'রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন' বিতর্কের মাঝেই ভ্যানিস ৫ প্রার্থী! ই-মেল মনোনয়নে নয়া খোলসার জল্পনা
ই-মনোনয়নে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু, একাধিক ত্রুটির কারণে বুধবার সেই মামলা গৃহীত হয়নি। বৃহস্পতিবার নতুন করে আবেদন করবে কমিশন।
ই-মনোনয়নে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু, একাধিক ত্রুটির কারণে বুধবার সেই মামলা গৃহীত হয়নি। বৃহস্পতিবার নতুন করে আবেদন করবে কমিশন। কিন্তু, এই পরিস্থিতির মাঝেই ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে একদল দুষ্কৃতী। অভিযোগ যাদের দাপটে ইতিমধ্যে ভ্যানিস হয়ে গিয়েছে ৫ সিপিএম প্রার্থী। এরা সকলেই ই-মেলে মনোনয়ন জমা করেছিলেন। এক বিশ্বস্ত সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, এই ৫ প্রার্থীকে নিয়ে আজ হাইকোর্টে সাংবাদিক সম্মেলন হবে। আর সেখানেই ই-মেলে মনোনয়ন জমা নিয়ে নাকি নয়া খোলসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পাঁচ প্রার্থীর ভ্যানিস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বজবজ ২ নম্বর ব্লকের নস্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এই এলাকার বেশকিছু সিপিএম প্রার্থী ২৩ এপ্রিল বিকেল ৩টার মধ্যে ই-মেলে মনোনয়ন জমা করেছিলেন। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, ই-মেলে মনোনয়নকে কলকাতা হাইকোর্ট বৈধতা দেওয়ার পরই বুধবার ভোররাত থেকে নস্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। সিপিএম সমর্থক ও কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে চলে ভাঙচুর ও হুমকি। বুধবার দিনভর তাণ্ডব করে বেড়ায় দুষ্কৃতীদের বাইকবাহিনী। অভিযোগ, এই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কিছু তৃণমূলনেতা, কর্মী। তাঁরাই ওই দুষ্কৃতীবাহিনীকে পথ দেখিয়ে দেখিয়ে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন বাড়িগুলি দেখিয়ে দিচ্ছিলেন।
তৃণমূলের বাইরে অন্যকাউকে ভোট না দেওয়া থেকে শুরু করে প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের হুমকিও নাকি দেয় সেই দুষ্কৃতী বাহিনী। এমনটাও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক সিপিএম নেতা। বিকেলে সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করতেই নাকি বুধবার বিকেল ৫.৩০টায় নস্করপুর এলাকায় হাজির হয়ে যায় দুষ্কৃতীদের বাইক বাহিনী। ৫ সিপিএম প্রার্থী যারা ই-মেলে মনোনয়ন দাখিল করেছিল তাদেরকে বাইকে করে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
এমনকী আরও অভিযোগ, অপহৃত সিপিএম প্রার্থীদের বাড়িতেও অল্পবিস্তর ভাঙচুর করার সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পরিবারগুলিকে মুখ না খোলারও হুমকি দিয়ে যায় তারা। অপহৃত এই পাঁচ সিপিএম প্রার্থী হলেন- সুরজিত পণ্ডিত, বাবার নাম শঙ্কর পণ্ডিত, বাড়ি চাউলখোলা গ্রামে, সুব্রত পাণ্ডা, বাবার নাম প্রয়াত দিলীপ পাণ্ডা, বাড়ি চাউলখোলা গ্রাম, সুমিত দাস, বাবার নাম দুর্লভ দাস, বাড়ি নস্করপুর, মানস কর্মকার, বাবার নাম প্রয়াত চিত্তরঞ্জন কর্মকার, বাড়ি মোহনপুর এবং আখতার শেখ, বাড়ি বাড়েয়া গ্রামে।
অভিযোগ, এই ৫ প্রার্থীকে অপহরণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আধারকার্ড, ভোটারকার্ডও নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীদের দল। স্থানীয় নোদাখালি থানায় অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করা হলেও লাভ হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধেও নিস্ক্রিয় থাকার অভিযোগ এনেছেন নস্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম নেতারা। নোদাখালি থানায় যাতে বিরোধীরা যেতে না পারে তার জন্য নাকি থানার সামনে টহল দিচ্ছে দুষ্কৃতীদের দল।
স্থানীয় সিপিএম নেতাদের দাবি, অপহরণের মধ্যেও এক প্রার্থী নস্করপুর এলাকার অঞ্চল প্রধান তড়িৎকুমার মণ্ডলকে ফোন করেন। তিনি নাকি জানিয়েছেন দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাটা এলাকায় আটকে রেখেছে। বৃহস্পতিবার তাঁদের কলকাতা হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। আর সেখানেই নাকি হবে এক সাংবাদিক সম্মেলন। যেখানে এই ৫ প্রার্থীকে দিয়ে স্বীকার করানো হবে যে ই-মেলে মনোনয়ন জমা তাঁরা নিজেরা করেননি। সিপিএম-র রাজ্য ও জেলা দফতর থেকে জোর করে করানো হয়েছে। তাই তারা তাঁদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করছেন। এমনটাই দাবি করেছেন নস্করপুর এলাকার এক সিপিএম নেতা।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বজবজ ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। কোনও নেতাকেই ফোনে পাওয়া যায়নি। এমনকী, পুলিশের বিরুদ্ধে যে নিস্ক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করা হয়। ফোন বেজে গেলেও কেউ সেই ফোন তোলেননি। হাইকোর্ট এমনিতেই পঞ্চায়েত মামলার শুনানি নিয়ে এদিন উত্তপ্ত থাকার কথা। তারমধ্যে সত্যি সত্যি নিখোঁজ ৫ সিপিএম প্রার্থীকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন হলে পঞ্চায়েতের নাটকের মাত্রা বাড়বে বই কমবে না।