেলার অলিতে-গলিতে ঘুরবেন জেলাশাসক
আয়েশা রানি বলেন, মানুষ সরকারি পরিষেবা কতটা পাচ্ছে, কী পাচ্ছে, তা দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম। মানুষ কী চাইছে তা জানার চেষ্টা করি। তাদের সরকারি পরিষেবা নিয়ে সচেতন করা হয়েছে। এই সবের ফলে আরও ভালো করে উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া যাবে।' জেলার অন্যান্য এলাকাতেও যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জঙ্গলমহলে সব জেলাশাসকই সক্রিয়
পুরুলিয়া জেলাশাসক রাহুল মজুমদার ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল জানিয়েছেন, যে তারা বেশ কিছুদিন ধরেই এই ভাবে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন, মানুষের কথা শুনে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, কাজ করছেন জেলাশাসকরা
গত মাসে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরাতে প্রশাসনিক কাজের পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, আধিকারিকদের জনসংযোগ বাড়াতে হবে, তাদের নিয়মিত এলাকায় গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে হবে। জেলাশাসকরা বলেন, " মুখ্যমন্ত্রী এলাকায় গিয়ে মানুষের সমস্যার কথা শুনে সমস্যার সমাধান করতে বলেছেন। আমরা সেই কাজ করছি"।
সরকারি পরিষেবা নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে
বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জেলা শাসকরা শুনছেন যে একশো দিনের কাজ করে টাকা পাননি অনেক মানুষ। এছাড়া রাস্তা খারাপ, বিভিন্ন ভাতা, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি না পাওয়া, শৌচালয় করে দেওয়া সহ বিভিন্ন দাবি ও অভিযোগ শুনছেন জেলা শাসকরা। এর আগে এই সব এলাকায় গিয়ে মানুষের সমস্যার কথা শুনেছেন বিভিন্ন জেলাশাসক ও পদস্থ আধিকারিকরা।
বিজেপি অন্য গন্ধা পেতে শুরু করেছে
কিন্তু এখন জেলা শাসকদের ঘুরনোর পিছনে অন্য কারণ আছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপি নেতা সুখময় শতপথী ও শমিত দাস বলেন, "এই এলাকার লোকজন তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দিদিকে বলোতেও মানুষ সাড়া দিচ্ছে না। আগে শুধু পুলিশ তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে কাজ করছিল। এখন প্রশাসনকেও মাঠে নামিয়েছে।
আসল কাজ হলে ভালো, নাটক না হয়
পুরুলিয়া জেলার কংগ্রেসের নেতা তথা বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, আসল কাজ হলে ভালো। না হলে পুরোটাই ‘দিদিকে বলো'র মতো নাটক হয়ে যাবে। তবে ঝাড়গ্রাম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বীরবাহা সোরেন বলেন, প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করবে। আমরা আমাদের কাজ করব।