বাংলা ভারতের দ্বিতীয় মাতৃভাষা, বাঙালির গরবের ভাষা সমাদৃত বিশ্বের দরবারেও
মাতৃভাষার মর্যাদা সবার আগে। আর সেই নিরিখে বাংলা ভাষার স্থান দ্বিতীয়। ভারতে সবথেকে বেশি মানুষ কথা বলেন হিন্দিতে, তারপরই স্থান বাংলার।
মাতৃভাষার মর্যাদা সবার আগে। আর সেই নিরিখে বাংলা ভাষার স্থান দ্বিতীয়। ভারতে সবথেকে বেশি মানুষ কথা বলেন হিন্দিতে, তারপরই স্থান বাংলার। বাঙালি হিসেবে সকলের কাছেই এই পরিসংখ্যান গর্বের। ২০১১ সালের জনগণনার উপর ভিত্তি করে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে প্রথম দু-স্থানে রয়েছে হিন্দি ও বাংলা। পরিবর্তন হয়েছে তৃতীয় স্থানে। তেলেগুর জায়গায় উঠে এসেছে মারাঠি ভাষা।
২০০১ সালের তুলনায় ২০১১ সালে বেড়েছে হিন্দিভাষী লোকের সংখ্যা। বেড়েছে বাংলাভাষীর সংখ্যাও। তুলনায় হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই। ৪১.০৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩.৬৩ শতাংশ। আর বাংলাভাষীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮.১১ শতাংশ থেকে ৮.৩ শতাংশ। এই তালিকাতেই তেলেগুকে সরিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে মারাঠি ভাষা। বাংলার পরেই স্থান মারাঠির।
দেশের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ২২টি ভাষার মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে সবার শেষ স্থান পেয়েছে সংস্কৃত। এই ভাষায় কথা বলেন ২৪ হাজার ৮২১ জন নাগরিক। এমনকী বোড়ো, মণিপুরী, কলকানি, ডোগরি ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা সংস্কৃতের থেকেও বেশি।
ইংরেজি আমাদের দেশের সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত ভাষা নয়। তবু ভারতের ২ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ এই ভাষাকে তাঁদের মাতৃভাষা বলে জানিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ১ লক্ষ ৬ হাজার জন মহারাষ্ট্রে বসবাস করেন। এরপর রয়েছে তামিলনাড়ু ও কর্ণাটক। মহারাষ্ট্রের পর এই দুই রাজ্যেউই সবথেকে বেশি মানুষ ইংরেজিতে কথা বলেন। ইংরেজি ছাড়া সংবিধানের তফসিলের আওতাভুক্ত নয় এমন ভাষা হল রাজস্থানে ভিল্লি বা ভিলোডি। প্রায় ১ কোটি ৪ লক্ষ লোক এই ভাষার কথা বলেন। এরপরই রয়েছে গোন্ডের স্থান।
মারাঠিভাষী মানুষের সংখ্যা নয়া সমীক্ষায় বেড়ে হয়েছে ৬.৯৯ শতাংশ থেকে ৭.০৯ শথাংশ। অন্যদিকে কমেছে তেলেগু ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা। ৭.১৯ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৬.৯৩ শতাংশ। নেমেছে উর্দুভাষার স্থানও। উর্দু ষষ্ঠ থেকে নেমে গিয়েছে সপ্তম স্থানে। গুজরাতি উঠে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। উল্লেখ্য, দেশের ৯৬.৭১ শতাংশ মানুষ তফসিলের আওতাভুক্ত ২২ ভাষায় কথা বলেন। মাত্র ৩.২৯ শতাংশ মানুষ কথা বলেন অন্য ভাষায়।
মাতৃভাষা হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাঙালিদের কাছে গর্বের। প্রসঙ্গত, 'মোদের গরব মোদের আশা' আমাদের বাংলা ভাষা বিশ্বের দরবারে সেরার আসন অধিকার করে রয়েছে। বাংলা ভাষা শুধু বাংলার মাতৃভাষা নয়, এই ভাষা দেশের দ্বিতীয় তথা বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। বিশ্বের মোট ৩০ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। এই বাংলা ভাষা যেমন বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় সরকারি ভাষা, তেমনই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা রাজ্যের প্রধান সরকারি ভাষা।
ভারতের সাংবাধানিক ২২টি ভাষার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে এই বাংলাভাষা। এমনকী সাগর পেরিয়ে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রধান ভাষার স্থান দখল করে রয়েছে বাংলা। এছাড়া ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা হল বাংলা। পাকিস্তানের করাচি শহরেও বাংলা ভাষা দ্বিতীয় সরকারি ভাষা বলে স্বীকৃত।
শুধু তাই নয়, সিয়েরা, লিওনের সরকারি ভাষাও বাংলা। লন্ডনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা হল বাংলা। বিশ্বের এই একটি মাত্র ভাষাতেই তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচিত হয়েছে। ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত বাংলা ভাষায় রচিত। ভারতের জাতীয় স্তোত্রও এই ভাষায় লেখা হয়েছে।