সরকারি কর্মীদের ডিএ-র অধিকার নিয়ে প্রশ্ন, ফের শুনানি কবে
রাজ্যে সারা বছরই আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছে সরকারি কর্মীদের ডিএ-র বিষয়টি। সরকারি কর্মীদের দাবি, বকেয়া রয়েছে ডিএ। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কোনও ডিএ-ই বকেয়া নেই। বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে হাইকোর্টে।
রাজ্যে সারা বছরই আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছে সরকারি কর্মীদের ডিএ-র বিষয়টি। সরকারি কর্মীদের দাবি, বকেয়া রয়েছে ডিএ। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কোনও ডিএ-ই বকেয়া নেই। বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে হাইকোর্টেও। সরকারি কর্মীদের ডিএ আন্দোলন কোন পর্যায়ে রয়েছে, দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
ডিএ নিয়ে রেওয়াজ
সাধারণত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ বাড়লে, রাজ্য সরকারি কর্মীদেরও ডিএ বাড়ত। গত বাম সরকারের আমলে সেটাই ছিল রেওয়াজ। যদিও ১০ থেকে ১২ শতাংশের একটা তফাত থেকেই যেত। তবুও মিলত ডিএ। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল সরকার আসার পর থেকেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে কেন্দ্রীয় কর্মীদের সঙ্গে রাজ্যের কর্মীদের ডিএ-র ফারাক। এখন যা প্রায় ৫০ শতাংশের মতো।
হাইকোর্টে মামলা
২০১৬ সালে তৃণমূল দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। ডিএ নিয়ে আন্দোলনে তেজ বাড়ান সরকারি কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও হয়। এর আগে অবশ্য স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুলনাল মামলা খারিজ করে দেয়। এর পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সরকারিকর্মীরা। মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সরকারের কাছে জানতে চায় রাজ্য সরকারিকর্মীদের কত শতাংশ ডিএ বাকি রয়েছে। মধ্য জুলাই-এ রাজ্য সরকারকে হাইকোর্ট বলে, তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে।
ডিএ-র দাবি বৈধ নয়, হাইকোর্টে বলল সরকার
'রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা চাওয়ার কোনও বৈধ অধিকার নেই।' কলকাতা হাইকোর্টে ডিএ মামলায় হলফনামা জমা দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে রাজ্য সরকার। আদালতে রাজ্যের হয়ে হলফনামা জমা দেন অর্থ দফতরের উপসচিব উজ্জ্বল গোস্বামী। হাইকোর্টে দেওয়া হলফনামায় রাজ্য সরকার জানিয়েছে, সরকারের মাথার ওপর এই মুহূর্তে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা দেনা রয়েছে। তার মধ্যেও সরকার ঠিক সময়ে কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে। রাজস্ব বাবদ সরকার যা আয় করে, তার দেড় গুণ ব্যয় হয়ে যায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিতে। এই পরিস্থিতিতে ডিএ-র দাবি করার অধিকারই কর্মীদের নেই বলেই মনে করে রাজ্য সরকার। যদিও বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
হাইকোর্টে জোর সওয়াল
প্রধান বিচারপতির কথায়, কর্মীদের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। কেননা বাজারদরের সঙ্গে সমতা বজায় রেখে সরকারি কর্মীদের বেতনে সমতা আনতে মহার্ঘভাতা দেওয়া হয়। বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই এই মহার্ঘভাতা দেওয়া হয়। সরকারে তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, পে কমিশন মহার্ঘভাতা দেওয়া নিয়ে প্রস্তাব পাঠাতেই পারে। সেই প্রস্তাব মেনে কর্মীদের মহার্ঘভাতা দিতে সরকার বাধ্য নয়। সরকারি কর্মীদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, সরকারি কর্মীরা বহুদিন ধরে মহার্ঘভাতা পেয়ে আসছেন। এটা তাঁদের অধিকার।
নতুন বছরে ১৫ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এরই মধ্যে অবশ্য তৃণমূলপন্থী রাজ্য সরকারিকর্মীদের এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, নতুন বছরের শুরুতে ১৫ শতাংশ করে ডিএ দেওয়া হবে রাজ্যের কর্মীদের। তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মীদের সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, আপনারা ডিএ চান না, মাইনে। তাঁর সরকার ইচ্ছে করে ডিএ দিচ্ছে না, এই অভিযোগের কড়া সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বেতন কমিশনের শুনানি চলার কথাও জানান তিনি। ১৫% শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্য়কর করতে অতিরিক্ত ৪৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মাইনে দিতে বর্তমানে খরচ ২৭৯০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হবে ৩২৪০০ কোটি টাকা। বাম সরকারের ঋণের জন্যই তাঁর সরকারে ঋণের বোঝা বাড়ছে বলে নজরুল মঞ্চের সভায় অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
কোনও ডিএ বাকি নেই, বিজ্ঞপ্তিতে জানায় রাজ্য
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি হাইকোর্টে ডিএ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার জানায়, সরকারি কর্মীদের কোনও ডিএ বাকি নেই। রাজ্যের অ্যাভভোকেট জেনারেলের এমন কথায় তাজ্জব বনে যান খোদ কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিও। তিনি বলেন, 'শুধু সরকারি কর্মীরাই নন, হাইকোর্টের কর্মীরাও তো ডিএ সমস্যায় ভুগছেন!' হাইকোর্টের নির্দেশ মতো, রাজ্য সরকারের তরফে ১৫ শতাংশ ডিএ-র বিজ্ঞপ্তি পেশ করে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, 'সরকারি কর্মীদের কোনও মহার্ঘভাতা অর্থাৎ ডিএ বাকি নেই।' রাজ্য সরকারের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে কনফেডারেশন অফ স্টেট গর্ভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ।
ফের শুনানি ৯ জানুয়ারি
এবছরের শেষ শুনানি হয়, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত সাফ জানিয়ে দেন, এই মামলায় সবার আগে জানা দরকার ডিএ পাওয়া আইন অধিকার রয়েছে কি না। তা বিবেচনার পরই এই মামলার রায় দান করা যুক্তিযুক্ত বলে তিনি মনে করেন। এরপরই তিনি জানিয়ে দেন ডি এ মামলার শুনানি শুরু হবে আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে।