সিপিএম যুবনেতাকে গুলি মাও-উপদ্রুত গ্রামে, তৃণমূল বিধায়কের রাত কাটানোর কর্মসূচি বানচাল
পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে সিপিএমের যুবকর্মীকে গুলি চালানোর পর এলাকায় রাত কাটানোর কর্মসূচি বাতিল করলেন স্থানীয় বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন।
পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে সিপিএমের যুবকর্মীকে গুলি চালানোর পর এলাকায় রাত কাটানোর কর্মসূচি বাতিল করলেন স্থানীয় বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন। শুক্রবার দলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তাঁর বান্দোয়ানের ভোমরাগড় গ্রামে রাত কাটানোর কথা ছিল। কিন্তু মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় সেই কর্মসূচি থেকে পিছপা হলেন তৃণমূল বিধায়ক।
বিধায়ক পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে কুচিয়া গ্রাম থেকে 'দিদির সুরক্ষা কবচ' কর্মসূচি শুরু করছিলেন। দুয়ারসিনিতে পুজো দিয়ে কর্মসূচি নেওয়ার পর সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। মা-কপালিতে বৈঠক করে তিনি বেরিয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরেই সেখানে সিপিএমের এক ছাত্রনেতা গুলিবিদ্ধ হন। আর তারপরেই মাওবাদী উপদ্রুত ভোমরাগড়া গ্রামে দলীয় কর্মীর বাড়িতে রাত কাটানোর কর্মসূচি বাতিল করেন বিধায়ক। ভোমরাগড় থেকে বান্দোয়ান ব্লক সদরে এসে যথারীতি বাড়িতে রাত্রিবাস করেন।
এদিকে দুষ্কৃতীদের হাতে গুলিবিদ্ধ পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের বাম যুব নেতা কৃষ্ণপদ টুডুকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। শুক্রবার রাতে পুরুলিয়া থেকে তাঁকে সরাসরি বাঁকুড়ায় নিয়ে আসা হয় তাঁকে। পুরুলিয়ার মাকপালি গ্রামের বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের কৃষ্ণপদ টুডু বান্দোয়ান এলাকায় ডিওয়াইএফআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
এদিন স্থানীয় কুচিয়া গ্রামে দলীয় কার্যালয় থেকে মিটিং করে মাকপালি গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি ছোড়ে। তাঁর ডান কাঁধে ও হাতে গুলি লাগে। পরে পুলিশ ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করে। একইসঙ্গে ২টি বন্দুক উদ্ধার হয়েছে বলে জানা যায়।
খবর পেয়ে এদিন আহত ডিওয়াইএফআই নেতাকে দেখতে যান বাঁকুড়ার সিপিআএম নেতা অভয় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সংকটজনক অবস্থায় কৃষ্ণপদ টুডুকে ভর্তি করা হয়েছে বাঁকুড়ার হাসপতালে। তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি স্থিতিশীল রয়েছে। পুরো ঘটনাকে ভয়াবহ ও দুঃখজনক বলে বর্ণনা করেন তিনি।
এদিকে এদিনই সাংসদ অর্জুন সিং পারা বিধানসভার রঘুনাথপুর দু'নম্বর ব্লকের জোড়াডি গ্রামে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। বাঘমুন্ডির মাঠা গ্রাম পঞ্চায়েতে এই কর্মসূচিতে যাওয়া দলীয় বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো থেকে কুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে যাওয়া বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেনকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন এদিন যে কুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জনসংযোগ কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা একদা মাওবাদী উপদ্রুত বলে পরিচিত ছিল। বর্তমানে ওই এলাকা সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। এই জেলায় যে ৫০টি অঞ্চলে এই জনসংযোগ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সবকটিতেই শাসকদলের সাংগঠনিক অবস্থা খারাপ। তার হাল ফেরাতেই এই অঞ্চলগুলিকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
এদিন বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেনকেও পানীয় জল, আবাস প্লাসে বাড়ি না পাওয়া, কালভার্ট না হওয়ার কথা শুনতে হয়। দুয়ারসিনি মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর তিনি রাজগ্রাম হাইস্কুল পরিদর্শন করেন। মধ্যাহ্নভোজন করেন মৃগীচামি গ্রামে। এদিন রাতে মাও-উপদ্রুত ভোমরাগড়া গ্রামে দলের বুথ সভাপতি শম্ভু মাহাতোর বাড়িতে তার রাত কাটানোর কথা ছিল।
এই গ্রামেই ২০০৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলী সদস্য তথা প্রাক্তন সভাধিপতি রবীন্দ্রনাথ কর ও তার স্ত্রী আনন্দময়ী করকে গুলি করে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। এদিন মা-কপালি গ্রামে গুলি-কাণ্ডের ঘটনার পর একদা এই মাওবাদী উপদ্রুত গ্রামে রাত কাটানোর ঝুঁকি নিতে চাননি বিধায়ক।
বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক মাঠা গ্রাম পঞ্চায়েতের রেরেঙটাড় গ্রামের মন্দিরে যান। তারপর ধনুডি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাইস্কুল ঘুরে রাবড় গ্রামে আসেন। সেখানে পানীয় জলের সমস্যার কথা শুনতে হয়। পরে তিনি দুয়ারসিনিতে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে মাঠা গ্রাম পঞ্চায়েতে পরিদর্শন করেন। সেখানকার কর্মীদেরকে সঙ্গে কথা বলে খুদুডি গ্রামে রাত কাটান।