একা বিজেপিতে রক্ষা নেই মুকুল দোসর, আদি তৃণমূলীরাই মাথাব্যথা মমতার
তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আদিরা কোনও দায়িত্বে নেই। আদি তৃণমূলীরা মনে করছেন, তাঁদেরকে ব্যবহার করে নেওয়া হয়েছে দলের অসময়ে, সুসময় আসতে দল তাঁদের কথা ভুলে গিয়েছে।
দলে এখন অশনি সংকেত বয়ে আনছেন তৃণমূলীরাই। মুকুল রায়ের প্রস্থানে আদি তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন দলে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যা বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আদি-নব্যের লড়াই বন্ধ করে সকলকে সমান মর্যাদা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহল মনে করছে দলের বিভাজন রুখতে মমতা অনেক দেরি করে ফেলেছেন।
আসলে আদি তৃণমূলের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরেই বিক্ষুব্ধ। দলে একপ্রকার কোণঠাসা তাঁরা। দলের প্রথম দিন থেকে প্রাণপাত করেও নতুনদের আগমনে তারা একঘরে হয়ে রয়েছেন। দলে থেকেও তাদের কোনও ভূমিকায় দেখা যায় না। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আদিরা কোনও দায়িত্বে নেই। আদি তৃণমূলীরা মনে করছেন, তাঁদেরকে ব্যবহার করে নেওয়া হয়েছে দলের অসময়ে, সুসময় আসতে দল তাঁদের কথা ভুলে গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবর্তনের বীজ বপন করেছিলেন ওঁদের হাত ধরেই। কিন্তু ওঁরাই এখন দলে ব্রাত্য। ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসার পরে আদি তৃণমূলীরা কী করবেন, তা নিয়েই ধন্দ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক বিক্ষুব্ধ নেতা-নেত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
রাজ্যের সর্বত্রই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীরা তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, শুধু মুকুল রায় নন, তৃণমূলের অনেক নেতাই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সময় হলেই তাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন। তা নেহাতই কথার কথা নয়। এখন তাঁরাই মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
মুকুল রায় যদি নতুন দল গড়েন, তাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন। আবার মুকুল রায় বিজেপিতে গেলে, তাঁদেরও গন্তব্য হতে পারে গেরুয়া শিবির। রাজনৈতিক মহল মনে করছে বিজেপিতে তাঁরা এতদিন পা বাড়াননি, তার কারণ বিজেপি রাজ্যে কতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। এখনও যে বিজেপি তৃণমূলকে লড়াই দেওয়ার জায়গায় এসেছে তা নয়। কিন্তু মুকুল রায়ের মতো নেতারা বেরিয়ে এসে যদি অন্য দল গড়েন বা বিজেপিতে যোগ দেন, তাহলে তাঁদের জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরি হবে নিশ্চয়ই।
তবে দেরিতে হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পেরেছেন আদি তৃণমূলীদের ব্যথা। দলে ব্রাত্য হয়েও তাঁরা এতদিন দলের সঙ্গেই রয়েছেন। আদি তৃণমূলীদের অভিযোগ ছিল, তাঁদের দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্যই বাংলায় সরকার গড়তে পেরেছে তৃণমূল। কিন্তু সরকার গঠন করার পর তাঁরা স্বীকৃতি পাননি। এখন মুকুলের ভয়ে ভীত হয়ে আদি তৃণমূলীদের কী স্বীকৃতি দেন মমতা, তার উপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। এ ক্ষেত্রে আবার নব্য তৃণমূলীদের গোঁসা যাতে না হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এদিকে বসে নেই মুকুল রায়ও। তিনিও প্রতিনিয়ত তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সংগঠন দেখেছেন তিনি। দলের প্রত্যেক স্তরকে তিনিই সাজিয়েছেন। হাতের তালুর মতো চেনেন তৃণমূলীদের। এমনকী রাজনৈতিক মহলে এমন কথাও প্রচার ছিল, প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি ব্লকে মুকুল রায়ের অনুগামী রয়েছে। তারপর ভিন্ন দল থেকে ভাঙিয়ে আনা নব্য তৃণমূলীরাও অনেকে দলে কলকে না পেয়ে মুকুলের শিবিরে থাকবেন এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
তাই মুকুলের প্রস্থানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তা যে আরও বাড়ল, তা নিশ্চিত। একা বিজেপিই ভাঙন ধরিয়ে দিচ্ছিল তৃণমূলে। খোদ মমতার বিধানসভা কেন্দ্র ভবানিপুরে অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এখন আবার বিজেপির দোসর হয়ে উঠলেন মুকুল রায়। দলনেত্রীর কপালে তাই চিন্তার ভাঁজ প্রকট।